Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

কোথাও নতুন মুখ, কোথাও চমক তালিকায়

নির্বাচন কমিশনের তরফে লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার দিনেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল রাজ্যের প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বাম শিবির। পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ফের শিশির-শুভেন্দু’র যুগলবন্দি থাকলেও, বাম শিবিরের প্রার্থী তালিকায় এসেছে নতুন দুই মুখ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৭:৫৪
Share: Save:

নির্বাচন কমিশনের তরফে লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার দিনেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল রাজ্যের প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বাম শিবির। পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ফের শিশির-শুভেন্দু’র যুগলবন্দি থাকলেও, বাম শিবিরের প্রার্থী তালিকায় এসেছে নতুন দুই মুখ। কাঁথি লোকসভা আসনে শিশির অধিকারীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন সিপিএমের যুব সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতা তাপস সিংহ, তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের জেলা সভাপতি শেখ ইব্রাহিম আলি।

তবে, ‘চমক’ রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায়। যা আগাম অনুমান তো দূরের কথা, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার আগে পর্যন্তও কেউ টের পাননি। শুধু অনুমান ছিল, বাইরের কোনও ব্যক্তিকে প্রার্থীকে করা হবে। তাই বলে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে সন্ধ্যা রায় ও ঘাটালে দেব-এর মতো বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্র তারকাদের যে প্রার্থী করা হবে, তা কেউ আঁচ করেননি। ঝাড়গ্রামে প্রার্থী হয়েছেন ডা. উমা সোরেন। বাম প্রার্থী তালিকায় অবশ্য তেমন কোনও চমক নেই। প্রত্যাশিত ভাবেই দু’টি কেন্দ্রে দুই জয়ী সাংসদ প্রবোধ পান্ডা ও পুলিনবিহারী বাস্কেই ফের প্রার্থী হয়েছেন। ঘাটালের জয়ী সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত অবশ্য এ বার নিজের কেন্দ্রে দাঁড়াননি। পরিবর্তে সেখানে প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা।

‘চিরকালই মানুষের জন্য কাজ করে এসেছি, সুযোগ পেলে ফের মানুষের জন্যই কাজ করবো’। প্রত্যাশা মাফিক কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে গতবারের তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর নাম ঘোষণা হওয়ার পর এটাই শিশিরবাবুর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। বর্ষীয়ান শিশির অধিকারী এ বারে তৃতীয় বারের জন্য কাঁথি লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন। বুধবার শিশিরবাবু বলেন, “সাংসদ হিসেবে গত পাঁচ বছরে অনেক কাজ করলেও, কিছু তো বাকি রয়েই গিয়েছে। ফের জিতে সেই সব অপূর্ণ কাজ শেষ করব।” অন্য দিকে, তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে এ বারও তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। ২০০৪ সালে প্রথম বার তমলুক লোকসভা নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে। ওই নির্বাচনে পরাজিত হলেও পরের বার নন্দীগ্রাম আন্দোলনের আবহে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ফের লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে জেতেন। এই নিয়ে তৃতীয় বার তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়া শুভেন্দুবাবু বলেন, “এটা রাজনৈতিক লড়াই। আমাদের লড়াই রাজনৈতিক ভাবেই হবে।” তাঁর সংযোজন, “সাংসদ হিসেবে পাঁচ বছরে কী কী করেছি, এ বার তার মূল্যায়ন করবেন জনগণ।” বিরোধী প্রার্থীদেরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেবের নাম ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। নাম ঘোষণার পর এ দিন প্রকাশ্যে তেমন কোনও ‘অসন্তোষ’ সামনে আসেনি। বরং দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর ব্যাপারে কোমর বেঁধে নামার কথা জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি অজিত দে বলেন, “দেবকে জেতানোর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।” ঘাটালের বিধায়ক তথা পরিষদীয় সচিব শঙ্কর দোলই আবার রেকর্ড ভোটে দেবকে জেতানোর কথা জানিয়েছেন। এই কেন্দ্র থেকে দেব জিতলে তাঁকে ঘাটালের ফি-বছরের বন্যা পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান-সহ একাধিক সমস্যা মেটাতে হবে তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন অনুশ্রী অধিকারী (বেরা)। ঘাটাল শহরের এই গৃহবধূ বলেন, “আমাদের আশা দেব এলাকার মানুষের সাথী হবেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা অবশ্য বলেন, “দেব বড় অভিনেতা হতে পারেন, কিন্তু ওঁর সঙ্গে মানুষের কোনও যোগাযোগ নেই। তা ছাড়া পরিবর্তনের সরকার এত দিন কী করছে, তা মানুষ ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছেন!”

সিপিএমের যুব সংগঠন থেকে উঠে এসে কাঁথিতে শিশির অধিকারীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তাপস সিংহ। এ দিন তিনি বলেন, “কাঁথির মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে নানা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। দিঘা-শঙ্করপুর-মন্দারমণি-তাজপুর পর্যটন কেন্দ্রকে আধুনিকীকরণ করাই আমার প্রচারের অন্যতম প্রধান ইস্যু।”। ছাত্র সংগঠন থেকে প্রার্থী হয়েছেন শেখ ইব্রাহিম আলি। শুভেন্দু’র প্রতিপক্ষ বছর পঁচিশের ইব্রাহিম বলেন, “লড়াইটা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, নীতির লড়াই। সারা দেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে রাজ্য জুড়ে চলা ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস ও চিটফান্ডের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠতার বিরুদ্ধেই আমার লড়াই।”

ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন বছর আঠাশের উমা সোরেন। তাঁর সম্বন্ধে অবশ্য তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের কাছেও তেমন কোনও ‘তথ্য’ নেই। তবে তিনি জঙ্গলমহলের ‘ভূমিপুত্র ও কন্যা মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদিকা। উমার বাড়ি ঝাড়গ্রামের উত্তর বামদা এলাকায়। ঝাড়গ্রাম রানি বিনোদমঞ্জরী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাক্তনী। পেশায় ডাক্তার। তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও পক্ষই প্রকাশ্যে তেমন কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। সিপিআই প্রার্থী তথা দলের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণার কথায়, “প্রার্থী সম্বন্ধে কী আর বলব! আমরা লড়াই করব। মানুষই জবাব দেবেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “লোকসভা নির্বাচনেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো সন্ত্রাস, বাড়ি ভাঙচুর হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। যদি তা না হয়, আমরা মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাই তা হলে ইতিবাচক ফল হবে বলেই আশাবাদী।” তৃণমূলের প্রার্থী সম্বন্ধে দীপকবাবুর মন্তব্য, “মানুষের সব সমস্যার সমাধান হয়তো করা কঠিন, কিন্তু পাশে থেকে সেই চেষ্টা তো করতে হবে। আমরা সে ভাবেই প্রার্থী ঠিক করেছি।” তিনি বলেন, “তৃণমূল যাঁদের প্রার্থী করেছে তাঁরা কতটা এই কাজ করবেন বুঝতে পারছি না। এ ভাবে চমকের রাজনীতি শুরু হলে ভবিষ্যতে কী হবে বলা কঠিন।”

যদিও বামপন্থীদের এই সমালোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। এই ধরণের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের বক্তব্য, “নেত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রের যোগ্য ব্যক্তিদের সংসদে পাঠাতে চেয়েছেন। রাজ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যেই তাঁর দীপকবাবু, সন্তোষবাবুরা অবশ্য মানছেন, এখনই ফল নিয়ে বলার সময় আসেনি। সকলে প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করেনি। নির্বাচনেরও ঢের দেরি। মাঝে কত সমীকরণ বদলাবে কে বলতে পারে!

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন...

অন্য বিষয়গুলি:

loksabha vote cpm trinamul congress medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE