Advertisement
১৬ মে ২০২৪

কাজ হারিয়ে অস্থায়ী কর্মীদের বিক্ষোভ খড়্গপুরের কারখানায়

স্থায়ীকরণের দাবিতে সরব হয়েছিলেন খড়্গপুরের এক ভারীযন্ত্র নির্মাণকারী সংস্থার অস্থায়ী কর্মীরা। ট্রাক্টরস্ ইন্ডিয়া লিমিটেড (টিআইএল) নামে ওই সংস্থায় ঠিকাদারের অধীনে কর্মরত ১০১ জন কর্মীকে স্থায়ী করার পরিবর্তে কাজ থেকে বরখাস্ত করা হল শুক্রবার। এ দিন সকালে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলানোর পরে খড়্গপুরের চাঙ্গুয়ালে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কারখানার গেটের বাইরে বিক্ষোভে বসেন কাজহারা শ্রমিকেরা।

চাঙ্গুয়ালে কারখানার গেটের সামনে বিক্ষোভ। রামপ্রসাদ সাউ।

চাঙ্গুয়ালে কারখানার গেটের সামনে বিক্ষোভ। রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

স্থায়ীকরণের দাবিতে সরব হয়েছিলেন খড়্গপুরের এক ভারীযন্ত্র নির্মাণকারী সংস্থার অস্থায়ী কর্মীরা। ট্রাক্টরস্ ইন্ডিয়া লিমিটেড (টিআইএল) নামে ওই সংস্থায় ঠিকাদারের অধীনে কর্মরত ১০১ জন কর্মীকে স্থায়ী করার পরিবর্তে কাজ থেকে বরখাস্ত করা হল শুক্রবার। এ দিন সকালে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলানোর পরে খড়্গপুরের চাঙ্গুয়ালে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কারখানার গেটের বাইরে বিক্ষোভে বসেন কাজহারা শ্রমিকেরা। দিনভর বিক্ষোভ চলে। আসে পুলিশ। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ বৈঠক ডাকলেও কোনও রফাসূত্র বেরোয়নি। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কাজহারা ওই ঠিকাকর্মীরা।

হঠাৎ সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর নোটিস কেন?

ওই ঠিকাদার সংস্থার এইচ আর কো-অর্ডিনেটর কাঞ্চন সিংহ বলেন, “কর্মীরা দু’দিন ধরে নিয়ম মেনে কাজ না করে স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এরপরই কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের চুক্তি খারিজ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ওই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।” টিআইএল-এর তরফে এক মুখপাত্র অবশ্য জানান, ঠিকাদারের অধীন ওই অস্থায়ী কর্মীদের কাজে রাখা বা না-রাখার বিষয়টি একেবারেই সংস্থার বিচার্য নয়। ঠিকাদার সংস্থাই এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভারীযন্ত্র নির্মাণকারী ওই সংস্থা প্রায় ৭০ বছরের পুরনো। খড়্গপুরের চাঙ্গুয়ালে তাদের বৃহত্তম কারখানার উদ্বোধন হয়েছিল ২০১১ সালের ১ অগস্ট। ওই বছরই জুলাই মাস থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়। স্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি ১০৫ জনকে টেকনিক্যাল নানা কাজে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়াও জমিদাতা পরিবারের শ্রমিক, কর্মী-সহ প্রায় ১৫০ জন কাজ করেন ওই কারখানায়। ওয়েল্ডার, ফিটারের কাজে নিযুক্ত ১০৫ জন অস্থায়ী কর্মীর দাবি, প্রাথমিক ভাবে ১১ মাসের চুক্তি করেছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষে স্থায়ীকরণের মৌখিক আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। তবে স্থায়ীকরণ হয়নি। উল্টে ১১ মাস পরে ঠিকাদের অধীনে কাজে পাঠানো হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, এই দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন। গোড়া থেকেই ওই কর্মীরা ঠিকাদারের অধীনে কাজ করছিলেন। তাঁদের স্থায়ীকরণের আশ্বাসও দেওয়া হয়নি।

বছর তিনেক ঠিকাদারের অধীনেই কাজ করেছেন ওই শ্রমিকেরা। ইতিমধ্যে চারজন শ্রমিক কাজ ছেড়ে চলেও গিয়েছেন। এ বার চুক্তি পুনর্নবীকরণের আগেই স্থায়ীকরণের দাবিতে সরব হন বাকি ১০১ জন কর্মী। দিন দু’য়েক হল তাঁরা কাজেও অনীহা দেখাচ্ছিলেন। কারখানা সূত্রের খবর, এতেই চটে যান কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন তাঁরা। তারপর রাতেই ওই ঠিকাদার সংস্থা ‘কোম্পানি লোকসানের মুখে পড়ায় কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হল’ বলে বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেয়। এ দিন সকালে কাজে এসে ওই ১০১ জন কর্মী তা দেখে কারখানার গেটের বাইরে অবস্থানে বসেন। কাজে পুনর্বহাল ও স্থায়ীকরণের দাবি জানান। কাজহারা শ্রমিকদের তরফে সঞ্জয় পাত্র, প্রদ্যোৎ মাইতি, গৌতম ঘড়ারা বলেন, “স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এখন ঠিকাদারকে দিয়ে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়েছেন।”

সকাল ৮টা থেকে প্রায় ৪ ঘন্টা বিক্ষোভ চলার পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে কর্মীদের তরফে প্রতিনিধিত্ব করেন সুদীপ মণ্ডল, মন্টু হাজরা-সহ ৭ জন। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পিনাকী নিয়োগী, জেনারেল ম্যানেজার রথীন্দ্রনাথ দাস ও ম্যানেজার (এইচআর) সন্দীপ ভট্টাচার্য। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বৈঠক চললেও সমাধান সূত্র বেরোয়নি। আন্দোলনকারী কর্মীদের তরফে সুদীপ মণ্ডল বলেন, “সংস্থা বলছে স্থায়ী করার প্রশ্নই নেই। আর আমাদের চুক্তিও খারিজ করা হয়েছে। তাই কাজ করতে গেলে অস্থায়ী ভাবেই নতুন চুক্তি করে কাজে যোগ দিতে হবে। তারও অনেক জটিলতা। ফলে, আমরা মানিনি। আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”

এ দিনের আন্দোলনে অবশ্য কোনও রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকা ছিল না। ওই ব্লক থেকে মনোনীত তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অজিত মাইতি বলেন, “আমাদের এখনও ওই কর্মীরা কিছু জানাননি। তাঁদের দাবি নায্য হলে আমরা দেখবো।” সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ দাসের বক্তব্য, “আমরা ঠিকা চুক্তির বিরোধী। যখন সংস্থা টেকনিক্যাল কর্মীদের নিয়োগ করেছিল, তাঁদের দেখেই নিয়েছিল। তাই কর্মীদের স্থায়ীকরনের দাবি নায্য।” কাজহারা কর্মীরা জানালে তাঁরাও পাশে দাঁড়াবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন সিটু নেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE