গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। মেদিনীপুর শহরের চশমার দোকানে ফ্রেম পছন্দ করছিলাম। তখন এই প্রতিবেদকের কাছে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের ওপার থেকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল: আমি এটিএম অফিস থেকে বলছি। আপনার এটিএম কার্ডটি লক হয়ে যাবে। কার্ড লক হলে আপনি টাকা তুলতে পারবেন না। উত্তরে তিনি কোন এটিএম অফিস থেকে বলছেন জানতে চাই। সে তখন বলে, এসবিআই এটিএম অফিস থেকে বলছি। আপনার এটিএম কার্ড নম্বর ও পিন নম্বর বলুন। আমি আপনার কার্ড আনলক করে দিচ্ছি। তার ফোন নম্বর জানতে চাইলে সে জানায়, তাঁর নাম রাহুল শর্মা। এসবিআই-এর কোন ব্রাঞ্চ থেকে বলছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে ফের এটিএম কার্ড নম্বর জানতে চান। তখন তাঁর পদমর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাই। সেই প্রশ্নেরও উত্তরও দিতে চাননি ফোনের ওপারের ব্যক্তিটি। তখন কিছুটা বিরক্ত হয়েই তাঁকে কার্ড নম্বর জানাবো না বলি। তখনই সে ফোনটি কেটে দেয়। এরপর থানায় গিয়ে ঘটনার অভিযোগ দায়ের করি। এই ঘটনার বিষয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের মেদিনীপুর শাখার এক আধিকারিক জানান, প্রতিটি এটিএম কাউন্টারে গ্রাহকদের সচেতন করার জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের এবিষয়ে আরও সজাগ হতে হবে। এটিএম কার্ড ও পিন নম্বর কখনও ফোনে কারোর থেকে জানতে চাওয়া হয় না। কোনও প্রয়োজন হলে গ্রাহককে ব্যাঙ্কে ডেকে পাঠানো হয়।
ভুয়ো ফোনে সর্বসান্ত হওয়ার নজির মেদিনীপুরে আরও রয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ কেশিয়াড়ির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের কাছেও এরকম ভুয়ো ফোন আসে বলে অভিযোগ। ফোনে সুনীল গুপ্ত নামে এক ব্যক্তি নিজেকে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে ওই শিক্ষককে জানান, আপনি শেষ তিন দিন কোনও ব্যাঙ্ক থেকে লেনদেন করেন নি। তাই আপনার এটিএম কার্ড লক হয়ে গিয়েছে। ওই ব্যক্তি তাঁর কাছে কার্ড নম্বর জানতে চান। তিনি বিশ্বাস করে কার্ড নম্বর জানিয়েও দেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মোবাইলে ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ (ওটিপি) নম্বর আসে। তিনি সেটি ও এটিএম কার্ডের পিন নম্বরও ওই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেন। তারপরই ফোনটা কেটে দেন ওই ভুয়ো ব্যক্তি। ফোন কেটে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই পরপর টাকা তোলার মেসেজ আসতে থাকে। ওই শিক্ষক ফের ওই ভুয়ো ব্যক্তিকে ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। ওই ব্যক্তি তখন জানায়, সিস্টেমের গণ্ডগোলে টাকা ট্রান্সফার হচ্ছে, পরে ফেরত পেয়ে যাবেন। পরের আধ ঘণ্টায় ধাপে ধাপে ওই শিক্ষকের অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ৩২ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার মেসেজ আসে। তখন ওই শিক্ষকের সন্দেহ হয়। তখন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় তিনি অসহায় বোধ করেন। পরে মেদিনীপুর কোতয়ালি থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই শিক্ষক মহাশয় বলেন, “সকালবেলা পড়াশনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাই ভুলবশত এই ঘটনা ঘটে গিয়েছে।”
ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মেদিনীপুর সার্কেল হেড (ডিজিএম) ভিকে কৌশিক বলেন, “এটিএম কার্ড দেওয়ার সময় গ্রাহকদের কার্ড ও পিন নম্বর অন্য কাউকে বলতে নিষেধ করা হয়। গ্রাহকদের আরও সচেতন করার জন্য ব্যাঙ্ক ম্যানেজারদের জানাব। এভাবে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপকেরও অভিযোগ, দিন পনেরো আগে রাহুল শর্মা নামে এক ভুয়ো ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে কার্ড নম্বর জানতে চান। নম্বর জেনে নিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের লিড ডিস্ট্রিক ম্যানেজার সমরেন্দ্র সন্নিগ্রাহি বলেন, “আমার এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।” মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার আইসি বলেন, “গত তিন মাসে এই রকম পাঁচ-ছ’টি ঘটনার অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্তের জন্য স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি)-এর কাছে পাঠানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy