Advertisement
১৮ মে ২০২৪

হাতি রুখতে প্রযুক্তি ভরসা বন দফতরের

হাতির হামলায় মৃত্যু, বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও হাতির হানা ঠেকানো যায়নি। সোমবার রাতে মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপালে হাতির তাণ্ডবে বাড়ির ক্ষতি হয়। মঙ্গলবারও গোয়ালতোড়ে হাতির হানায় জখম হন এক বৃদ্ধ। হাতি রুখতে এ বার তাই হোয়াটস্‌ অ্যাপ ভরসা বন দফতরের।

হাতির দেখা মিলছে হামেশাই। ফাইল চিত্র।

হাতির দেখা মিলছে হামেশাই। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৩
Share: Save:

হাতির হামলায় মৃত্যু, বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও হাতির হানা ঠেকানো যায়নি। সোমবার রাতে মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপালে হাতির তাণ্ডবে বাড়ির ক্ষতি হয়। মঙ্গলবারও গোয়ালতোড়ে হাতির হানায় জখম হন এক বৃদ্ধ। হাতি রুখতে এ বার তাই হোয়াটস্‌ অ্যাপ ভরসা বন দফতরের।

কী ভাবে? হোয়াটস্‌ অ্যাপে ‘গ্রুপ’ করা হবে। গ্রুপে ডিএফও, রেঞ্জার থেকে শুরু করে থাকবেন বনকর্মীরা। পঞ্চায়েত প্রধান, বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য, গ্রামের ক্লাবের সদস্য থেকে গ্রামবাসীদেরও যুক্ত করা হবে। এই ‘এলিফ্যান্ট মুভমেন্ট মনিটরিং সিস্টেম’-এ কখন, কোন এলাকায় ক’টি হাতি রয়েছে, কোন পথে তারা যাতায়াত করছে, তা প্রতি মুহূর্তে জানানো হবে গ্রুপে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শীঘ্রই এই পদ্ধতি চালু করা হবে বলে বন কর্তারা জানিয়েছেন। মেদিনীপুর বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা, রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও অর্ণব সেনগুপ্ত বলেন, “হাতির গতিবিধি জানা থাকলে হঠাৎ করে বিপদে পড়তে হবে না। তাই এই পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে।”

ইতিমধ্যেই কোন গ্রামে কোন ক্লাবের সদস্য, গ্রামের উদ্যোগী যুবক, শিক্ষক বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যকে রাখা যায় তার খোঁজও শুরু হয়েছে। গ্রুপে সমাজ সচেতন সক্রিয় ব্যক্তিদের রাখার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। এর জন্য পারিশ্রমিক মিলবে না। তবে যিনি কাজটি করবেন, তাঁর এলাকায় হাতির হামলায় মৃত্যু বা দুর্ঘটনা না ঘটলে বছর শেষে মিলবে পুরস্কার ও শংসাপত্র। ক্লাব হলে বিনিময়ে ফুটবল, ক্যারাম বা জার্সিও দেবে বন দফতর।

হাতির হানায় রাশ টানতে না পেরে উদ্বিগ্ন বনকর্তারা। সোমবার রাতে আচমকাই জঙ্গল ছেড়ে মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপালের লোকালয়ে ঢুকে পড়ে পাঁচটি রেসিডেন্ট হাতি। দলটি চাঁদড়ার জঙ্গলে ছিল। সেখান থেকে গুড়গুড়িপালে এসে চারটি বাড়ি ভাঙচুর করে হাতির দল। বন দফতর মনে করছে, মহুলের গন্ধ পেয়েই হাতি জঙ্গল ছেড়ে এই এলাকায় ঢুকে পড়ে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের এই এলাকায় একাদিক দেশি মদের ভাটি রয়েছে। মদ তৈরিতে মহুল ব্যবহৃত হয়।

মঙ্গলবার সকালে গোয়ালতোড় থানার পিয়াশালা পঞ্চায়েতের ওখলা গ্রামে জঙ্গলের ধারে হাঁটতে বেরিয়ে হাতির হানায় জখম হলেন যুগল মাহার নামে এক বৃদ্ধ। বাড়িতে ঢোকার আগেই একটি হাতির সামনে পড়ে যান তিনি। হাতিটি শুঁড়ে করে তাঁকে আছড়ে ফেলে। পড়শিরা তাঁকে প্রথমে চন্দ্রকোনা রোডের দ্বাড়িগেড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। বন দফতরের ডিএফও (মেদিনীপুর) রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “ওখলা জঙ্গলে একটি রেসিডেন্ট হাতি রয়েছে। এ দিন সকালে ওই হাতিটি জঙ্গল থেকে পানীয় জলের সন্ধানে লোকালয়ে বেরিয়েছিল। সামনেই যুগলবাবু পড়ে যান। যুগল বাবুর হাতে ও পায়ে আঘাত লেগেছে।”

জঙ্গল লাগোয়া একাধিক গ্রামে গজিয়ে উঠেছে চোলাই মদের কারবার। মহুল ও চোলাই মদের টানে হাতি বাড়ি ভাঙচুর করে। জঙ্গলে শৌচকর্ম করতে গিয়েও অনেক সময় হাতির সামনে পড়ে যান অনেকে। ফলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। জঙ্গল এলাকায় যাতে দ্রুত শৌচাগার তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে প্রশাসনকে জানাবে বন দফতর। বন দফতর জানিয়েছে, এই দু’টি ক্ষেত্রে লাগাম দেওয়া গেলে মৃত্যু ও বাড়ি ভাঙচুর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। তারই সঙ্গে যে পথ দিয়ে মানুষের যাতায়াত বেশি সেই পথের দু’দিকে থাকা ঝোপজঙ্গলও সাফ করবে বন দফতর।

ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা ও অর্ণব সেনগুপ্তর কথায়, “জঙ্গলে হাতি থাকলে আগেও প্রচার চালিয়েছি। এখনও প্রচার চলছে। হুমগড় রেঞ্জ-সহ যে সব বনাঞ্চলে হাতি ঘোরাফেরা করছে, সংলগ্ন সব গ্রামেই মানুষকে সতর্ক করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE