Advertisement
১৫ মে ২০২৪
ফের কাঠগড়ায় নার্সিংহোম

ছাত্র মৃত্যুতে অভিযোগ গাফিলতির

মৃত শুভব্রত বেরা (২১) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁর বাড়ি দেভোগ গ্রামের গেঁয়োডাবে। শুক্রবার বুকে ব্যথার জন্য তাঁকে দুর্গাচকের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। পরিবারে অভিযোগ, গভীর রাতে মায়ের সামনেই শুভব্রতকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তার পর আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বের করে দেওয়া হয় মাকে।

শুভব্রত বেরা। ফাইল চিত্র

শুভব্রত বেরা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০১:২০
Share: Save:

ফের নার্সিংহোমের গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ। মৃতের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। হলদিয়ার দুর্গাচক এলাকার ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত শুভব্রত বেরা (২১) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁর বাড়ি দেভোগ গ্রামের গেঁয়োডাবে। শুক্রবার বুকে ব্যথার জন্য তাঁকে দুর্গাচকের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। পরিবারে অভিযোগ, গভীর রাতে মায়ের সামনেই শুভব্রতকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তার পর আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বের করে দেওয়া হয় মাকে। শনিবার সকালে ওই তরুণকে মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। তারপরই দুর্গাচক থানায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করে মৃতের পরিবার। নার্সংহোমের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন পরিজনেরা।

শুভব্রতর মামা বিপুল জানা বলেন, ‘‘থানায় অভিযোগের পর থেকেই লোক পাঠাচ্ছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। ভয় দেখিয়ে, মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রশাসনিক ভাবে ল়ড়াইটা চালাতে চাই।’’ তাঁর দাবি, ভয় দেখানোর কথাও পুলিশে জানানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ নিষ্ক্রিয়। দুর্গাচক থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

শুভব্রতর দাদা শোভনলাল বেরা জানান, ভাই হলদিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র। শুক্রবার মহিষাদল কলেজে একটি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। ফিরেই বুকে ব্যাথার কথা বাড়িতে জানায় সে। গ্রামের এক চিকিৎসকের পরামর্শে ওই দিন বিকেলেই দুর্গাচকের নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। শোভনলাল বলেন, ‘‘রাত ২টো পর্যন্ত কেবিনে মা ছিল। তখনই ভাইকে ইঞ্জেকশান দেওয়া হয়। তারপরই মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা উঠতে শুরু করে। তড়িঘড়ি মাকে বের করে দেয় ওরা।’’ তাঁদের অভিযোগ, শনিবার সকালে সব দিক সামলে নিয়ে শুভব্রতকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।

এ দিন সকালে নার্সিংহোমে আসেন শুভব্রতর কলেজের বন্ধুরা। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এই নোংরা পরিবেশে চিকিৎসা হয়? এটা নার্সিংহোম!’’ যাঁরা চিকিৎসা করছিলেন তাঁরা আদৌ স্বীকৃত চিকিৎসক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।

অভিযুক্ত নার্সিংহোমের ম্যানেজার বা মালিক কেউ কোনও কথা বলতে চাননি। সকলের মুখে এক কথা, ‘যা বলার পুলিশকে বলব’। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল তিনতলা একটি বাড়ির একতলায় সোনা রুপার দোকান, তার উপরে একটি বেসরকারি দূর-শিক্ষা সংস্থার কার্যালয়। ঘিঞ্জি পরিবেশে রমরমিয়ে চলে নার্সিংহোম। যে তিন জন রোগী ভর্তি ছিলেন, তাঁরা আর নেই। কোথায় গেলেন, মুখ খুলতে চাননি কেউ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হলদিয়া মহকুমা সংলগ্ন এই সব পরিকাঠামোহীন নার্সিংহোমগুলি দিনের পর দিন চলছে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের ‘খুশি’ করে। তারপর রোগী মৃত্যু হলে হইচই হয়। অনেক সময় থানাও অভিযোগ নিতে চায় না। আবার টাকা দিয়ে ‘কেস’ মিটিয়ে নেওয়াটাও পুরনো রীতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nursing Home Negligency Haldia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE