সপরিবার হিরণ। নিজস্ব চিত্র
পশ্চিম এশিয়ার ইয়েমেনে দীর্ঘ ১০ মাস বন্দি থাকার পরে ঘরে ফিরতেই হিরণ শেখের বাড়িতে ভিড় করছেন পড়শিরা। ইয়েমেন উপকূলের সামুদ্রিক ঝড়ের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কীভাবে সেদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে বন্দি হলেন, হিরণের দিকে সে সব প্রশ্ন ধেয়ে আসছে ভিড়ের মধ্যে থেকে। বন্দি থাকার সময়ের অভিজ্ঞতাও অনেকেই জানতে চাইছেন। মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তালগ্রামে নিজের বাড়ির বারান্দায় বসে আত্মীয় থেকে পড়শিদের সে সবের উত্তর দিচ্ছেন হিরণ।
অন্যদিকে বন্দিদশা কাটিয়ে ঘরে ফিরতেই ছেলের জন্য পাঁচ রকমের তরকারি, মাংস ভাত রান্না করেছেন মা লাভলি বিবি। দীর্ঘদিন পরে পাশে বসিয়ে ছেলেকে খাইয়েছেন লাভলি। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘যে ভাবে বিদেশে ছেলে বন্দি ছিল তাতে ফিরবে বলে ভাবতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত ছেলে ঘরে ফেরায় ভাল লাগছে।’’ ছেলেকে কী ফের কাজে পাঠাবেন? লাভলি বলছেন, ‘‘এখানে তো কোনও কাজ নেই। বাইরে যাওয়ার বিষয়ে ছেলে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।’’ হিরণ অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘গত ৬ বছর নাবিকের কাজ করছি। এই প্রথম আমার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটল। এটা দুর্ঘটনা। ফলে কাজে ফিরতে হবে। ফের জাহাজে চেপে সমুদ্রে ভাসতে হবে। তবে সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে পাসপোর্টসহ সমস্ত নথিপত্র হারিয়ে গিয়েছে। ফলে নতুন করে পাসপোর্ট করতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মুম্বই ফিরেই জাহাজ সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা শীঘ্রই আমাদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেবে বলেছে। কিন্তু এখনও বেতন পাইনি।’’
হিরণ ওমানের একটি সংস্থায় জাহাজের নাবিকের কাজ করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ওমান থেকে সৌদিআরবের উদ্দেশ্যে ওই সংস্থার তিনটি খালি জাহাজ রওনা দেয়। সামুদ্রিক ঝড়ে তার একটি জাহাজ ডুবে যায়। অন্য দুটি জাহাজ দিগ্ভ্রষ্ট হয়ে ইয়েমেনের উপকূলে ভিড়ে। তাঁরা জানতেনও না, ওই এলাকাটি ‘যুদ্ধাঞ্চল’। ইয়েমেনের উপকূলরক্ষী বাহিনী ‘হুতি’ তাঁদের আটক করে। ২০জন নাবিকের মধ্যে হিরণসহ মোট ১৪জন ভারতীয় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় হাইকমিশন, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তার ইয়েমেন থেকে গত ২৮ নভেম্বর মুক্তি দেওয়া হয় তাঁদের। গত ৬ ডিসেম্বর হিরণসহ ১৪ জন ভারতীয় মুম্বই ফেরেন। গত ১০ দিন মুম্বইতে জাহাজ সংস্থার সঙ্গে কথা বলার জন্য হিরণ সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে গ্রামে ফিরেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy