Advertisement
২৬ মে ২০২৪
jyotipriyo mullick

Jyotipriyo Mullick: খাদ্য নিগমের মাথায় বনমন্ত্রী

সাধারণত খাদ্যমন্ত্রীই ওই নিগমের চেয়ারম্যান হতেন। ২০১২-১৬ পর্যন্ত তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতিপ্রিয়ই ওই নিগমের দায়িত্ব সামলেছিলেন।

বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৪৮
Share: Save:

খাদ্য দফতরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখার দায়িত্বে ‘ফেরানো’ হল প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। সম্প্রতি তাঁকে রাজ্য অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ নিগমের (এসেনশিয়াল কমোডিটিজ় সাপ্লিই কর্পোরেশন) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেছে নবান্ন। এই নিয়োগ ঘিরেই জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে। কারণ, তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিত্ব বন্টনে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ছিল খাদ্য দফতরের মন্ত্রী বদল। কারণ, সেখানে আগের দু’টি দফায় মন্ত্রী থাকা জ্যোতিপ্রিয়কে বন দফতরের মন্ত্রিত্ব দিয়ে রথীন ঘোষকে খাদ্য দফতরের মন্ত্রী করেছিলেন মমতা। সেই সিদ্ধান্তের ছ’মাসের মাথায় জ্যোতিপ্রিয়কেই রাজ্য অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ নিগমের চেয়ারম্যান পদে নিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী।

অতীত উদাহরণ বলছে, সাধারণত খাদ্যমন্ত্রীই ওই নিগমের চেয়ারম্যান হতেন। ২০১২-১৬ পর্যন্ত তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতিপ্রিয়ই ওই নিগমের দায়িত্ব সামলেছিলেন। তার পরে ২০১৬ সালের ভোটের আগে অভিজ্ঞ এক আমলাকে নিগমের চেয়ারম্যান করে রাজ্য। এ বার খাদ্যমন্ত্রী রথীনের বদলে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কেই ওই পদের জন্য বেছে নিল নবান্ন। তবে এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, রথীনবাবু পূর্ণ মন্ত্রী হওয়ায় ক্যাবিনেট মর্যাদা পান। জ্যোতিপ্রিয়বাবুও বন দফতরের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে সমমর্যাদা পান। তিনি খাদ্য দফতরের নিগমের শীর্ষে বসলে ‘মর্যাদার সঙ্ঘাত’ হবে না তো? রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, এই ধরনের নিগমগুলি স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে কাজ করে। তাই মর্যাদার সঙ্ঘাত হতে পারে, এটি ভ্রান্ত ধারণা।

এই নিয়োগ তৃণমূলের ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ তত্ত্বের সঙ্গে মানানসই কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর কোথাও এ রকম বিচিত্র ঘটনা ঘটে না। এক ব্যক্তি এক পদ নীতি ওঁরা আমাদের অনুকরণ করে বলার জন্য বলেন।” তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা, “দিলীপ ঘোষকে নিয়ে যত কম বলা যায়, তত ভাল। উনি আগে দেখুন, নিজের দলে কেন কোন্দল হচ্ছে, কেন লোকজন দল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তার পর তৃণমূল নিয়ে মন্তব্য করুন।”

তবে শাসক মহলের অনেকেই জানাচ্ছেন, পূর্ব দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে নিগম-কর্তা হিসেবে জ্যোতিপ্রিয়ের উপরে আস্থা রাখতে চেয়েছেন মমতা। কারণ, এক দিকে রাজ্যে দুয়ারে রেশন প্রকল্প শুরু হয়েছে। ফলে সে দিক থেকে খাদ্য শস্য সংগ্রহ করার পদ্ধতি ত্রুটিমুক্ত রাখা জরুরি। এই নিগমই প্রধানত খাদ্যশস্য সংগ্রহ, মজুত, সরবরাহ, বন্টনের মতো কাজগুলি করে থাকে।

খাদ্যশস্য সংগ্রহ নিয়ে কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। তাই আগেভাগে নিখুঁত রূপরেখা তৈরি করতে জ্যোতিপ্রিয়কেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের একাংশের দাবি। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “বিগত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। খাদ্য দফতরের খুঁটিনাটি তাঁর নখদর্পণে। তাঁর পক্ষে এই স্পর্শকাতর সময়ে উপযুক্ত পরিকল্পনা তৈরি করা সহজ হবে। সরকারের কাছে পরীক্ষানিরীক্ষার বিশেষ সময় নেই। সম্ভবত সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে এ-ও মনে করছেন, ডিসেম্বরেই কলকাতা এবং হাওড়া পুরসভার ভোট হওয়ার কথা। তার পরে বাকি ১১২টি পুরসভায় ভোট হতে পারে। তাই খাদ্যশস্য সংগ্রহের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে বিতর্ক চাইছে না নবান্ন। নিগম সূত্রের খবর, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে খাদ্যশস্য সংগ্রহের কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেই কাজ কী পদ্ধতিতে হবে, তা স্থির করতে অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন জ্যোতিপ্রিয়। এক নিগম-কর্তার বক্তব্য, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে অনেক কৃষকেরই ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফড়েরা ঢুকে পড়লে সমস্যা বাড়বে। তাই সরকারের লক্ষ্য শুরু থেকে এমন ব্যবস্থা তৈরি করা, যাতে শুধুমাত্র কৃষকেরাই তার সুফল পেতে পারেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jyotipriyo mullick Forest Minister Nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE