জাহাজে বসেই সিমকার্ড বিক্রি করেন সহদেব (মাঝে)। — নিজস্ব চিত্র।
কোনও পরিচয়পত্র বা নথি লাগছে না। ২০ ডলারেই বিদেশি নাগরিকদের কাছে বিক্রি হচ্ছে মোবাইলের সিমকার্ড। এই কারবার চলছে হলদিয়া বন্দরের ভিতরে। গোটা ঘটনায় প্রশ্নে আন্তর্জাতিক এই বন্দরের নিরাপত্তা।
বন্দর সূত্রে খবর, এখানকার ১৩টি বার্থে নিয়মিত বিভিন্ন দেশের জাহাজ আসে। চলে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ। ওই সব জাহাজে চিন, ফিলিপিন্স-সহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা কাজ করেন। তাঁরা যাতে সহজে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, সে জন্যই এ দেশের বিভিন্ন মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার সিমকার্ড তাঁদের বিক্রি করা হয়। জানা যাচ্ছে, সহদেব পাত্র নামে মহিষাদলের এক বাসিন্দা এই কারবার চালান।
ব্যবসায়ী পরিচয়ে ফোন করে সিমকার্ড লাগবে বলতেই সহদেব রাজিও হয়ে গেলেন। বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে নেই। তবে একটা দিন সময় দিলে সিমকার্ড হাতে পৌঁছে দেব। এক মাস কোনও রিচার্জ না করেই সিমকার্ড ব্যবহার করা যাবে। সিমকার্ড পিছু ২০ ডলার লাগবে।’’
নিয়মমতো নতুন সিমকার্ড পেতে আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। গ্রাহকের ছবিও লাগে। জানা যাচ্ছে, সহদেব স্থানীয় দোকানদার বা এজেন্টদের মাধ্যমে অন্যদের পরিচয়পত্রের বিনিময়ে সিমকার্ড নিয়ে বিদেশিদের বিক্রি করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের কয়েক জন কর্মচারী জানালেন, সহদেব ইংরেজিতে কথাবার্তায় চোস্ত। চড়েন লাল রংয়ের মোটরবাইকে। বন্দরের ২ এবং ৪ এ, বি বার্থে অবাধে যে কোনও জাহাজে গিয়ে বসেন তিনি। সেখান থেকেই সিমকার্ড বিক্রি করেন। মূলত মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রেখে সহদেব ব্যবসা চালান।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, সহদেব কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট বা হলদিয়া বন্দরের কর্মী নন। তা হলে বহিরাগত হয়েও কী ভাবে এ সব করছেন তিনি? হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার প্রবীণকুমার দাসের জবাব, ‘‘অবিলম্বে ওই ব্যক্তির গেট পাস বাতিল করা হবে।’’ বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের ইন্সপেক্টর চঞ্চলকুমার জানারও বক্তব্য, ‘‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ আর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) মনোরঞ্জন ঘোষের আশ্বাস, ‘‘বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। হলদিয়া শহর তৃণমূল সভাপতি মিলন মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি নেতারা মুখে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বললেও বাস্তবে তা রক্ষা করা হচ্ছে না।’’ হলদিয়া বন্দরের নেতা, ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের রাজ্য সভাপতি প্রদীপকুমার বিজলির অবশ্য দাবি, ‘‘বন্দর কর্তৃপক্ষ সবসময় সজাগ ও সতর্ক রয়েছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’
এ দিন অবশ্য সহদেব সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘১৯৯৯ সাল থেকে বন্দরের ভিতরে একটি টেলিফোন বুথ ছিল। এখন সে সব ব্যবসা উঠে গিয়েছে। যে সব জাহাজের এজেন্ট ফোন করেন, শুধু সেই জাহাজে গিয়ে মোবাইল রিচার্জ করে দিয়ে আসি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy