চাষের জমি, বসত ভিটা চলে গিয়েছে নদীর গ্রাসে। নিজস্ব চিত্র
নদীর সঙ্গে এ এক আশ্চর্য সম্পর্ক শিবপুর গ্রামের। শমসেরগঞ্জের নতুন শিবপুর গ্রামের হরিপদ মণ্ডল বলছেন, এই নিয়ে আট বার গঙ্গার ভাঙনের মুখে পড়তে হল তাঁর পরিবারকে। প্রায় ১০০ বছর আগে তাঁদের বাড়ি ছিল মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার পার অনন্তপুর গ্রামে। দাদু ঈশ্বর মণ্ডল সেখানেই বসতি গড়েছিলেন। শিবপুরের সব পরিবারই সেখানকার আদি বাসিন্দা। মাটির বাড়ি, টিনের চালা। পার অনন্তপুরে প্রথম নদী ভাঙনে ঘর যায় ১৯১৯/২০ সালে। নদী থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার সরে বসতি গড়েন সেখানকার গ্রাম শিবপুরে। বছর দশেকের মধ্যেই আবারও দু’দু’বার ভাঙনের মুখে সব কিছু হারাতে হয়। নদী পাড়ে বাড়ি। ভাঙন ছিল বলে কখনও পাকা বাড়ি বানানোর রেওয়াজ ছিল না। তবে যেখানেই বসতি গড়েছে গ্রামের নাম আর বদলায়নি কখনও। ভাঙনে পড়লেও নদীর পাড় ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেলে এই দুর্ভোগ হয়ত পোহাতে হত না। প্রশ্নটা বাবাকে করেছিলেন হরিপদ। তাঁর বাবা বলেছিলেন, নদীর চরের উর্বরা জমিতে চাষ ভাল হয়। সেই ফসলের মায়াতেই কখনও নদী পাড় ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি। মাছ ধরাও পেশা হয়ে উঠেছিল অনেকেরই। পর পর ৭ বার নদী ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে। নদী যেমন যেমন পিছিয়েছে, বাবাও তেমনই পিছিয়ে কখনও নদীর ডানে বসতি গড়ে তুলেছেন,কখনও বামে। গ্রামের নাম বদলায়নি কখনও। নদীর থেকে দূরেও যাননি তাঁরা।
শমসেরগঞ্জের ধুসরিপাড়া গ্রামেও শুক্রবার ও শনিবারে ভাঙনের পরে রবিবার সকালে গ্রামটিকে দেখে মনে হয় যেন বোমা নিক্ষেপ করে গ্রাম ধ্বংস করে চলে গিয়েছে কেউ। গোটা গ্রামে ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কোথাও গঙ্গায় ঝুলে আছে প্রাচীর। নিমতিতার বৃদ্ধ সুধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘গ্রামের পর গ্রাম শুধু হাহাকার। একমুঠো ভাতের জন্য মার আঁচল ধরে শিশু কাঁদছে, মা ঘরের ঘরের চালের টিন ধরে কাঁদছে। কী জানি কী হবে।’’ ধুসরিপাড়ার ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষদের সাময়িক আশ্রয় নিমতিতা হাইস্কুল। সেখানে ২২টি পরিবার থাকছেন। দাবি, নেই পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা। প্রশাসন জানিয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy