সারদা কেলেঙ্কারি আর বিজেপির বাড়বাড়ন্ত জোড়া ফলায় জেরবার তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু দিন ধরেই দলের অভ্যন্তরে শুদ্ধকরণের বার্তা দিচ্ছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এ বার শুরু রদবদলও। খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের নেতাদের ক্ষমতা বিন্যাস বদলাতে চলেছে।
১৯ ডিসেম্বর দুই মেদিনীপুরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে খড়্গপুরে সাংগঠনিক সভা রয়েছে মমতার। তবে তৃণমূল নেত্রী যে পশ্চিম মেদিনীপুরে দলীয় সংগঠন নিয়ে যথেষ্ট ভাবিত, তার ইঙ্গিত মিলেছে গত শুক্রবার। সে দিন দুর্গাপুরে চার জেলার (বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম) নেতাদের নিয়ে সভা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। তারই মধ্যে নেত্রী ডেকে পাঠিয়েছিলেন পশ্চিমের চার নেতা জেলা সভাপতি দীনেন রায়, দুই কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ ও আশিস চক্রবর্তী এবং সভাধিপতি উত্তরা সিংহকে। বৈঠকও করেন। দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে দলের হাল নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি মমতা।
সেখানে কী নির্দেশ দিয়েছেন মমতা? তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে জেলার সার্বিক দায়িত্ব ছিল দীনেন রায়ের উপরে। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রদ্যোত্ ঘোষকে নিয়ে সারা জেলা ঘুরে বেড়াতেন। এ বার মমতা শুধু মেদিনীপুর সদর মহকুমার একটা অংশ দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন দীনেনকে। এই মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ দু’টি ব্লক, যেখানে নিত্য গোষ্ঠী সংঘর্ষ, খুন লেগেই রয়েছে, সেই কেশপুর ও গড়বেতার দায়িত্ব আবার দেওয়া হয়েছে আশিস চক্রবর্তীকে। তিনি মেদিনীপুর শহরে দলীয় সংগঠনও দেখবেন। জেলা সভাপতির হাতে রইল মেদিনীপুর গ্রামীণ, শালবনি, গড়বেতা-২ ও ৩ ব্লক। প্রদ্যোত্কে শুধু খড়্গপুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য নেতা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া হয়েছে ঝাড়গ্রাম মহকুমার দায়িত্ব। প্রাক্তন এই নকশাল নেতা মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা ভাল বুঝবেন বলেই এই সিদ্ধান্ত।
ঘাটাল মহকুমার দায়িত্ব অবশ্য এখনও কাউকে দেওয়া হয়নি। তৃণমূল সূত্রের খবর, ঘাটালের প্রসঙ্গ উঠতেই রেগে যান মুখ্যমন্ত্রী। নেত্রীর ক্ষোভ, ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলুই নিজের এলাকায় ঠিক মতো সংগঠন দেখেন না। উল্টে মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ হিসেবে জেলার অন্যত্র নিজের প্রভাব খাটান। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে সভাপতি পরিবর্তনেরও নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। আগে এই সভাপতি ছিলেন চিত্ত পাল। কিছু দিন আগে তাঁকে সরিয়ে সুকুমার চক্রবর্তীকে সভাপতি করেছে জেলা নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, পুরনো সভাপতিকেই ফিরিয়ে আনতে হবে বলেছেন মমতা। যদিও রবিবার পর্যন্ত সেই রদবদল হয়নি। জেলায় তৃণমূলের মুখপাত্র প্রদ্যোত্বাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, “অভিজ্ঞদের বিভিন্ন মহকুমার পর্যবেক্ষক হিসাবে কাজ করতে বলেছেন নেত্রী। চন্দ্রকোনার ব্লক সভাপতি পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হলে সকলে জানবেন।”
এক তৃণমূলের অন্দরে কোন্দল-সহ নানা সমস্যা, তার উপর আবার জেলায় প্রভাব বাড়তে শুরু করেছে বিজেপি-র। গত লোকসভা ভোটের হিসেবে তো খড়্গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। কী ভাবে দলকে সংগঠিত করা যায়, কী ভাবে উন্নয়ন করে মানুষের মন পাওয়া যায়, তার জন্য বিস্তর পরিকল্পনা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সম্প্রতি দলের জেলা কমিটির বৈঠকে পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। তৃণমূল সূত্রে খবর, তা জেনে বেজায় চটেছেন মমতা। দীনেনকে বলেছেন, ‘বৈঠকে এমন এজেন্ডা কে রাখতে বলেছিল? সরকার চালাচ্ছি আমি। আমি বুঝব কে কোথায় ডিএম, এসপি থাকবে।’
জেলা পরিষদের কাজ নিয়েও অখুশি মুখ্যমন্ত্রী। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী, ২ মাসের মধ্যে কাজে গতি না দেখলে জেলা সভাধিপতিও পরিবর্তন করে দিতে পারেন! তৃণমূলের রদবদল নিয়ে বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল যা-ই করুক লাভ হবে না। মানুষ ওদের উপর আস্থা হারিয়েছেন।”
মমতার সাংগঠনিক সভার প্রচার, মিছিল
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর
দলনেত্রীর কর্মিসভা সফল করতে প্রচার মিছিল শুরু করল তৃণমূল। রবিবার খড়্গপুর-২ ব্লকের মাদপুরের জাতীয় সড়ক থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পথে মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অজিত মাইতি, ব্লক সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ মাঝি, যুব তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজি মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ১৯ ডিসেম্বর দুই মেদিনীপুরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে খড়্গপুরে সভা করবেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রস্তুতি দেখতে খড়্গপুর ঘুরে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। এ দিনের মিছিল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বঞ্চনা, একশো দিনের প্রকল্পের টাকা বকেয়া রাখা, চিটফান্ড কাণ্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ করা হয়। অজিতবাবু বলেন, “নেত্রীর কর্মিসভা সফল করতে আমরা এই ব্লক থেকে প্রচার শুরু করে দিলাম।” কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে রবিবার মেদিনীপুর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূলের মিছিল হয়। নেতৃত্বে ছিলেন মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি, দলের জেলা নেতা সুকুমার পড়্যা প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy