Advertisement
১৮ মে ২০২৪

সুদূর হল কল্যাণীর দূরশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ছিল এই কোর্সে পঠন-পাঠন চালু রাখার জন্য আবেদন পাঠানোর শেষ দিন।

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

পড়ুয়া বাড়ছিল বছর কয়েক ধরেই। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে দূরশিক্ষার সেই জনপ্রিয় কোর্সের উপরে এ বার প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলে গেল।

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সেই কোর্সের জন্য মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আবেদনই পাঠাল না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ছিল এই কোর্সে পঠন-পাঠন চালু রাখার জন্য আবেদন পাঠানোর শেষ দিন। দূরশিক্ষা বিভাগের কর্তারা শেষ বেলায় অনলাইন আবেদনের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষের নির্দেশে তা পাঠানো গেল না। উপাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, স্থায়া কর্মী না থাকলে এই কোর্স চালানো যায় না বলেই তিনি আবেদন করতে বারণ করেছেন। স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে সময় চাইবে। তা কি আদৌ সম্ভব? প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। পরিকা‌ঠামো যদি মাণদণ্ড হয়, তা হলে সে ব্যবস্থা আগে নেওয়া হয়নি কেন?

শঙ্করবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘দূরশিক্ষা কোর্স চালাতে গেলে নতুন নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ী কর্মী থাকা দরকার। কিন্তু এখানে তা নেই। কমিশনকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোর্স চালানোর পক্ষপাতী নই।’’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চলতি বছরের ২৩ জুন গেজেটে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে বলা হয়, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দূরশিক্ষার কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে। সেই সময়সীমার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত জানিয়ে আবেদন করেনি। পরে মঞ্জুরি কমিশন ওই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ায়। মঙ্গলবার ৩১ অক্টোবর রাত ১০টা পর্যন্ত অফিসে থেকে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের কর্মীরা মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানোর জন্য নথিপত্র তৈরি করেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ মুহূর্তে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে ওই চিঠি পাঠাতে বারণ করা হয়।

তার ফলে সামনের শিক্ষাবর্ষে দূরশিক্ষা বিভাগে পড়ুয়ারা ভর্তি হতে পারবেন না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২৯ জুন ২০১৭ সালে নোটিস জারি করে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, কাগজপত্র জমা দিয়ে নতুন করে অনুমতি না নিলে ২০১৮ সাল থেকে দূরশিক্ষা বিভাগে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের সংশাপত্র বৈধ হবে না।

নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু কলেজে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মোট ৪০টি স্টাডি সেন্টার রয়েছে। বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও শিক্ষাবিজ্ঞানের পড়ুয়ারা দূরবর্তী পদ্ধতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। দূরশিক্ষা বিভাগের একটি সূত্র জানাচ্ছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১৫ হাজার পড়ুয়া স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন। প্রশাসনিক জটিলতায় এই পাঠ্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় চিন্তিত পড়ুয়ারা।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে দূরবর্তী শিক্ষার পাঠক্রম, বইপত্র, দূরশিক্ষার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, আধিকারিক ও সাধারণ কর্মীদের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি পাঠাতে হত। এখানেই শুরু বিতর্কের। তাহলে কী দূরশিক্ষা বিভাগে নিয়োগে কোনও অনিয়ম বা পরিকাঠামো তৈরিতে গাফিলতি রয়েছে? সেই কারণেই কি কর্তৃপক্ষ মজ্ঞুরি কমিশনের অধীনস্থ সংস্থা দূরশিক্ষা ব্যুরোকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাগজপত্র পাঠালেন না? বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে দূরশিক্ষা বিভাগের অধিকর্তা অর্ণবকুমার মাইতির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নিয়ম মতো অধ্যাপক পদমর্যাদার কাউকে অধিকর্তা হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। এক অধ্যাপক জানান, অর্ণববাবু পদমর্যাদার নিরিখে অধ্যাপকের সমতুল নন। তাঁকে অধিকর্তা হিসেবে দেখালে কোর্সের অনুমোদন বাতিল হত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

University of Kalyani Distance education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE