Advertisement
০৩ মে ২০২৪

এক বছর পড়েও পরীক্ষা নিয়ে সংশয়

স্নাতক স্তরে প্রথম বর্ষে পাশ করার দু’বছর পরে আবেদনের ভিত্তিতে এক ছাত্রকে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি করেছিল কলেজ। টানা এক বছর ক্লাসও করেন মেদিনীপুর কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) বিভাগের ওই ছাত্র সঙ্কেত পাল। কিন্তু বছর শেষে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার আবেদনপত্র পূরণের সময় জটিলতা দেখা দেয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৬
Share: Save:

স্নাতক স্তরে প্রথম বর্ষে পাশ করার দু’বছর পরে আবেদনের ভিত্তিতে এক ছাত্রকে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি করেছিল কলেজ। টানা এক বছর ক্লাসও করেন মেদিনীপুর কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) বিভাগের ওই ছাত্র সঙ্কেত পাল। কিন্তু বছর শেষে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার আবেদনপত্র পূরণের সময় জটিলতা দেখা দেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, তিনি পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। কারণ, তাঁর ভর্তি ছিল নিয়ম বহির্ভূত। ফলে পরীক্ষার আগে সমস্যায় পড়েছেন সঙ্কেত।

ঠিক কী হয়েছিল? ২০১১ সালে সঙ্কেত মেদিনীপুর কলেজ থেকেই বাংলা অনার্স নিয়ে প্রথম বর্ষে ৬১ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করে। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে তিনি কলেজ আসেননি। দু’বছর অসুস্থতার কারণে কলেজ আসতে পারেননি জানিয়ে, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ওই পাঠক্রমেই পড়ার আবেদন করেন তিনি। অধ্যক্ষের কাছে বিশেষ অনুমতি নিয়েই সঙ্কেত কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তিও হন। ভর্তির সময় কলেজের অধ্যক্ষ সঙ্কতকে জানিয়ে দেয়, এটাই তাঁকে শেষ সুযোগ দেওয়া হল, এরপরে অকৃতকার্য হলে বা কলেজে না এলে তাঁকে আর সুযোগ দেওয়া হবে না। টানা এক বছর ক্লাসও করেন সঙ্কেত। সামনে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। পরীক্ষার আবেদনপত্র পূরণ করতে গিয়েই সমস্যা তৈরি হয়। এখন কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রের ভর্তি নিয়ম বর্হিভূত বলে দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। এমনকী কলেজ তাঁর ভর্তির টাকা ফেরত দিতে চাইছে। যাতে সঙ্কেত পরীক্ষার দাবি না জানায়। অভিযোগ, সমস্যার সমাধান না করে কলেজে সঙ্কেতের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করা হয়।

সঙ্কেত বলেন, “এখন কলেজ বলছে আমি নাকি বেআইনিভাবে ভর্তি হয়েছি। আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হল। তবে তাতে দু:খ নেই। শিক্ষকেরাই তো করেছেন। আমার একটাই দাবি, আমাকে পরীক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হোক। পরীক্ষাই যদি না দিতে পারব, তাহলে পড়লাম কেন?” কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন বাগের কথায়, “আমার পক্ষে তো সব নিয়ম জানা সম্ভব নয়। তাই কলেজের অশিক্ষক কর্মীদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমাকে জানাতে বলেছিলাম। তাঁদের পরামর্শেই ওই ছাত্রকে ভর্তি নিয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, এটা নিয়ম বহির্ভূত। এক্ষেত্রে আমি কী আর করতে পারি। তাই টাকা ফেরত নিতে বলেছি।” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক বিনয় চন্দ বলেন, “ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী প্রথম বর্ষে ২ বার, দ্বিতীয় বর্ষে ৩ বার ও তৃতীয় বর্ষে ২ বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাতে কেউ অকৃতকার্য হোক, কলেজ না আসুক, অসুবিধে নেই। কিন্তু তাঁকে নিয়মিত কলেজে ভর্তি হতে হবে। এই ছাত্রটি প্রথম বর্ষে ৬১ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হননি। এক্ষেত্রে তাঁকে ফের নতুন করে ভর্তি হতে হত।”

কিন্তু কলেজের ভুলের মাসুল ছাত্র কেন দেবেন? এ ক্ষেত্রে কী কোনও দ্বিতীয় পথ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক্ষেত্রে নিজের ভুল স্বীকার করে কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি জানায়, সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে আলোচনা করে ছাত্রটি পরীক্ষা দিতে পারবে বলে সিদ্ধান্তও গ্রহণ করতে পারে। এ ব্যাপারে ইউজিসি-র কাছ থেকে বিশেষ অনুমতিও নেওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষকে আগ্রহী হতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ আগ্রহ দেখানো দূরে থাক ওই ছাত্রের সঙ্গে দুর্ব্যহার করছে বলে অভিযোগ। তবে সঙ্কেতও হাল ছাড়তে নারাজ। সবং ব্লকের চাউলকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা সঙ্কেত বলেন, “পড়ার জন্য মেদিনীপুর শহরে থাকতে হয়েছে। এক বছরে থাকা খাওয়ার কত খরচ, প্রাইভেট টিউশন, কলেজের বেতন-সহ যাবতীয় খরচ করেছি, ১ বছর সময় নষ্ট করেছি, আমাকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতেই হবে। ভর্তির নিয়ম না থাকলে আমাকে ভর্তি নেওয়া হল কেন? ছাত্র হিসাবে নিয়ম কী আমার জানার কথা?” ওই কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা মাধবী মাইতিও বলেন, “ছাত্রটি মেধাবি। ও নিয়মিত ক্লাসও করেছে। ওর এমন সমস্যা শুনে খুবই খারাপ লাগছে।” সঙ্কেতও জানিয়েছে, নিতান্তই যদি আবেদন করে ফল না মেলে, তাহলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন।

সঙ্কেত কী করবেন তা সময় বলবে। তবে এই ঘটনায় ওই কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medinipur college examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE