শুখা: সংস্কার হয়নি। শুকিয়েছে জলাভূমি। নিজস্ব চিত্র
সংস্কার হয়নি বাঁধ। সেচের জলের আকালে বেলপাহাড়ির বেঙবুটা গ্রামে মার খাচ্ছে চাষ।
জঙ্গলমহলে অশান্তি পর্বে এই বেঙবুটা গ্রামে অবাধ যাতায়াত ছিল মাওবাদীদের। মাওবাদী-সমস্যা এখন আর নেই বলে দাবি পুলিশ-প্রশাসনের। যদিও পালাবদলের পরেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুয়োরানি হয়েই থেকে গিয়েছে বেঙবুটা।
বেলপাহাড়ি ব্লক সদর থেকে মাত্র বারো কিলোমিটার দূরের এই পাহাড়ি গ্রামটির সিংহভাগ বাসিন্দার জীবিকা চাষাবাদ ও খেতমজুরি। গ্রামে ৩৩ টি পরিবারের বেশির ভাগ বাসিন্দা আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের। অথচ এমন একটি গ্রামেই জলের অভাবে বন্ধ চাষাবাদ। স্থানীয় একটি পাহাড় থেকে নেমে আসা সাতখুলিয়া ঝর্নার জল আগে একটি জলাশয়ে সঞ্চিত থাকত। সেখান থেকে পাম্পে করে সব্জি খেতে সেচ দিতেন চাষিরা। ওই জলাশয়ের জল তুলে এলাকার প্রায় ২০ বিঘে জমিতে সেচ দেওয়া হতো।
বছর পনেরো আগে ওই জলাশয়ের এক দিকের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ঝর্নার জল আর জলাশয়ে জমে না। গরমে সেচের অভাবে সমস্যায় পড়েন চাষিরা। অভিযোগ, বন দফতরকে বহুবার জানিয়েও গত দেড় দশকে বাঁধটির সংস্কার করা হয়নি। প্রতি বছর বর্ষায় মাটি ধুয়ে যাওয়ায় জলাশয়টি এখন কার্যত ভরাট হয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি জলাশয়ের বাঁধ সংস্কারের জন্য ঝাড়গ্রাম জেলা কৃষি দফতরের ভূমি সংরক্ষণ বিভাগে আবেদন জানান গ্রামবাসী। বাসিন্দাদের আবেদনের ভিত্তিতে জল বিভাজিকা কর্মসূচির আওতায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার ও জলাশয় গভীর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনায় ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। গ্রামবাসীরা বন দফতরের ভুলাভেদা রেঞ্জের আধিকারিকের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদনও করেন। স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তত্ত্বাবধানে কাজটি শুরুর জন্য গত ২৩ মার্চ ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেন ঝাড়গ্রামের সহ কৃষি অধিকর্তা (ভূমি সংরক্ষণ)। কাজ শুরুও হয়। কিন্তু বনভূমিতে বাঁধ সংস্কারের ব্যাপারে আপত্তি তোলে বন দফতর। বন দফতরের বাধায় কাজটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
সহ-কৃষি অধিকর্তা (ভূমি সংরক্ষণ) দফতরের অবশ্য দাবি, প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনায় (পার ড্রপ, মোর ক্রপ) চাষিদের কৃষি সেচের স্বার্থে বন দফতর ও যৌথ বন সুরক্ষা কমিটির সহমতের ভিত্তিতে বনভূমিতেও জল বিভাজিকা কর্মসূচি রূপায়িত করা যায়। কিন্তু বন দফতর অনড়, বনভূমিতে তারা অন্য দফতরকে কাজ করতে দেবে না। এ দিকে বর্ষার আগে বাঁধ সংস্কার ও জলাশয় গভীর করা গেলে ঝর্নার জল সঞ্চিত করে রাখা যেত। কিন্ত সেটা আদৌ হবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বেঙবুটাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু মাহাতো, জগমোহন মাণ্ডি, রাইসেন মুর্মু, বনমালী মাহাতোদের বক্তব্য, বন দফতর নিজে উদ্যোগী হয়ে বাঁধটি সংস্কার করছে না। অথচ কৃষি দফতর কাজ করতে চাইলেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও চাষিদের স্বার্থে বাঁধটি সংস্কার করা হচ্ছে না। পরিকল্পিত ভাবে বন দফতর সংস্কার-কাজে বাগড়া দিচ্ছে।”
এ বিষয়ে ঝাড়গ্রামের সহ-কৃষি অধিকর্তা (ভূমি সংরক্ষণ) নরেন্দ্রনাথ মুর্মু বলেন, “টাকা বরাদ্দ হয়ে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বন দফতর আপত্তি তোলায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা বন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।” বন দফতরের ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হোলেইচ্চির বক্তব্য, “আগামী দিনে আমরাই ওই বাঁধ সংস্কার করব।” গত দেড় দশকে কেন বাঁধটি সংস্কার হয়নি, সে বিষয়ে অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy