দেহের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে অত্যন্ত দক্ষ এই রোগের ভাইরাস। বছরের পর বছর শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বোকা বানিয়ে তারা এই ভাবে থাকতে পারে। অনেক রোগ বহনকারী জানতেও পারেন না। কোনও লক্ষণ তাঁর দেহে ফুটে ওঠে না। কিন্তু নিজের অজান্তেই হয়তো অন্যের ভিতর রোগ ছড়িয়ে যান। অর্থাৎ, তিনি হন ‘বাহক’। এই বাহকও অনেক সময় রোগীতে পরিণত হন, যখন তাঁর দেহে ভাইরাস আক্রমণের লক্ষণ ফুটে উঠে তাঁকে গুরুতর অসুস্থ করে দেয়। তখন তিনি জানতে পারেন যে, আসলে বহু বছর ধরে তিনি নিজে ছিলেন ভাইরাসের আশ্রয়গৃহ।
লুকোচুরি খেলা এই রোগের নাম হেপাটাইটিস। ২৮ জুলাই ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’-এ চিকিৎসকেরা আরও এক বার জোর দিয়েছেন হেপাটাইটিস নিয়ে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো এবং শরীরে এই রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা তা সময়-সময় পরীক্ষা করে দেখে নেওয়ার উপর। গ্যাসট্রোএন্টারোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরির কথায়, ‘‘ভারতের মতো দরিদ্র দেশে সবাইকে নিয়ম করে টাকা খরচ করে কয়েক বছর পর-পর হেপাটাইটাইটিস টেস্ট করতে বলাটা উচিত নয়। তবে যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা অন্তত করিয়ে নিলে ভাল। বিশেষ করে যাঁদের বাড়িতে এই রোগের ইতিহাস রয়েছে বা যাঁদের রক্ত নিতে হয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্যই করা উচিত।’’
চিকিৎসক প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক সৌগত বর্মণদের মতো অনেকের মতে, হেপাটাইটিসের কেরিয়ারদের মধ্যে শতকরা ৫ ভাগেরও কম মানুষ জানেন যে, তাঁদের শরীরে এই ভাইরাস রয়েছে। তিনি কাউকে রক্ত দিলে বা অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের মতো বিভিন্ন পথে ভাইরাস দ্রুত কেরিয়ারের থেকে সুস্থ মানুষে ছড়ায়। চিকিৎসক অতসী মণ্ডলের কথায়, ‘‘এই কারণে অন্যের ব্যবহৃত চিরুনি, ব্রাশ, লিপস্টিকও ব্যবহার করা উচিত নয়।’’ হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস শরীরে ঢুকলে অনেক বছর বা কয়েক দশক পর্যন্ত এর কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। বিশেষ করে হেপাটাইটিস সি’তে সংক্রমিত হওয়ার পর শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষের শরীরে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। ভারতে এই মুহূর্তে এমন অন্তত ৬৬ লক্ষ-১ কোটি মানুষ রয়েছেন যাঁরা জানেনই না যে, তাঁরা হেপাটাইটিস-সির বাহক।
হেপাটাইটি-সি ভাইরাসের কোনও টিকা বার হয়নি। তবে ওষুধ রয়েছে। সময় মতো চিকিৎসা হলে সেরে যায়। কিন্তু বহু মানুষ রোগ টের পেয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন একেবারে শেষ পর্যায়ে। তখন কিছু করার থাকে না। হেপাটাইটিস বি-এর টিকা রয়েছে।।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে জন্মের পরে পরেই নবজাতককে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা। তার পর ১ মাস ও ৬ মাসে আরও দু’টি ডোজ। তা হলে পরবর্তী সময়ে ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে হেপাটাইটিস বি-র টিকাকরণের হার মাত্র ৬৬ শতাংশ। অভিযোগ, টিকার জোগান সব সময় ঠিক থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে নবজাতককে প্রথম ডোজটি হয়তো দেওয়া হল, কিন্তু পরবর্তী দু’টি ডোজ নেওয়ার ব্যাপারে পরিবারের লোকেদের সচেতন করা হয় না। প্রসূতি যদি হেপাটাইটিসের বাহক হন তবে সদ্যোজাতের মধ্যেও ভাইরাস ছড়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy