আড়ংঘাটায় ফুটবল মাঠে ছবি দেখানোর পর্দা পড়েছে। নিজস্ব চিত্র
বড় খেলার মাঠে খোলা আকাশের নীচে সাদা পর্দা। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে দর্শকদের বসার জন্য সামনে পেতে দেওয়া হয়েছে চট। যেমন-তেমন প্রদর্শনী নয়। একেবারে ‘প্রিমিয়ার শো’ অর্থাৎ জনসমক্ষে এই প্রথম প্রদর্শন। নদিয়ার ধানতলা থানার এই আড়ংঘাটাই এই ছবির বীজতলা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাই আড়ংঘাটা ফুটবল মাঠেই প্রথম ছবি দেখানোর ব্যবস্থা হল।
প্রায় পুরোপুরি ‘ক্রাউডফান্ডিং’ করে অর্থাৎ বহু মানুষের তিল-তিল করে দেওয়ায় টাকায় তৈরি হয়েছে উজ্জ্বল বসুর ছবি ‘দুধ পিঠের গাছ’। চিত্রগ্রহণ থেকে শুরু করে মুক্তি পর্যন্ত — শুরু থেকে শেষ সবটাই হয়েছে সাধারণ মানুষের টাকায়। গত বছর ২১ ডিসেম্বর আড়ংঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাঠনারায়ণপুর গ্রামে ছবির শুটিং শুরু হয়েছিল। পরে আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, নবদ্বীপ-মায়াপুরের মতো নানা জায়গায় চিত্রগ্রহণ হয়েছে। ছবির চিত্রগ্রাহক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় ৪৫টি শিশু এই ছবিতে রয়েছে। তারা যে ভাবে অভিনয় করেছে, তাতে আমি মুগ্ধ। ওদের দু’একজন বাদে বাকিরা এই প্রথম ক্যামেরার সামনে এল। কিন্তু কেউ ভুলেও এক বারের জন্য ক্যামেরার দিকে তাকায়নি। ক্যামেরা যেন ওদের বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। এর জন্য অবশ্য পরিচালকেরও কৃতিত্ব প্রাপ্য।” শিশুশিল্পী রিয়া দাস, দেবাঞ্জন গণ, রাইমা মজুমদার, বিজন বিশ্বাস, রাজা দে-রা কলকলিয়ে বলে ওঠে, “প্রথমে একটু ভয়-ভয় করছিল ঠিকই। পরে সব ঠিক হয়ে গেল।”
উজ্জ্বল জানান, এক ঘণ্টা ৪৬ মিনিটের এই ছবির জন্য আড়ংঘাটা পঞ্চায়েত এবং আশপাশের এলাকার ৯৩০ জন বাসিন্দা ২২ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিলেন। কলকাতা থেকে ১৯ লক্ষ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। প্রথমে টানা ১০ দিন এবং পরে এক দিন-দু’দিন করে শুটিং এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছবিটি সম্পাদনা করেছেন অনির্বাণ মাইতি, সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন জয় সরকার। বীরভূমের একটি আশ্রম ছবিটির মুক্তির খরচ জুগিয়েছে।ছবিটি দেখানোর খবর দিয়ে আগেই মাইকে প্রচার করা হয়েছিল। বিকেল থেকেই বিভিন্ন গ্রামের দু’চার জন করে আসতে শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাথার ভিড় বেড়ে চলে। সাঁঝ ঘনালে পর্দায় ফুটে ওঠে ছবি। টানা পৌনে দু’ঘণ্টা ছবি দেখে হাসি মুখে এলাকার বাসিন্দা রাজর্ষি ঘোষ বলেন, “কলকাতা শহরে আগে যা দেখানো হয়ে যায়, পরে তা আমরা গাঁয়ে দেখি। এ বার উল্টো হল। আমরাই প্রথম দেখে নিলাম।” উজ্জ্বল বলেন, “আমি চেয়েছিলাম, সাধারণ মানুষ এই ছবির প্রযোজক হোন। এই পথেই আমরা বাংলা ছবির দর্শক তৈরি করতে চাইছি। যাঁদের ছাড়া এই ছবি হত না, তাঁদের দেখিয়েই শুরু করলাম। বুধবার কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে ছবির মুক্তি। এ রাজ্য ছাড়াও অন্য রাজ্যে ছবি মুক্তির ব্যবস্থা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy