ট্রেনে উঠবেন বলে ভাইয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর কুড়ির এক তরুণী। আচমকাই এক যুবক ছুটে এসে ওই তরুণীকে জাপটে ধরলেন। তারপর যুগলে ঝাঁপ দিলেন রেললাইনে। রবিবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে এই ঘটনার সাক্ষী রইলেন সেখানে উপস্থিত অনেকেই। নাটকের অবশ্য এখানেই ইতি নয়। ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে পড়ায় ইঞ্জিন ও কামরার মাঝে ঢুকে যান ওই যুগল। অল্পবিস্তর জখম হন দু’জনে। এরপরই ওই যুবক পকেট থেকে ক্ষুর বের করে তরুণীর গলায় চালিয়ে দেন। পরে নিজের গলাতেও ক্ষুর চালান তিনি। জয় সিংহ নামে বছর চব্বিশের ওই যুবক এবং বছর একুশের তরুণী নেহা চন্দ্রাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জিআরপি থানার ওসি কৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, “ব্যর্থ প্রেমের জন্যই প্রেমিকাকে নিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন ওই যুবক। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
রেল পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়ের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার বাগবেড়ায়। নেহাও সেখানকার মেয়ে। কিশোর বয়স থেকেই দু’জনের মধ্যে প্রেম ছিল। কিন্তু নেহার পরিবার তাঁদের এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। কয়েক বছর আগে জামশেদপুরের টেলকো এলাকায় একটি পঞ্জাবি পরিবারে নেহার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ের পরও দুই শিশু সন্তানের মা নেহা প্রেমিককে ভুলতে পারেননি। গোপনে জয়ের সঙ্গে দেখা করতেন তিনি।
মাস তিনেক আগে জয়ের সঙ্গে পালিয়েও যান নেহা। বহু খুঁজেও নেহার হদিস পাননি বাপের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা।
শনিবার আচমকাই নেহা ফোন করেন ভাই শশীকে। বলেন, তিনি ফিরতে চান। রবিবার ভাইকে ঝাড়গ্রামে আসতে বলেন নেহা। সেই মতো এ দিন দুপুরে ঝাড়গ্রামে আসেন শশী। আর তারপরই এই ঘটনা।
শশী বলেন, “দিদিকে নিয়ে বিকেলের ট্রেনে জামশেদপুর ফিরব বলে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলাম। ট্রেন চলে এসেছিল। হঠাৎ জয় ছুটে এসে এই রকম একটা কাণ্ড বাধাল। দিদি তিন মাস কোথায় ছিল, তা-ও জানতে পারিনি।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনাটি ঘটে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ। টাটানগরগামী লোকাল ট্রেনটি তখন প্রায় এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকে পড়েছিল। ট্রেন ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন নেহা এবং শশী। জয় হঠাৎ ছুটতে ছুটতে এসে নেহাকে জাপটে ধরেন। তারপরই দু’জনে মিলে ঝাঁপান রেললাইনে। অস্ত্রোপচারের পর ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের একতলায় মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ঠাঁই হয়েছে জয়ের। দোতলায় ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে রয়েছেন নেহা। দু’জনেই গোঙাচ্ছেন। তবে বোঝা যাচ্ছে, নেহা ডাকছেন জয়ের নাম ধরে, আর জয়ের মুখে নেহার নাম। জয় ইশারায় জানান, নেহার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ ৮ বছরের সম্পর্ক। নেহা অবশ্য কোনও কথা বলতে চাননি। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সুপার মলয় আদক জানিয়েছেন, দু’জনের অবস্থাই এখন স্থিতিশীল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy