ছাদের দিকে এক বার তাকিয়েই ঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছিলেন পড়শি অলোক মৈত্র। মাথার উপরে ঝুলে পড়েছে কড়ি-বরগা। যে কোন সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে মাথার উপরে। পলেস্তারা খসা দেওয়াল বেয়ে নামছে জলের ধারা।
দেখেই বোঝা যায়, বহু দিন সে ঘর সংস্কার হয়নি। আর হবেই বা কী করে? সেই আর্থিক সামর্থ্যটাই যে নেই আশি বছরের বৃদ্ধা অনিমা গোস্বামীর। পুরসভা বার্ধক্য ভাতা-সহ সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছে। কিন্তু জমির কাগজপত্র ঠিক না থাকায় ঘরের ব্যাপারে তারা কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাহলে কি শেষ পর্যন্ত ঘর চাপা পড়েই মরতে হবে মা-ছেলেকে?
না, সেই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি বৃদ্ধাকে। ঘটনার কথা শুনে এগিয়ে এলেন স্থানীয়েরা। নিজেরাই টাকা তুলে সংস্কার করে দিলেন অনিমাদেবীর ঘর। ক’দিন আগেও যে ছাদ ভেঙে পড়ছিল, সে ছাদ এখন কংক্রিটের। পলেস্তারা খসা দেওয়াল ঝকঝক করছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, ঘরের বয়স প্রায় আড়াইশো।
নতুন ঘরে বসে অনিমাদেবী বলছেন, “যাক বাবা বাঁচলাম! আমার বয়স হয়েছে। কিন্তু ছেলেটার জন্য বড় ভয় করত। আর ভয় নেই, এ বার মেঘ ডাকলেও নিশ্চিন্তে মা-ব্যাটা ঘুমোতে পারব! যাঁরা আমার এত বড় উপকার করল তাঁদের ঋণ আমি কোনও দিন ভুলব না। ওঁরা বেঁচে থাক। ওঁদের সন্তানেরাও দুধেভাতে থাক।’’
কৃষ্ণনগরের আনন্দময়ীতলার কাছে রাজা রোডের উপরে ওই বাড়ি গোস্বামী বাড়ি বলে পরিচিত। এখন একাধিক শরিক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়েছে আর্থিক সঙ্গতি। অনিমাদেবীর স্বামী কৃষ্ণচন্দ্র গোস্বামী ছিলেন পেশায় ফেরিওয়ালা। বছর সাতেক আগে তিনি মারা গিয়েছেন। চার ছেলের এক জন মারা গিয়েছে বছর তিনেক আগে। দুই ছেলে পাশের দুটো ঘরে থাকে। নিজের মতো করে কোনও রকমে তাঁরা সে ঘর সংস্কার করে নিয়েছেন। আর এই ঘরে আর এক ছেলে সমীরকে নিয়ে থাকেন অনিমাদেবী। সমীরবাবু প্রতিমার সাজের কাজ করেন। আয় সামান্য। তাই দিয়েই কোনও মতে কেটে যায় মা-ছেলের সংসার। কিন্তু ঘর সংস্কার করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব ছিল।
সেটা বুঝতে পেরে পড়শিরা পাশে দাঁড়ান। তাঁরাই ঘুরে ঘুরে টাকা জোগাড় করে মিস্ত্রি লাগিয়ে ঘরটা সংস্কার করে দিয়েছেন। রবিবার অনিমাদেবীর হাতে তাঁরা তুলে দিলেন ঘরের চাবি। অন্যতম উদ্যোক্তা কমলকৃষ্ণ ঘোষ বলেন, “বিপদে পড়শির পাশে দাঁড়াতে না পারলে আর কীসের পড়শি? যাঁদের কাছে গিয়েছি সকলেই সাহায্য করেছেন।”
স্থানীয় কাউন্সিলর মলয় দত্ত বলছেন,“সমস্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা ওই পরিবারকে দিয়েছি। কিন্তু জমির কাগজপত্র ঠিক না থাকায় ঘরটা দিতে পারিনি। তবে স্থানীয় লোকজন যা করলেন তা প্রশংসনীয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy