ছাত্রবৃত্তি পেতে হলে কোনও স্কুলের পড়ুয়া হওয়াটা ন্যূনতম শর্ত। অথচ কোনও বিদ্যালয়ের ছাত্র বা ছাত্রী না-হয়েও মেধাবৃত্তির তালিকায় নাম উঠে গিয়েছে অনেকের।
আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য যৌথ ভাবে বৃত্তি দেয় কেন্দ্র ও রাজ্য। এ-হেন যৌথ প্রকল্পে গরমিল পেয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতর। এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, যে-সব সংখ্যালঘু পড়ুয়ার পারিবারিক আয় বছরে এক লক্ষ টাকার কম, তারা এই বৃত্তির সুযোগ পায়। সাধারণত প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া থেকে গবেষক পর্যন্ত পঠনপাঠনের বিভিন্ন স্তরের প্রার্থীদের এই বৃত্তি দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথ ভাবে প্রতি বছর প্রার্থী-পিছু দু’হাজার থেকে ছ’হাজার টাকা দেয়। এ বছর ওই বৃত্তির জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিডিও-র দফতরে আবেদনপত্র পৌঁছনোর পরে ধরা পড়ে গরমিল।
কী ধরনের গরমিল?
আপাতত গরমিলটা দেখা যাচ্ছে মূলত স্কুল পর্যায়ের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। নিয়ম অনুযায়ী স্কুল স্তরের যারা ওই বৃত্তির জন্য আবেদন করে, তাদের স্কুলপড়ুয়া হতেই হয়। এবং আবেদন করতে হয় সংশ্লিষ্ট স্কুলেই। অথচ দেখা যাচ্ছে, আবেদনের তালিকায় এমন অনেক নাম রয়েছে, যারা কোনও স্কুলেরই পড়ুয়া নয়। তাদের নামের পাশে অবশ্য কোনও না-কোনও স্কুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে!
সম্প্রতি ওই স্কুলগুলি থেকে বিডিও-দের কাছেও তালিকা পাঠানো হয়েছে। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বেশ কিছু প্রার্থীর আবেদনপত্রে কোনও একটা স্কুলের নাম থাকলেও তারা সেই সব স্কুলে আদৌ পড়ে না।
নিয়ম অনুযায়ী কলকাতা ছাড়া গোটা রাজ্যে মেধাবৃত্তির জন্য ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের স্কুলেই আবেদন করে। স্কুল-কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখে পাঠিয়ে দেন স্কুল পরিদর্শকের অফিসে। তার পরে বিডিও অফিস হয়ে তা পৌঁছয় জেলাশাসকের কাছে। প্রথম ধাপে স্কুল এবং পরিদর্শকের কোথাও গাফিলতি ছিল কি না, উঠছে সেই প্রশ্ন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘জেলাশাসকের দফতর থেকে চিঠি পেয়েই তা সব এসআইয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। অবিলম্বে পুরো ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। স্কুল স্তরে ওই বৃত্তি পেতে হলে আবেদনকারীকে কোনও না-কোনও স্কুলের পড়ুয়া হতেই হবে। স্কুলের পড়ুয়া না-হলে কেউ মেধাবৃত্তি পাবে না।’’ স্কুলের ছাত্র বা ছাত্রী না-হয়েও যারা কোনও স্কুলের নাম উল্লেখ করে বৃত্তির জন্য আবেদন করেছে, তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে। এই ধরনের প্রার্থীদের আবেদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির ভূমিকা কী ছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির রাজ্য সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘মেধাবৃত্তি নিয়ে এ ভাবে ভুল তথ্য যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়া উচিত।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy