Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

পুরসভা কি ফের ত্রিশঙ্কু, জল্পনা

রেলশহর খড়্গপুরের পুর-নির্বাচনে ‘ম্যাজিক ফিগার’-এ পৌঁছতে দরকার ১৮টি আসন। কংগ্রেস, তৃণমূল না বিজেপি, কে তা পাবে, তা নিয়েই এখন জল্পনা তুঙ্গে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, খড়্গপুরে দল হিসেবে যেই প্রথম হোক না কেন, ‘ম্যাজিক ফিগার’ ছুঁতে বেগ পেতে হবে। যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলোর জেলা নেতাদের একাংশও ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, একা ১৮টি আসন পাওয়া বেশ কঠিন।

ভবানীপুরের একটি বুথে ভোটের লাইন। —নিজস্ব চিত্র।

ভবানীপুরের একটি বুথে ভোটের লাইন। —নিজস্ব চিত্র।

বরুণ দে
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৩
Share: Save:

রেলশহর খড়্গপুরের পুর-নির্বাচনে ‘ম্যাজিক ফিগার’-এ পৌঁছতে দরকার ১৮টি আসন। কংগ্রেস, তৃণমূল না বিজেপি, কে তা পাবে, তা নিয়েই এখন জল্পনা তুঙ্গে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, খড়্গপুরে দল হিসেবে যেই প্রথম হোক না কেন, ‘ম্যাজিক ফিগার’ ছুঁতে বেগ পেতে হবে। যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলোর জেলা নেতাদের একাংশও ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, একা ১৮টি আসন পাওয়া বেশ কঠিন। তাই সব মিলিয়ে অনুমান, এ বারও রেলশহরের পুরসভা ত্রিশঙ্কু হতে চলেছে।

স্থায়ী পুরবোর্ড গঠনই এ বার নির্বাচনী প্রচারে সব দলের প্রধান বক্তব্য ছিল। কারণ, ২০১০ সালের শেষ নির্বাচনে ফল ত্রিশঙ্কু হয়েছিল। সে বার ৩৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৫টি। কংগ্রেস ১২টি, সিপিএম ৩টি, সিপিআই ৩টি, বাম-সমর্থিত নির্দল ১টি এবং বিজেপি ১টি। নিরঙ্কুশ না হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ায় গোড়ায় পুরবোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূল। তবে ক্ষমতা তারা ধরে রাখতে পারেনি। কংগ্রেসের আনা অনাস্থায় হার হয় তাদের। ততদিনে দুই সিপিএম কাউন্সিলর দলবদল করে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

এ বার, বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তি ছাড়া মোটের উপর নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে রেলশহরে। দিনের শেষে ভোট পড়েছে ৭৩ শতাংশ। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন-পরবর্তী পর্যালোচনায় ঠিক কী উঠে আসছে? ইঙ্গিত সেই ত্রিশঙ্কু ফলাফলের দিকেই। দলের এক সূত্রের দাবি, তৃণমূল অন্তত দু’টি আসন হারাতে পারে। নতুন করে পেতে পারে দু’টি আসন। কংগ্রেস দু’টি আসন হারাতে পারে। নতুন করে পেতে পারে তিনটি আসন। বিজেপি আগের আসন ধরে রাখতে পারে। সঙ্গে অন্তত দু’টি আসন নতুন করে পেতে পারে। বামেরা অন্তত দু’টি আসন হারাতে পারে। দলের একাংশ অবশ্য এও মনে করছে, এ বার ভোট ভাগাভাগির সুবিধে পেতে পারে বামেরা। সেই ক্ষেত্রে নতুন করে একাধিক আসন দখলে আসতে পারে।

প্রকাশ্যে সকলেই ভাল ফলের কথা বলছে। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শহরের মানুষ আগে কখনও দেখেননি। আমরা নিশ্চিত, তৃণমূলই পুরবোর্ড গঠন করবে।’’ রেলশহরের বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডেরও বক্তব্য, “পুরবোর্ড কংগ্রেসই গঠন করবে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “পুরবোর্ডে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।” সিপিআইয়ের জেলা সহ- সম্পাদক বিপ্লব ভট্টের বক্তব্য, “আমাদের ফল ভালই হবে।’’

২০১০ সালের আগে টানা ১৫ বছর খড়্গপুরের পুরবোর্ড কংগ্রেসের দখলে ছিল। ২০১০ সালে পুরসভার মোট আসন বেড়ে হয় ৩৫টি। তার আগে ছিল ৩০টি আসন। ২০০৫ সালের নির্বাচনে ‘ম্যাজিক ফিগার’ পেরোতে না পারলেও ছুঁতে পেরেছিল কংগ্রেস। সেই বার ৩০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ১৫টি, তৃণমূল ৭টি, বিজেপি ২টি, সিপিএম ৪টি এবং সিপিআই ২টি। রেলশহর কংগ্রেসের গড় বলেই পরিচিত। পরে এখানে তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি পায়। গত লোকসভা ভোটে আবার বিজেপির সমর্থনও বেশ বাড়ে। গত লোকসভার নিরিখে ৩৫টি আসনের মধ্যে ১৯টিতেই এগিয়ে বিজেপি। সে বার খড়্গপুরে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫১ হাজার (২৭.৫২ শতাংশ)। আর তৃণমূল পেয়েছিল ৪০ হাজার এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ২১ হাজার ভোট। পুরভোটের চতুর্মুখী লড়াইয়ে এই ফল যে ধরে রাখা অসম্ভব, তা মানছেন জেলা বিজেপির প্রথম সারির নেতারাই।

২০১১ সালের বিধানসভার নিরিখে অবশ্য রেলশহরে গেরুয়া-শিবিরের প্রাপ্ত ভোট ৬.৭৯ শতাংশ (৯,৩০৩)। ওই ভোটে কংগ্রেস পায় ৭৫,৪২৫ ভোট (৫৫.০৬ শতাংশ), বামেরা পায় ৪৩,০৫৬ ভোট (৩১.৪৩ শতাংশ)। গত বিধানসভা ভোটে অবশ্য কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট হয়েছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, গত লোকসভার ফল ধরে রাখতে না পারলেও গত পুরভোটের চেয়ে এ বার ভাল ফল করবে বিজেপি। এ ক্ষেত্রে যে তারা শুধু কংগ্রেস কিংবা তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কেই থাবা বসাবে তা নয়, বামেদের ভোটব্যাঙ্কেও থাবা বসাবে। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কিংবা তৃণমূলের যদি ৪ শতাংশ ভোট বিজেপি কাটে, তাহলে বামেদেরও ২ শতাংশ ভোট বিজেপি কাটবে।

খড়্গপুরের পুরভোটে বড়সড় অশান্তির আশঙ্কা ছিল। তৃণমূল ভোট লুঠের ছক করেছে বলে শুক্রবার রাত পর্যন্ত অভিযোগ করে এসেছিল বিরোধীরা। পুলিশি মদতে সন্ত্রাসের ছক তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। শনিবার ভোট শুরু হতেই অবশ্য যাবতীয় অভিযোগের তীব্রতা উধাও হয়ে যায়। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোটের খুচরো কিছু অভিযোগ উঠলেও বড় কোনও অশান্তি হয়নি। ভোটের সকালে খানিকটা চিন্তিতই দেখাচ্ছিল তৃণমূলের প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান তুষার চৌধুরীকে। সকাল ন’টা নাগাদ পুরাতনবাজারের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে দলীয় কর্মীদের একের পর এক নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্মী বলছিলেন, “সিওর সিট! দাদা ফালতু এত টেনশন করছে!’’ টেনশন হচ্ছে? তুষারবাবু বলেন, “কীসের টেনশন! দলের একটা ক্যাম্প অফিসে এখনও টিফিনের প্যাকেট পৌঁছয়নি। ফোনে সে কথাই বলছিলাম!” কংগ্রেস-শিবিরও ছিল ‘কুল’। বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজই’ বলে দিচ্ছিল তিনি কতটা চাপমুক্ত। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলছিলেন, “বেশ ভাল ভাবেই ভোটটা শুরু হল। বুথের সামনে যা লাইন দেখলাম, তাতে বেলা এগারোটার মধ্যেই প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে যাবে। আজ আবহাওয়াটাও বেশ ভাল। ভোটের সঙ্গে মানানসই!” গত পুরভোটে ১,৪৫৯ ভোটের ব্যবধানে জেতেন রবিশঙ্করবাবু। তাঁর দাবি, মার্জিনটা এ বার বাড়বে বই কমবে না।

ভোটদানের হার দেখে স্বস্তিতে তৃণমূল-শিবির। ভোট শেষে তৃণমূলের এক নেতা বলছিলেন, “গত লোকসভা ভোটের সময় বিজেপি সম্পর্কে আমাদের মূল্যায়ন ঠিক ছিল না। খড়্গপুরে বিজেপি এতটা ভোট পাবে, আমরা অনুমান করিনি। তবে দেখে মনে হচ্ছে পুরভোটে তা হবে না। লড়াইটা আমাদের সঙ্গে কংগ্রেসেরই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE