Advertisement
২১ মে ২০২৪

বিপাকে শ্রমিক, এজেন্ট বেপাত্তা

সৌদি আরব থেকে কী ভাবে যে বেঁচে ফিরেছেন, তা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠেন মুর্শিদাবাদের নবীপুরের পাঁচ জনের। আর পাঁচ জনের মতোই তাঁরা দু’পয়সা রোজগারের জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৮
Share: Save:

শোক বড় সংক্রামক!

মঙ্গলবার মহখোলায় এসে পৌঁছল কফিনবন্দি সমর টিকাদারের দেহ। বাড়িতে কান্নার রোল। ভারী হয়ে আছে গাঁয়ের বাতাস। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চোখ মোছেন সাধন বিশ্বাসের স্ত্রী নীলিমা বিশ্বাস। সাধন এখন কাতারে। সোমবার রাতেও ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু গাঁয়ে কফিনবন্দি সমরের দেহ ঢুকতেই তাঁর মনটা যেন ডুকরে ওঠে। নীলিমা বলছেন, “এখন মনে হচ্ছে, মানুষটা ফিরে এলেই বুঝি ভাল হয়।”

নীলিমা একা নন, গোটা মহখোলাও তাই চাইছে। ইরাকের ঘটনার পরে রীতিমতো আতঙ্কে সীমান্ত ঘেঁষা মহখোলা। এ গ্রামের ৮০ শতাংশ পুরুষ কর্মসূত্রে ভিনদেশে থাকেন। বৃদ্ধ সমীর বিশ্বাসের দুই ছেলে দুবাই আর ওমানে আছে। ফোনে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত কথাও হয়। সমীর বলছেন, ‘‘এরপরে আর ভরসা পাচ্ছি না। ঢের হয়েছে, এ বার ছেলেদের দেশে চলে আসার কথা বলব। না হয় অভাব আরও একটু বাড়বে। কিন্তু এত ভয় আর দুশ্চিন্তা নিয়ে কি বেঁচে থাকা যায়?’’

সৌদি আরব থেকে কী ভাবে যে বেঁচে ফিরেছেন, তা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠেন মুর্শিদাবাদের নবীপুরের পাঁচ জনের। আর পাঁচ জনের মতোই তাঁরা দু’পয়সা রোজগারের জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। যোগাযোগ করেছিলেন এক এজেন্টের সঙ্গে। মাথা পিছু দু’লক্ষ টাকা করে নিয়েছিল সেই এজেন্ট। ধার-দেনা করে পাঁচ জন দশ লক্ষ টাকা জোগাড়ও করেছিলেন।

তার পরে এক দিন তাঁরা সৌদি আরবেও যান। কিন্তু সেখানে পা রাখতেই বিপত্তি। ওই পাঁচ জন জানতে পারেন, তাঁরা ঠকে গিয়েছেন। এজেন্ট তাঁদের ট্যুরিস্ট ভিসা করিয়ে দিয়েছে। তাতে বেশি দিন সে দেশে থাকা যাবে না। এ দিকে, ওই এজেন্টের সঙ্গেও তাঁরা আর যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।

ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, সেখানেই এক সহৃদয় ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি তাঁদের কিছু দিন থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেখান থেকেই বাড়িতে ফোন করে সব জানান। এ দিকে ফিরতেও বিস্তর টাকা লাগবে। সে টাকাই বা আসবে কোথা থেকে? ভুক্তভোগীদের এক জন আতর আলি মোল্লা বলছেন, ‘‘বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়লে যে কী হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। বাড়ির লোকজন ফের ধার করেন। গ্রামের লোকজনও চাঁদা তুলে আমাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করে।’’ ফিরে এসে সেই এজেন্টের বিরুদ্ধেও থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু সে তত দিনে হাওয়া।

বিদেশে যাঁরা এখনও নির্বিঘ্নে কাজ করছেন, তাঁরা বলছেন, ‘‘এজেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজেন্ট বিশ্বস্ত না হলে বিপদ অনিবার্য।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant workers Overseas Agents Deaths
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE