রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে আক্রান্ত মহিলার চিকিৎসা চলছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এক মহিলা পুলিশ। বুধবার। ছবি: সুদেব দাস।
আশঙ্কা, পারিবারিক অশান্তির জেরেই হয়েছে অ্যাসিড বা রাসায়নিক হামলা। বাইকে চড়ে এসে এক তরুণীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে রানাঘাট থানার এক গ্রামীণ এলাকায়। গুরুতর জখম ওই তরুণী বর্তমানে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অ্যাসিড-আক্রমণের ওই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে রানাঘাট পুলিশ। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। অন্য দিকে, আক্রমণকারী যুবকের মুখে মাস্ক থাকায় তাকে চিহ্নিত করতে পারেননি আক্রান্ত তরুণী, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিনের মতোই বুধবার সকাল প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বছর পঁচিশের ওই তরুণী। আক্রান্ত তরুণীর অভিযোগ, সেই সময়েই মোটরবাইক নিয়ে তাঁর পথ আটকে দাঁড়ায় এক যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখে অ্যাসিড বা ওই জাতীয় কিছু ছুড়ে মারে ওই যুবক। তার পর নিমেষের মধ্যে আক্রমণকারী যুবক মোটরবাইকের গতি বাড়িয়ে এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয়।
অন্য দিকে, জখম তরুণীর চিৎকারে ঘটনাস্থলে স্থানীয় মানুষজন জড়ো হয়ে যায়। প্রথমে ওই এলাকারই এক বাসিন্দার বাড়িতে তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে গিয়ে তরুণীর চোখে-মুখে জল দেওয়া হয়। পরে আক্রান্ত তরুণীর শ্বশুরবাড়িতে খবর দেওয়া হলে তাঁর স্বামী এসে তরুণীকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভর্তি করানো হয়।
ওই তরুণীর স্বামী পেশায় চাষি। তিনি এ দিন দাবি করেন পারিবারিক অশান্তির জেরেই ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাঁর অভিযোগ, "দোলের দিন মদ খাওয়া নিয়ে কাকা ও কাকাতো ভাইদের সঙ্গে ওর ঝামেলা হয়েছিল। পরে এলাকার মানুষজন আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে দেয়। তার পর গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওরা আবারও অশান্তি করার জন্য আমার বাড়িতে চড়াও হয়। অশান্তির ভয়ে আমি ওই দিন চুপ করেছিলাম। সেই প্রতিহিংসা থেকেই ওরা আমার স্ত্রীর উপরে অ্যাসিড হামলা করেছে। আমি ওদের শাস্তি চাই।"
এ দিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জখম তরুণী বলেন, "ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরেছিলাম। হঠাৎই পথ আটকে দাঁড়ায় এক যুবক। তাকে চিনতে পারিনি, মুখ মাস্কে ঢাকা ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার মুখে তরল জাতীয় কিছু ছুড়ে মারা হয়। তার পর থেকেই চোখে-মুখে অসহ্য জ্বালা শুরু হয়েছে। চোখ খুলে তাকাতে পর্যন্ত পারছি না!" আক্রান্ত তরুণীর আরও দাবি, "পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই যুবককে ফোনে বলতে শুনেছি, কাজ হয়ে গিয়েছে।"
মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তরুণীর শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তবে অ্যাসিড, না কি অন্য কোনও রাসায়নিক তাঁর মুখে ছুড়ে মারা হয়েছিল, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ওই ঘটনায় মহিলাদের নিরাপত্তা প্রদানে পুলিশি গাফিলতির বিষয়টি আবারও নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, দিনে-দুপুরে এই ভাবে অ্যাসিড বা রাসায়নিক তরল হামলার ঘটনা ঘটল কী ভাবে? এই বিষয়ে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, "ওই মহিলার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy