Advertisement
০২ মে ২০২৪
না হওয়া প্রকল্পে ব্যয়

তিন বছরেও সুইমিং পুল না হওয়ায় ফেরত গেল টাকা, সুদও চায় ইউজিসি

এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া! তিন বছরেও সুইমিং পুল তৈরি না হওয়ায় ওই খাতে বরাদ্দ ৮৫ লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-কে ফেরত দিতে হয়েছে মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষকে।

 মেদিনীপুর কলেজের এই মাঠেই সুইমিং পুল হওয়ার কথা ছিল।—নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর কলেজের এই মাঠেই সুইমিং পুল হওয়ার কথা ছিল।—নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০১:০২
Share: Save:

এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া!

তিন বছরেও সুইমিং পুল তৈরি না হওয়ায় ওই খাতে বরাদ্দ ৮৫ লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-কে ফেরত দিতে হয়েছে মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষকে। প্রকল্প রূপায়ণ করে না পারায় এ বার শর্তমতো বরাদ্দ টাকার উপর ১০ শতাংশ হারে সুদ দাবি করল ইউজিসি। সেই টাকার পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকারও বেশি। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন্দ্রনাথ বাগের কথায়, “সুইমিং পুল না হওয়ায় শুধু কলেজ নয়, শহরবাসীও বঞ্চিত হলেন। তার উপর যদি সুদ বাবদ এত টাকা দিতে হয়, তাহলে চরম সমস্যায় পড়তে হবে।” সুদ মকুব করতে ইউজিসিকে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

টাকা থাকা সত্ত্বেও কেন তৈরি করা গেল না সুইমিং পুল?

কলেজ সূত্রের খবর, মূলত জমি জটেই কাজটা করা যায়নি। মেদিনীপুর কলেজে সুইমিং পুল তৈরির জন্য ১ কোটি ৭০ টাকা মঞ্জুর করেছিল ইউজিসি। ২০১১ সালের ১৮ মার্চ ওই টাকা মঞ্জুর হয়। ওই বছরই এপ্রিল মাসে অর্ধেক টাকা অর্থাত্‌ ৮৫ লক্ষ টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষকে দিয়েও দেওয়া হয়। কলেজ মাঠের একটি অংশে সুইমিং পুল করার জন্য জমি চিহ্নিত করেন কর্তৃপক্ষ। ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করা, আর্কিটেকচারকে দিয়ে নকশাও বানানো হয়। এ সবে প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এরপরই শুরু হয় জমি নিয়ে জটিলতা। ঐতিহ্যশালী কলেজ মাঠের একটা অংশে সুইমিং পুল তৈরি হলে মাঠ ছোট হয়ে যাবে বলে নানা মহলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এ নিয়ে অনেকে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে দরবার করেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন্দ্রনাথবাবু জানান, ওই জমি কলেজের নামে দানপত্র করেছিল পুরসভা। তবু জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুইমিং পুল করার অনুমতি দেয়নি। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্তের অবশ্য বক্তব্য, “ওই জমি লিজের জমি। সেখানে উল্লেখ রয়েছে কেবল খেলার মাঠই করা যাবে। অন্য কিছু নয়। তাহলে অনুমতি দেব কী করে?”

• ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে পরিকল্পনা করানোয় ২ লক্ষ।

• আর্কিটেকচারকে দিয়ে নক্সা বানাতে সাড়ে ৩ লক্ষ।

• এ বার সুদ বাবদ ইউজিসি-র দাবি প্রায় ২৫ লক্ষ।

• মঞ্জুর হয় ১ কোটি ৭০ লক্ষ। মিলেছিল ৮৫ লক্ষ।

এই টানাপড়েনে বন্ধ হয়ে যায় সুইমিং পুলের কাজ। পরবর্তীকালে ওই টাকায় অন্য কাজের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে অনুমতি মেলেনি। সুইমিং পুল না করলে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। অগত্যা অর্থ ফেরতেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি বছরের ২ জুন ইউজিসিকে ৮৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই ইউজিসি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, শুধু ৮৫ লক্ষ টাকা দিলেই চলবে না, বার্ষিক ১০ শতাংশ সুদ-সহ টাকা ফেরত দিতে হবে। অর্থ মঞ্জুরের সময় যে শর্তগুলি দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে এই শর্তটিও ছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, বিষয়টি তাঁদের নজরে ছিল না। এরপরই মাথায় হাত পড়ে কর্তৃপক্ষের। একদিকে তো কলেজ সুইমিং পুল থেকে বঞ্চিত হল। অথচ তার পরিকল্পনা করতে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। তার উপর সুদ বাবদ আরও ২৫ লক্ষ টাকা দিতে হলে সমস্যায় পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

মেদিনীপুর কলেজ এ বার স্বশাসিত হচ্ছে। ফলে পরিকাঠামো উন্নয়নে অনেক টাকা প্রয়োজন। একটি চারতলা নতুন ভবনের কাজও শুরু হয়েছে। তার জন্য সরকারের কাছ থেকে ১ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা মেলার আশ্বাস পেলেও এখনও পুরো টাকা মেলেনি। ফলে ভবন নির্মাণের কাজেও গতি নেই। ওই টাকা পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে সুদের টাকা দেওয়া যে একেবারেই অসম্ভব তা স্বীকার করে নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। না ফেরত দিলে অন্য আশঙ্কাও রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি ইউজিসি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়। অথচ, সুইমিং পুলটি হয়ে গেলে জেলায় যেমন একটি সম্পদ তৈরি হত তেমনি এই বিপুল অর্থের বোঝাও চাপত না কলেজের ঘাড়ে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কথায়, “চুড়ান্ত সমস্যায় পড়েছি। বুঝতে পারছি না, কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করব। শুধু এটুকু জানি, এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE