Advertisement
১৯ মে ২০২৪

‘সময়ের কাজ সময়ে করি, এসো নতুন বাংলা গড়ি’ নতুন স্লোগান মুর্শিদাবাদে

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘আগের থেকে পরিষেবা দেওয়ার গতি অনেকটাই বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন অনুযায়ী পরিষেবা দেওয়াও হচ্ছে। তবে ওই আইন অনুযায়ী যাতে সমস্ত পরিষেবা দেওয়া হয় সেই জন্যই এই উদ্যোগ।’’

বহরমপুরে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ভিড়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বহরমপুরে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ভিড়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

এত দিন আইন ছিল খাতা কলমে। লোকজনও সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতেন না। সরকারি অফিসে দিনের পর দিন ঘুরে হয়রান হয়েছেন অথচ পরিষেবা পাননি, এমন ভূরিভূরি নজির রয়েছে। এ বারে সেই হয়রানি কমাতে, ‘সময়ের কাজ সময়ে করি, এস নতুন বাংলা গড়ি’ স্লোগান তুলে ‘পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইনকে’ কাজে লাগাতে মাঠে নেমেছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন।

পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন অনুযায়ী, সরকারি পরিষেবা এবং পরিষেবা দেওয়ার সময়সীমাকে বেঁধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি ‘ফোল্ডার’ তৈরি করা হয়েছে। ওই ‘ফোল্ডার’ যেমন প্রশাসনের আধিকারিকেদের দেওয়া হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিলি করা হবে।

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘আগের থেকে পরিষেবা দেওয়ার গতি অনেকটাই বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন অনুযায়ী পরিষেবা দেওয়াও হচ্ছে। তবে ওই আইন অনুযায়ী যাতে সমস্ত পরিষেবা দেওয়া হয় সেই জন্যই এই উদ্যোগ।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ওই আইন অনুযায়ী পরিষেবা না দিলে অভিযুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকদের যেমন সচেতন করা হয়েছে, তেমনি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও ফোল্ডার তৈরি করে জেলা জুড়ে বাসিন্দাদের মধ্যে বিলি করে সচেতন করা হবে।

২০১৩ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন’ পাশ হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী পরিষেবা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দিষ্ট সময়ে পরিষেবা দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের আর্থিক জরিমানাও হতে পারে। ওই আধিকারিকের বেতন থেকে সেই জরিমানা মেটানোর নির্দেশ রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কোনও কোনও অফিস চত্বরে ওই আইনের বিষয়ে বড় বড় হোর্ডিং দেওয়া থাকলেও বহু লোকজন সে দিকে ঘুরেও তাকান না। ফলে আইন সম্পর্কে লোকজন অন্ধকারেই থাকেন।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা কবুল করছেন, ‘‘সাধারণ মানুষ কেন, অনেক সরকারি আধিকারিকও এই আইন সম্পর্কে জানেন না। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় এমন চিত্রও উঠে এসেছে।’’

খড়গ্রামের শঙ্খপুরের শাকিল আহমেদ পাঁচ মাস আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। সোমবার শাকিল ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন। অথচ পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন অনুযায়ী সাতটি কর্মদিবসের মধ্যেই তাঁর এই লাইসেন্স পাওয়ার কথা। শাকিল বলছেন, ‘‘এত আইন-কানুন জানি না। আবেদন করার পর প্রায় পাঁচ মাস পরে লাইসেন্স হাতে পেলাম।’’

মদনপুরের নেহেরুদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘আমাদের তো হয়রান হতেই হয়। ভূমি সংস্কার দফতরে মিউটেশন থেকে শুরু অন্য নথিপত্র তুলতে গিয়েও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। খাতায়-কলমে নয়, কাজ হোক চটজলদি। তা হলেই বহু মানুষের উপকার হবে।’’ তবে পশ্চিমবঙ্গ জন অধিকার আইন অনুযায়ী, যে সময়ের মধ্যে পরিষেবা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানা হয় না বলেও অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, যে পরিষেবা, যে সময়ের মধ্যে দিতে বলা হচ্ছে, তার জন্য জরুরি উপযুক্ত পরিকাঠামো। তা না হলে আইন খাতা কলমেই থেকে যাবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Slogan District Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE