বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাক-এর প্রতিনিধি দল।—ফাইল চিত্র।
ন্যাক (ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল)-এর বিচারে এবারও ‘এ’ গ্রেড পেল না বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। আটকে থাকল ‘বি’ গ্রেডেই।
গতবারের তুলনায় নম্বর বেড়েছে মাত্র .০৫। গতবার ন্যাক পরিদর্শনের পর বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছিল ২.৮১। এবার তা বেড়ে হয়েছে ২.৮৬! যার ফলে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দও মিলবে কম। এই ঘটনায় সব মহল থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ৫ বছর ছাড়া ন্যাকের পরিদর্শন হয়। ৫ বছরে গুনগত মানের উন্নয়ন ঘটেছে মাত্র .০৫। কেন মানোন্নয়ন ঘটানো যায়নি? বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দীর কথায়, “কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার কথা ন্যাক আমাদের জানিয়েছে। সেই সমস্যা কাটিয়ে যাতে আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
১৯৭৮ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। যেখানে ক্লাস শুরু হয় ১৯৮৬ সাল থেকে। দেখতে দেখতে যুবক হয়ে গিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। তা সত্ত্বেও নিজেকে কেন মেলে ধরতে পারেনি? কী কী দিকে পিছিয়ে রয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও এই বিশ্ববিদ্যালয় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কোনও কাজই করতে পারেনি। অথচ, এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয় উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরী। তবেই শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়ন সম্ভব হয়। ছাত্রছাত্রীদের অন্য দেশের শিল্প, সংস্কৃতি, পাঠক্রম জানা অতি জরুরি। না হলে নিজেদের কখনই আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করতে পারবে না। শিল্প একটি বড় বিষয়। বর্তমানে সেই কারনেই প্রতিটি বিষয়ের শিল্পের যোগ থাকা জরুরী বলেই সকলে মনে করেন। তাই প্রয়োজন শিল্প সংস্থার সঙ্গে যোগসূত্র তৈরিও। এক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ। এমনকী পিছিয়ে পেটেন্টের ক্ষেত্রেও। এমন নয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাগার নেই। গবেষণাও চলে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সাফল্য কম। এ সবের দিকে নজর না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রং করা, নতুন চেয়ার কেনা, কিছু ভবন নির্মাণ এ সবের উপরই জোর দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভেবেছিলেন এ সব চমকেই খুশি করতে পারবেন ন্যাকের প্রতিনিধিদের। কিন্তু তা পারেননি। উল্টে শুনতে হয়েছে অন্য কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কথায়, “ন্যাকের সদস্যদের যেখানে বসতে দেওয়া হয়েছিল সেখানে একগুচ্ছ দামি নতুন চেয়ার রাখা হয়েছিল। বেশিরভাগ চেয়ারের থাকা প্লাস্টিকের মোড়ক পর্যন্ত খোলা হয়নি। যা দেখে ন্যাকের এক সদস্য রসিকতা করে বলেছিলেন, এগুলো কি ভাড়া করা!” বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ শিক্ষকের কথায়, “আমরা যত বৈঠক করি, পরিকল্পনা করি, কাজ করি তার থেকে অনেক কম। ফলে বাইরের রূপ দেখে মনে সুন্দর মনে হলেও ভেতরটা একই থেকে গিয়েছে।” পরপর দু’বার ন্যাক পরিদর্শনেও মানোন্নয়নের ছোঁয়া না থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীরাই ক্ষুব্ধ। যদিও পরেরবার সমস্যা মিটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সময়ই বলতে পারবে, সত্যিই কতটা এগোতে পারল বিদ্যাসাগর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy