প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ব মেদিনীপুরে দু’দিনের সফরে, দিঘার পর শেষ গন্তব্য ছিল শিল্পশহর হলদিয়া। সেই শিল্পশহর হলদিয়া যেখানে বন্ধ হয়ে রয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস, ঝিকুরখালির মানেকসিয়া অ্যালুমিনিয়াম কারখানা। নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজ্যের বিদেশি লগ্নির প্রধান মুখ মিত্সুবিশি। বন্দর ভিত্তিক এই শিল্পাঞ্চল বন্দরেরই নাব্যতা-সহ নানা সমস্যায় ভুগছে। কর্মহীন অনেক শিল্প-শ্রমিক। এমন আবহে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে আশায় বুক বেঁধেছিলেন বন্ধ কারখানার শ্রমিকেরা। কী বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী, উত্সুক ছিল মালিকপক্ষও। কিন্তু, দিনের শেষে তাঁরা কার্যত হতাশ। কেননা শিল্পাঞ্চলের সমস্যা নিয়ে দিশা দেখানো তো দূর, শ্রমিক এবং মালিকের মধ্যে ‘সু-সম্পর্ক’ রাখা ছাড়া মিনিট কুড়ির বক্তব্যে এই বিষয়ে বিশেষ শব্দ ব্যয় করেননি।
মুখ্যমন্ত্রীর থেকে তাঁরা ইতিবাচক কিছু প্রত্যাশা করেছিলেন মানছেন, বন্ধ হয়ে থাকা মানেকসিয়া কারখানার এক স্থায়ী কর্মী। প্রসঙ্গত, এই অ্যালুমিনিয়াম কারখানার কাছেই বুধবার সিইএসসি-র ৬০০ মেগাওয়াটের (৩০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট) তাপবিদুত্ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ তুলে ওই কর্মী বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কারখানার সামনে দিয়ে সিইএসসি-র প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন অথচ মানেকসিয়া খোলা নিয়ে কোনও কথাই বললেন না! গত অক্টোবর মাসের বেতনও পাইনি। সংসার কী ভাবে যে চলছে, আমরাই জানি।”
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যে হলদিয়ায় নতুন টাউনশিপ গড়া থেকে শুরু করে হেলিপ্যাড চালু করা, মিত্সুবিশি কারখানার মালিক-শ্রমিক পক্ষের চুক্তি হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে অভিনন্দন দিলেও শিল্পাঞ্চলের সমস্যা সে ভাবে তাঁর বক্তব্যে উঠে আসেনি। সে প্রসঙ্গ তুলে হলদিয়ার সিপিএম নেতা তথা সিটুর জেলা কমিটির সদস্য শ্যামল মাইতি বলেন, “আমরা আশায় ছিলাম হলদিয়ার বন্ধ হওয়া, ধুঁকতে থাকা শিল্প কারখানা নিয়ে তিনি কিছু বলবেন। কিন্তু, পেট্রোকেমিক্যালস থেকে শুরু করে মানেকসিয়া, কিছুই বললেন না। নাব্যতা সমস্যায় জর্জরিত বন্দর নিয়েও নিশ্চুপ থাকলেন। এতে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ হতাশ!” একই সঙ্গে তিনি সিইএসসি প্রকল্পে জমিহারাদের কাজের সুযোগের দাবি জানান।
হলদিয়ার আইএনটিটিইউসি নেতা আজিজুল রহমান অবশ্য বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী একটি প্রকল্পের উদ্বোধনে এসে সব কিছু নিয়ে কথা বলবেন, তার কোনও মানে নেই। তিনি তো এ দিনও শিল্প কারখানার পরিকাঠামো নিয়ে বলেছেন।” তাঁর দাবি, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকার কারণে এই সময়ে হলদিয়ায় সে ভাবে শিল্প গড়ে ওঠেনি। তিনি আরও বলেন, “এখন হলদিয়ায় কোনও কারখানায় শ্রম দিবসও নষ্ট হয় না।”
এ দিন, হলদিয়ার বানেশ্বরচকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সিইএসসি-র চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওটিয়া, রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, বিদ্যুত্ মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী-সহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। উদ্বোধনের পর সেখান থেকে ‘অম্বুজা গোষ্ঠী’র সিটি সেন্টার দেখতে আসেন সঞ্জীব গোয়েন্কা এবং হর্ষবর্ধন নেওটিয়া।
এ দিকে, মঙ্গলবার দিঘার সৈকতাবাসে রাত্রি যাপন করে বুধবার দুপুর পৌনে একটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে হলদিয়ার উদ্দেশে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সৈকতাবাসের সামনে সাগরপাড়ে ঘোরাঘুরি করলেও এ দিন সকালে রওনা হওয়ার আগে এক বারও সৈকতাবাসের বাইরে আসেননি। সাংসদ, বিধায়ক, দলীয় নেতাদেরও এ দিন সকালে সৈকতাবাসে দেখা যায়নি। মুখ্যসচিব মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দিঘায় না এসে বুধবার সকালে দিঘায় পৌঁছন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy