আজ্ঞে হ্যাঁ, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর, চব্বিশ ঘণ্টার অভিযানে পুলিশ ১২৪ টি মোটরবাইক আটক করেছে। বলাই বাহুল্য, ওই বাইকের চালকদের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।
আর তারপর থেকে নাগাড়ে বেজে চলেছে থানার ল্যান্ডফোন।
‘স্যার, এ বারের মতো ছেড়ে দিন। পরের বার থেকে ও হেলমেট পরেই বাইক চালাবে।’— সবিনয় অনুরোধ স্থানীয় এক অভিভাবকের।
‘মণ্ডলবাবু, ছেড়ে দিন। বাচ্চা ছেলে। বাকিটা আমি সামলে নেব।’— গম্ভীর গলায় প্রভাবশালী নেতা।
কিন্তু পুলিশের সেই এক গোঁ—‘তোমরা আমাকে হেলমেট এনে দেখাও, আমি তোমাদের বাইক ছেড়ে দেব। নো কেস। নো হয়রানি।’
মিছিল হয়েছে। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে এখনও ঝুলছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ হোর্ডিং। দেরিতে হলেও পদক্ষেপ করেছে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। গত কয়েক দিন থেকে জেলার প্রত্যেক পেট্রোল পাম্পে টাঙানো হয়ছে— ‘নো হেলমেট, নো পেট্রল’ পোস্টারও।
তারপরেও যে বেশিরভাগ মোটরবাইক চালকেরা সচেতন হননি, সুতির এই পুলিশ অভিযানেই তা স্পষ্ট। গত দু’দিনের পুলিশি অভিযানে প্রায় ১২৪টি মোটরবাইক আটক করেছে পুলিশ। থানাতেই সারি দিয়ে রাখা হয়েছে সেই আটক বাইক।
থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এত কিছুর পরেও মানুষ কেন যে এই ঝুঁকি নিচ্ছেন তা বুঝতে পারছি না। আইনের থেকেও বড় কথা নিজের জীবন। সেটা নিয়ে এ ভাবে ছেলেখেলা করার কোনও মানে হয়, বলুন তো?’’ ওই আধিকারিকের সংযোজন, ‘‘পুলিশ জানে কী করে সচেতন করতে হয়। কিন্তু এখনই সেই রাস্তায় আমরা হাঁটতে চাইছি না।” পুলিশ সূত্রে খবর, ওই আটক বাইক চালকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হবে। তাঁদের বক্তব্যটাও শোনা হবে। তারপর তাঁদেরও সচেতন করা হবে। প্রয়োজনে কথা বলা হবে মহিলাদের সঙ্গেও। তাঁরাও যদি বাড়ির পুরুষদের এ ব্যাপারে বোঝান তাহলে হেলমেটের এই হতশ্রী চেহারাটা কিন্তু বদলে যাবে।
হেলমেট নিয়ে বাড়ির পুরুষদের সতর্ক করছেন মহিলারা—পড়শি জেলা, নদিয়াতে ইতিমধ্যে এমন ছবি উঠে এসেছে। পেশায় স্কুলশিক্ষিকা, সুতির এক মহিলাও বলছেন, ‘‘পুলিশ কবে বলবে, সেই ভরসায় আমি অন্তত বসে নেই। বহু দিন থেকেই বাড়ির কর্তাকে হেলমেট পরার কথা বলছিলাম। শুনছিল না। এ বার স্পষ্ট বলে দিয়েছি, হেলমেট না পরলে আমি ওর সঙ্গে কোথাও বেরোব না। তারপর থেকেই কর্তাকে দেখছি হেলমেট ছাড়া বাইকে উঠছে না।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘এটাই তো চাই। বাড়ির মহিলারা কত পুরুষের নেশা ছাড়িয়ে দিল। তাঁরা উদ্যোগী হলে হেলমেট পরার অভ্যাসটা তৈরি হবে।’’
তবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, হেলমেট নিয়ে প্রচারে যে একেবারেই সাড়া মেলেনি, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ফোর লেনে প্রতিদিন গড়ে দু’-তিনটি করে বাইক দুর্ঘটনা লেগেই ছিল। গত এক সপ্তাহে বাইক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমেছে। কোনও প্রাণহানিও ঘটেনি। অনেকেই হেলমেট পরছেনও। জেলা পুলিশের ওই কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের লক্ষ্য একশো শতাংশ বাইক চালক ও আরোহীকে হেলমেট পরানো। সেটা করার জন্য যা যা করণীয় তাই করা হবে। এর সঙ্গে কোনও ভাবে আপস করা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy