Advertisement
০২ জুন ২০২৪

কাজ হারানোর আশঙ্কায় বিক্ষোভ আইআইটি কর্মীদের

আইআইটি কর্তৃপক্ষ একের পর এক হোস্টেল পরিচালনার দায়িত্ব ঠিকাদার সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ায় কাজ হারানোর আশঙ্কায় বিক্ষোভ দেখালেন আইআইটি’র মদন মোহন মালব্য হলের স্থায়ী কর্মীরা। বুধবার আইআইটি চত্ত্বরে ‘হল ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’-এর সামনে তারা বিক্ষোভ দেখান।

খড়্গপুর আইআইটি’তে কর্মীদের বিক্ষোভ।  ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

খড়্গপুর আইআইটি’তে কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৪
Share: Save:

আইআইটি কর্তৃপক্ষ একের পর এক হোস্টেল পরিচালনার দায়িত্ব ঠিকাদার সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ায় কাজ হারানোর আশঙ্কায় বিক্ষোভ দেখালেন আইআইটি’র মদন মোহন মালব্য হলের স্থায়ী কর্মীরা। বুধবার আইআইটি চত্ত্বরে ‘হল ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’-এর সামনে তারা বিক্ষোভ দেখান।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই আইআইটি কর্তৃপক্ষ সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মী (ইনস্টিটিউট স্টাফ)-দের সঙ্গে তাদের (হল স্টাফ) বৈষম্য করে এসেছে। কর্তৃপক্ষ খড়্গপুর আইআইটি’র অধীনে থাকা একের পর এক হোস্টেল পরিচালনার দায়িত্ব ঠিকাদার সংস্থার হাতে দেওয়ায় ফলে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীর সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে কাজ হারানোর আশঙ্কায় তারা আন্দোলনে নেমেছেন। এ দিন আইআইটি’র মদন মোহন মালব্য হলের ৭৯ জন স্থায়ী কর্মী (হল স্টাফ) হল চালু রাখার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। আইআইটি’র রেজিস্ট্রার তপনকুমার ঘোষাল বলেন, “ওই কর্মীদের কাজ হারানোর কোনও আশঙ্কা নেই। মদন মোহন মালব্য হল ঠিকাদার সংস্থার হাতে গেলেও ওই হলের স্থায়ী কর্মীরা আমাদের অন্য হলে কাজ করবেন। এছাড়াও দিনে-দিনে হলের সংখ্যা বাড়তে থাকায় কর্মী উদ্বৃত্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। আর বিধি অনুযায়ী যা ওদের প্রাপ্য সবই দেওয়া হচ্ছে।”

প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের থাকার জন্য আইআইটিতে দু’টি নতুন হল নিয়ে মোট ১৯টি হল রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি হল বাদে বাকিগুলিতে মেস নেই। ফলে ১৫টি হল পরিচালনার জন্য আইআইটি’র স্থায়ী কর্মী (হল স্টাফ) রয়েছেন। যদিও আইআইটি কর্তৃপক্ষ এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৮টি হলের পরিচালনা নিজের কর্মী দিয়েই করে থাকে। আর ৭টি হল পরিচালনা করে ঠিকাদার সংস্থা। এতদিন ৮টি হলের পরিচালনার দায়িত্ব ছিল আইআইটি কর্তৃপক্ষের হাতে। অভিযোগ, ধীরে-ধীরে ৭টি হল পরিচালনার দায়িত্ব ঠিকাদারের হাতে যাওয়ায় বাকি ৮টি হলে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী সংখ্যা বেশি রয়েছে।

হল ম্যানেজমেন্ট সেন্টার সূত্রে খবর, গত এপ্রিল মাসে মদনমোহন মালব্য হলটি ঠিকাদারের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দরপত্র আহ্বান করে আইআইটি কর্তৃপক্ষ। গত ৩০ মে ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন। ১৬টি ঠিকাদার সংস্থা ওই হল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চেয়ে আবেদন জানায়। তবে বাছাই শেষে ১০টি আবেদন বাতিল হয়। বাকি সংস্থাগুলির মধ্যে কোনও একটি ঠিকাদার সংস্থাকে বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে যে সংস্থা বরাত পাবে সেই সংস্থা কর্মী নিয়োগ করে হল পরিচালনা করবে।

গত বছর এই কর্মীদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয় ‘রেসিডেন্সিয়াল হল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’। এ দিন ওই ইউনিয়নের নেতৃত্বেই এই আন্দোলন সংগঠিত করা হয়। ওই হলের কর্মীদের অভিযোগ, বারবার জানানোর পরও প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে হলের স্থায়ী কর্মীদের সুযোগ-সুবিধায় পার্থক্য রয়েছে। হল কর্মীদের নির্ধারিত বেতনে জটিলতা, অবসরপ্রাপ্তদের মেডিক্যালের সুবিধা না দেওয়া, নিম্নমানের আবাসন, বাড়ির নির্মাণের অগ্রিম না দিয়ে বৈষম্যে সৃষ্টি করেছে আইআইটি কর্তৃপক্ষ। এমনকী একের পর এক হল পরিচালনার দায়িত্ব ঠিকাদার সংস্থার হাতে তুলে দিলেও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আইআইটি কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা করে না। মদনমোহন মালব্য হলের সুপারভাইজার অভিজিৎ রায়, রাধুনি বিমান দাস বলেন, “চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে পদোন্নতি বলে আমাদের কিছু হয়নি। তার ওপরে আমাদের হল ঠিকাদার সংস্থার হাতে গেলে আমরা কোথায় যাব সে বিষয়ে আইআইটি কর্তৃপক্ষ আলোচনা করছে না। তাই আমরা কাজ হারানোর আশঙ্কাতেই পথে বসেছি।”

এ দিন বিক্ষোভের মুখে পড়ে বৈঠক ডাকেন হল ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান তথা আইআইটি’র মেকানিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ মাইতি। বৈঠকে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ‘স্টুডেন্ট অ্যাফয়ার্স’-এর ডিন নিশিথরঞ্জন মণ্ডল। আর বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেসিডেন্সিয়াল হল ওয়াকার্স ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ ধর, সাধারণ সম্পাদক অনন্তচরণ ভুঁইয়া প্রমখ। দীর্ঘক্ষণ বৈঠকের পরে মীমাংসার প্রশ্নে চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ মাইতি বলেন, “মীমাংসা হয়েছে কি না তা যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁরাই জানেন।” আর ‘স্টুডেন্ট অ্যাফয়ার্স’-এর ডিন নিশিথরঞ্জন মণ্ডলের দাবি, “কেউ কাজ হারাবে না, এটুকু বলতে পারি।” যদিও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ ধরের হুঁশিয়ারি, “এভাবে ঠিকাদার সংস্থার হাতে হলগুলি চলে গেলে আমাদের কী হবে আইআইটি তা স্পষ্ট করছে না। তাই আমাদের দাবি, আমাদের প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মীদের মতো মর্যাদা দেওয়া হোক। তা না হলে কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kharagpur iit agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE