হনুমানের খোঁজে।— নিজস্ব চিত্র
আর পাঁচটা দিনের মতো বাড়ির উঠোনে বসে বাসন মাজছিলেন অলকা সরকার। আচমকা পিছনে আওয়াজ। আমল দেননি প্রৌঢ়া। পাশের বাড়ির বছর পাঁচেকের ছেলেটি মাঝে মধ্যেই এমন ভয় দেখায়।
মুহূর্ত মাত্র। কিছু বোঝার আগেই তার উপরে হামলে পড়ে। না, পড়শি দামাল নয়। বিস্ময়ে দেখেন, এ তো সাক্ষাৎ পবনপুত্র। পালানোর সুযোগটুকু পাননি তিনি। তার আগেই তাঁকে আঁচড়ে-কামড়ে পালায় পূর্ণ বয়স্ক হনুমানটি।
সোমবার থেকে এই হনুমানের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন বহরমপুর লাগোয়া ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ের টিকিয়াপাড়ার কয়েক হাজার বাসিন্দা। সোমবারই বন দফতরকে জানানো হলেও, মঙ্গলবার বিকেলে দফতরের কর্মীরা যান হনুমানকে বাগে আনতে।
কার্যত লুকোচুরি খেলে বনকর্মীদেরই নাকানি চোবানি খাইয়ে ছাড়ে সেই হনুমান। সন্ধ্যা নামায় হাল ছেড়ে ফিরে যান তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার এলাকার সাতজনকে জখম করেছিল হনুমানটি। মঙ্গলবার এলাকার বাসিন্দারা ডিফেন্স জমাট করে লড়াইয়ে নেমেছিল। রক্ষা মেলেনি তাতেও। এ দিনও দু’জনকে ঘায়েল করেছে সে।
বনদফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল থেকে টিকিয়াপাড়া গ্রামে হনুমানটিকে দেখা যায়। প্রথম থেকেই সে ছিল আক্রমণাত্মক। খাবার-দাবার ছিনিয়ে নেওয়া বা এই ধরনের কাজ কর্মে তার বিশেষ মতি নেই। বরং গেরিলা কায়দায় আচমকা হামলা করে সরে পড়ায় তার স্ট্র্যাটেজি।
জখম ন’জনকেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও। মাঝবয়সী রণবীর সিংহের ছ’টি সেলাই পড়েছে।
মাস পাঁচেক আগে এক হনুমানের তাণ্ডবে বহরমপুরের কাশিমবাজার এলাকার বাসিন্দারা হনুমানের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। বনকর্মীদের বিস্তর ঘোল খাইয়ে শেষ পর্যন্ত ঘুমপাড়ানি গুলিতে ঘায়েল হয়েছিল সে।
এলাকার বাসিন্দা রহমত শেখ জানালেন, সোমবার হনুমানটি যে ভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে সবার ঘুম ছুটে গিয়েছে। যখন তখন সে ঘরে-বাইরে যাকে ইচ্ছা আক্রমণ করছে।
মঙ্গলবার এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য নতুন কৌশল নিয়েছিলেন।
এলাকার এক বৃদ্ধ জানালেন, এ দিন ছেলে ছোকড়ার দল সকাল থেকেই বাজি ফাটিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করে। তাতে হিতে বিপরীত হয়। সে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। কখনও সে গাছের ডালে লুকিয়ে পড়ে।
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হনুমান দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল এক কিশোর। আচমকা তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে পায়ে কামড়ে দেয় হনুমান। আতঙ্কে ছেলে-মেয়েদের আর এ দিন স্কুলে পাঠাননি অভিভাবকেরা।
এর পরেই গ্রামের বাসিন্দারা বন দফতরের অফিসে হাজির হন। বিকেলের দিকে জনা পাঁচেক কর্মী সেখানে আসেন। গাছের ডালে বসে থাকা হনুমানকে তাক করে গুলিও ছোড়া হয়। ফসকায় সে গুলি। তার পর আর তাকে দেখা যায়নি।
বনদফতরের বহরমপুর রেঞ্জ অফিসার অমিতাভ পাল বলেন, ‘‘সন্ধ্যা নামায় কর্মীরা ফিরে এসেছেন। বুধবার ফের ওই এলাকায় গিয়ে হনুমানটিকে বাগে আনার চেষ্টা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy