Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

কদর কমেছে বাজারে, মাঠেই শুকোচ্ছে পাট

ডোমকলের হিতানপুরের রিয়াজুল ইসলাম ঝাঁঝিয়ে উঠছেন, ‘‘বলি, পাটের দাম কত জানেন? এমনিতেই এই পাট চাষ করতে বিস্তর টাকা খরচ হয়েছে।

জমিতেই পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে পাট। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

জমিতেই পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে পাট। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৮
Share: Save:

দুর্গাপুজো, কোজাগরী পর্ব চুকিয়ে চলছে কালীপুজোর প্রস্তুতি। অথচ নদিয়া, মুর্শিদাবাদ কিংবা বর্ধমানের বহু জমিতে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে পাট। কেন?

ডোমকলের হিতানপুরের রিয়াজুল ইসলাম ঝাঁঝিয়ে উঠছেন, ‘‘বলি, পাটের দাম কত জানেন? এমনিতেই এই পাট চাষ করতে বিস্তর টাকা খরচ হয়েছে। এখন তা কেটে, জাঁক দিয়ে, শুকিয়ে ঘরে তুলতে আরও খরচ হবে। তার থেকে পাট জমিতেই পড়ে থাক!’’

ডোমকলের সাজাহান মণ্ডল আবার পাঁচ বিঘা জমির পাট গরু-ছাগলকে দিয়ে খাইয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “ঢের হয়েছে মশাই! ওই পাট কেটে ঘরে তোলার থেকে অবলা জীবগুলোকে খাইয়ে দেওয়াই ভাল।” করিমপুরের চামনার চাষি সপ্তম মণ্ডলও বিপাকে পড়েছেন। কী করণীয় তিনি এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না। খেতের পাট খেতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।

হোগলবেড়িয়ার চাষি শঙ্কর মণ্ডল জানাচ্ছেন, বিঘা প্রতি তিন কুইন্টাল পাট হয়েছে। বীজ, সার, সেচ, মজুরি-সহ সব খরচ মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় দশ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে কমপক্ষে পাটের দাম কুইন্টাল প্রতি ৩৬০০ টাকা হলেও কিছুটা লাভ থাকত। অথচ বাজারে পাটের দাম ২৫০০ থেকে ৩২০০ টাকার মধ্যে। শঙ্করবাবুর প্রশ্ন, ‘‘এর পরেও চাষি কোন ভরসায় জমি থেকে পাট কেটে পচাবে বলতে পারেন?’’

এ বারে বর্ষার শুরু থেকেই নিয়মিত ব্যবধানে কমবেশি বৃষ্টি গোটা রাজ্য জুড়েই হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির জেরে ধান-সহ প্রায় সব ধরনের ফসলে ক্ষতি হলেও পাটের ভাল ফলন হয়েছে। কিন্তু পাটের বাজার প্রথম থেকেই ছিল নিম্নমুখী। দুর্গাপুজো বা ইদের সময় চাষিরা পাট থেকে তেমন লাভের কড়ি ঘরে তুলতে পারেননি। ফলে শুরু থেকেই পাটের দর নিয়ে অখুশি ছিলেন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের পাটচাষিরা।

চাষিরা জানাচ্ছেন, গত মে মাসে বোনা বেশির ভাগ পাট অগস্ট-সেপ্টেম্বরে কাটা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন যা পাটের দাম তাতে আরও খরচ করে পাট না কাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তার থেকে পাট খেতেই থাকুক। কিছু দিন পরে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।

নদিয়া-মুর্শিদাবাদের অন্যতম অর্থকরী ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে চাষিরা যে পাট চাষে উৎসাহ হারাচ্ছেন তা মানছেন বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উৎসাহ হারাচ্ছেন চাষি। কমে আসছে পাট চাষের এলাকাও।’’

কৃষি কর্তাদের দাবি, মুর্শিদাবাদে গত বছর ১ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। এবারে পাট চাষ হয়েছে ১ লক্ষ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। নদিয়া জেলাতে গত বছর প্রায় ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। এ বারেও কমবেশি প্রায় একই পরিমাণ জমিতে পাট চাষ হয়েছে।

কিন্তু পাটের ন্যায্য দাম মিলছে না কেন?

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Jute Market পাট
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE