জামতলায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মেদিনীপুর-কেশপুর রাজ্য সড়কে উল্টে গেল বাস। ওই ঘটনায় ৪৯ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আহতদের উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঠিক কী কারনে এই দুর্ঘটনা? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যাত্রীবাহী এই বাসটির আগেই ছিল চাল বোঝাই একটি লরি। বাস ও লরি দু’টিই কেশপুরের দিকে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ মেদিনীপুর কেশপুর রাজ্য সড়কে জামতলায় আচমকাই লরির পিছনের দিকের দু’টি চাকা খুলে যায়। লরির খুলে যাওয়া চাকা এসে চলন্ত বাসের সামনের চাকায় লাগে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি উল্টে যায়।
স্থানীয়দের মতে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি ধান জমিতে গিয়ে পড়ে। ফলে, ঘটনাস্থলে কারও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। যাত্রীদের সকলেই কমবেশি জখম হন। খড়্গপুর- বর্ধমান রুটের এই বাসে করে অনেকেই স্কুলে যান। বাসের অধিকাংশই নিত্যযাত্রী। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অবধেশ পাঠক, ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিএন্ডটি) শ্যামল মণ্ডল, কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী প্রমুখ। আসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। তাঁরা জখমদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের যাত্রী চৌধুরী তোজাম্মেল বলেন, “বাসের আগে একটি লরি ছিল। লরির পিছনের চাকা খুলে যাওয়ার ফলেই এই ঘটনা।” তাঁর কথায়, “যে ভাবে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিল, তাতে আরও বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত। আচমকাই বাসটি উল্টে গিয়ে পাশের ধান জমিতে গিয়ে পড়ে।” এ দিন মেদিনীপুর থেকে এই বাসে ওঠেন তোজাম্মেল। বাসের যে ৪৯ জন যাত্রী জখম হন, তাঁদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ এবং ১১ জন মহিলা।
আহতেরা মেদিনীপুর মেডিক্যালে।
মেদিনীপুর-কেশপুর রাজ্য সড়কটি দুর্ঘটনাপ্রবণ বলেই পরিচিত। বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে বলেই জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর। জেলার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে ৬ ও ৬০ নম্বর জাতীয় সঙ্গে রয়েছে বেশ কয়েকটি রাজ্য সড়ক। পুলিশের এক সূত্রে খবর, বছরে জাতীয় সড়কে গড়ে প্রায় ২৮০টি দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় গড়ে প্রায় ১৫০ জনের। অন্য দিকে, বছরে রাজ্য সড়কে গড়ে প্রায় ১২০টি দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় গড়ে প্রায় ৫৫ জনের। জামতলার বাসিন্দা শেখ নুর আলম, শেখ সাবির হোসেনের বক্তব্য, “অনেক সময়ই দ্রুত গতিতে গাড়ি চলাচলের জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। একাধিক গাড়ির মধ্যে রেষারেষিও চলে। গাড়ি চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে।” অভিযোগ, রাজ্য সড়কগুলোর একাংশ সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো আরও চওড়া করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে।
কেন দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে না? জেলা পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, “ইতিমধ্যে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপও করা হচ্ছে।” পুলিশের একাংশের দাবি, রাস্তার হাল ফিরলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে। পাশাপাশি পুলিশের বক্তব্য, যে সব পথে দুর্ঘটনা ঘটছে তার একাংশ চালকের ভুলেই। লরির চালক-খালাসি দুর্ঘটনার পরই পালিয়ে যায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের চালক-কর্মীও পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের খোঁজ চলছে। লরি ও াসটিকে আটক করা হয়েছে। ঠিক কী কারনে এই দুর্ঘটনা, তদন্তে তার সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্রেন দিয়ে বাসটিকে জমি থেকে তোলা হয়। কিছুক্ষণের জন্য সড়কে যান চলাচলও ব্যাহত হয়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy