সতীশ মিশ্র।
মৃত্যু হল টিটাগড়ে গুলিবিদ্ধ যুবক সতীশ মিশ্রের (৩০)। সোমবার রাতে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুলিতে সতীশের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আট ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পরেও গুলি বার করা যায়নি।
সোমবার ঘটনার পরপরই টিটাগড় থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছিল দুই অভিযুক্ত ভোলা প্রসাদ এবং অমরনাথ প্রসাদ ওরফে কালা মুন্নাকে। রাতে ধরা পড়ে শেখ সমীর এবং সঞ্জয় দাস নামে আরও দু’জন। পুলিশ জানিয়েছে, ভোলা এবং মুন্নাকে জেরা করেই সমীর ও সঞ্জয়ের নাম জানা যায়। চার জনের বিরুদ্ধেই খুন এবং অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
খুনের মোটিভ কী?
সে বিষয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কিছু বলতে পারেননি তদন্তকারীরা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) কে কান্নন বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত খুনের মোটিভ স্পষ্ট নয়। তা জানতে ধৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’ এ দিন আদালতে নিয়ে যাওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ভোলাকে আর আদালতে তোলা যায়নি। ব্যারাকপুর আদালত মুন্নাকে সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। সঞ্জয় এবং সমীরের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ঘটনার পরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দুষ্কৃতীরা ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, দাপুটে নেতা মণীশ শুক্লকে খুন করার চেষ্টা করেছিল। এক দিন পরে তামাম টিটাগ়়ড় এবং তৃণমূলের অন্দরে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। মণীশ কি সত্যিই দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য ছিলেন? পুলিশ এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। তবে তদন্তকারীরা এক প্রকার নিশ্চিত, দুষ্কৃতীদের টার্গেট কোনও ভাবেই মণীশ ছিলেন না। তারা সতীশকেই খুন করতে চেয়েছিল।
কিন্তু কেন?
তৃণমূলের দীর্ঘদিনের কর্মী সতীশ এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি চাকরি করতেন টিটাগড় ওয়াগন কারখানায়। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগও নেই। মণীশ জানিয়েছেন, তাঁর প্রায় সমস্ত কাজই দেখতেন সতীশ। তা হলে
শান্ত স্বভাবের সতীশকে বেঘোরে মরতে হল কেন?
এর উত্তর যাঁরা দিতে পারতেন, তাঁরা অর্থাৎ সতীশের বাড়ির সদস্যেরা কার্যত গৃহবন্দি। তাঁর বাড়ির
সামনে পাহারায় রয়েছেন কিছু যুবক। তাঁদের অনুমতি ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার নেই মোচিপাড়ার বিটি রোড লাগোয়া কানা গলির ওই বাড়িতে। মঙ্গলবার সতীশের সেই বাড়ির সামনে সংবাদমাধ্যমকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
তা হলে? পুলিশের কাছে জবাব নেই, বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। খুনের কারণ বলবে কে? মণীশ বলছেন, ‘‘প্রতিবাদী
ছেলে ছিল সতীশ। এলাকায় গুন্ডাগিরি, অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছিল। তাতে অনেকের
ক্ষতি হচ্ছিল। সে জন্যই ওকে সরিয়ে দেওয়া হল।’’
পুলিশের বক্তব্য, ভোলা প্রসাদ ভাড়াটে গুন্ডা লাগিয়ে সতীশকে খুন করিয়েছে। ধৃত সমীর ক্যানিংয়ের বাসিন্দা। সঞ্জয়ের বাড়ি
কামারহাটিতে। তবে দু’জনেই খড়দহে ভাড়া থাকে। দু’জনের বিরুদ্ধে খুচরো অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু খুন বা অন্য বড় অপরাধের রেকর্ড এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।
প্রশ্ন হল, এমন দু’জনকে তা হলে খুনের জন্য ভাড়া করা হল কেন? ভোলার নিজের পরিবহণ এবং পণ্য খালাসের কারবার। তার বিরুদ্ধে বড় কোনও অভিযোগ আগে হয়নি। বড় কোনও সমাজবিরোধী কাজের প্রমাণও পায়নি পুলিশ।
তা হলে কেন খুন? সতীশ কি কারও প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছিলেন? সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy