তৈরি: নতুন বছরের লাড্ডু।
পাড়ার মোড়ে অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার, আটা, সাবান, গুড়, ব্যাটারির আটপৌরে জিনিসপত্রে বোঝাই মুদিখানায় বয়ামগুলোর সামনে দাঁড়ালেই তপন মুদি হাসি মুখে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘প্যাকেট লইয়াস্যান, তো আইজগার দিনে ওইডা ভুলবেন না, কই রে দে একখান...’’
হালখাতার পাঁশুটে গন্ধের গা ঘেঁষে স্তূপ করে রাখা সবুজ প্যাকেট। তাতে খলবল করছে বোঁদের লাড্ডু, দরবেশ, খাস্তা গজা, বালুসাই। বিশ বছর আগের মতোই অবিকল অন্নপূর্ণা ভাণ্ডারে বদল বলতে ডুমো আলোর বদলে টিউব লাইট। তবে আমূল বদলে গিয়েছে প্যাকেটের সেই নড়াচড়ডাগুলো। তপন মুদি কবেই মায়া কাটিয়েছেন। কিন্তু প্যাকেট বিলির সেই রেওয়াজটা এমন শক্তপোক্ত করে গেঁথে দিয়ে গিয়েছেন, যে তাঁর কাটো গেঞ্জির সল্লু-ফ্যান ছেলেরাও পয়লা বোশেখের দিন মন দিয়ে প্যাকেট বিলি করেন। তবে, শক্ত বোঁদের লাড্ডু নয়, তাতে এখন ভেজ প্যাটিস-পনির পকোরা আর কাজু বরফি।
প্যাকেটের পাহাড় জমাতে যে ছেলেগুলো দু পয়সার লবেঞ্জুস কিংবা দশ পয়সার নুন কিনতে ভিড় জমাত দোকানে, হারিয়ে গিয়েছে তারাও। কৃষ্ণনগরের সেই দোকানি বলছেন, ‘‘শ’তিনেক প্যাকেট করেছিলাম খদ্দের কই!’’ প্যাকেটের হাত ধরেই বছরের প্রথম দিনের সংস্কৃতিটাই বদলে গিয়েছে। বহরমপুরের গোরাবাজারের দোকানটায় ভন ভন করছে মাছি। লুহ্গির খুঁটে কপাল মুছে ইলিয়াস আলি বলছেন, ‘‘দাদার(দাদু) আমলে দোকান চালু হয়েছিল। প্যাকেটটা দেওয়া চালু হয়েছিল সেই সময়েই। তখন দোকানের সামনেই বসত ভিয়েন। গরম কচুরি আর লাড্ডু।’’ আর এখন? সেই কচুরিও নেই, দোকানের সামনে সেই প্যকেটের ছুতোয় আঁকাবাঁকা লাইনটাও নেই।
কী আছে তা হলে? ইলিয়াস বলছেন, ‘‘এখন শুধুই চমক-ধমকের সময়। সেই আন্তরিকতা কোথায়!’’
হারিয়ে গিয়েছে কি সব, ধর্ম-রীতি নীতি-সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে ওঠা বচ্ছরের প্রথম দিনটা তো সবাই এক সঙ্গে বোঁদে-গজা-বালুসাইয়ের প্যাকেটে ডুবে থাকত সে হারাল কী করে? চৈত্রের শেষ সকালে ইলিয়াস বুঝি সে কথাই ভাবতে থাকেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy