Advertisement
১৬ মে ২০২৪
অন্ত্যেষ্টি অন্তে

চুল্লি অকেজো, গঙ্গাদূষণ বাড়িয়ে দাহ হচ্ছে কাঠেই

জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা পরিচালিত শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি বন্ধ হয়ে রয়েছে মাস দুয়েক হল। তারও এক মাস আগে থেকে (অর্থাৎ ৩ মাস ধরে) ধুলিয়ান পুরসভা পরিচালিত শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি বন্ধ হয়ে রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০২:৩৪
Share: Save:

জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা পরিচালিত শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি বন্ধ হয়ে রয়েছে মাস দুয়েক হল। তারও এক মাস আগে থেকে (অর্থাৎ ৩ মাস ধরে) ধুলিয়ান পুরসভা পরিচালিত শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে গঙ্গাপাড়ে সাবেক প্রথায় কাঠ দিয়ে দাহ করা হচ্ছে মৃতদেহ। আর তার জেরেই গঙ্গাদূষণ রোধের জন্য ঘটা করে কেন্দ্র সরকারের চালু করা ‘নমামি গঙ্গা’ প্রকল্প হেলায় উড়িয়ে দূষণ ছড়াচ্ছে। অচল চুল্লি দু’টি কবে মেরামত করা হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছে না দু’টি পুরসভা।

পুরসভাগুলিকে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য বাম জমানায় রাজ্য ও জেলাস্তরে গড়া হয়েছে ‘পুর কারিগরি বিভাগ’। বামফ্রন্ট পরিচালিত জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের পুরপ্রধান শঙ্কর মণ্ডল ও তৃণমূল পরিচালিত ধুলিয়ানের পুরপ্রধান সুবল সাহা— দু’জনেই এ ব্যাপারে পৃথক ভাবে একই কথা বলেন। তাঁরা বলেন, ‘‘পুরসভার নিজস্ব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়র নেই। রাখার সামর্থ্যও নেই। তাই প্রয়োজনের সময় সেই অভাবটা পূরণ করার জন্য ‘পুর কারিগরি বিভাগ’-এর জন্ম। কিন্তু সেখান থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ায় বৈদ্যুতিক চুল্লি মেরামতির কাজে দেরি হচ্ছে।’’

ওই অভিযোগের কথা শোনা মাত্র মুর্শিদাবাদ জেলা ‘পুর কারিগরি বিভাগ’-এর প্রধান কর্তা, তথা এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র গৌরহরি বেরা বলেন, ‘‘আমি দেখছি। এ নিয়ে পরে কথা হবে।’’ এ কথা বলেই তিনি তড়িঘড়ি ফোন রেখে দেন।

মুর্শিদাবাদ জেলার মোট পুরসভার সংখ্যা ৭। তার মধ্যে কান্দি ও বেলডাঙার অবস্থান গঙ্গাপাড় থেকে দূরবর্তী এলাকায়। বাকি ৫টি পুরসভা— ধুলিয়ান, জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরের অবস্থান গঙ্গাপাড়েই। ওই ৫টির মধ্যে মুর্শিদাবাদ (লালবাগ) বাদে ৪টি পুরসভার শ্মশানে বৈদ্যুতিন চুল্লি রয়েছে। ওই ৪টির মধ্যে জিয়া্গঞ্জ-আজিমগঞ্জ ও ধুলিয়ানের বৈদ্যুতিক চুল্লি দু’টি কয়েক মাস ধরে অচল। পুরপ্রধান শঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘মেরামত করতে প্রচুর টাকা লাগবে। সেই টাকা যোগান দেওয়া আমাদের মতো ছোট পুরসভার পক্ষ সম্ভব নয়। কোনও মতে সেই টাকা জোগাড় করা হলেও কারিগরি সহায়তা সহজলভ্য নয়। মেরামতির উপকরণও তাই।’’

সেই সহযোগিতা চেয়ে রাজ্য ও জেলাস্তরের পুর কারিগরি বিভাগে আবেদন জানিয়েও কোনও সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছিন শঙ্করবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বৈদ্যুতিক চুল্লি বন্ধ থাকায় দিনে ১০-১২টি দেহ কাঠের চুল্লিতে পোড়াতে হয়েছে। তাতে বায়ু দূষণ হচ্ছে।’’ শুধু তা-ই নয়। শঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘আধপোড়া দেহ ফেলে দেওয়া হচ্ছে নদীতে। তাই গঙ্গা দূষণমুক্ত রাখার প্রকল্প থেকে আরও একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি চাওয়া হয়েছে। যাতে একটি খারাপ হলে মেরামত না করা পর্যন্ত দ্বিতীয় চুল্লি চালু রাখা যায়।’’

ধুলিয়ানের পুরপ্রধান সুবল সাহা বলেন, ‘‘মেরামতির জন্য ইঞ্জিনিয়র ও কয়েল জোগাড় করতে আমি পাগল হয়ে গেলাম। গত ৮ মাসে ৩ বার খারাপ হল। প্রথম দু’বারে সারাতে খরচ হয়েছে মোট ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। তৃতীয় বার সারাতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা চেয়েছে। টাকা না হয় দিলাম, কিন্তু কয়েল জোগাড় করতেই তো পাগল হয়ে গেলাম। কয়েলের খোঁজ মিলেছে। দ্রুত সারানো হবে।’’

জঙ্গিপুর ও বহরমপুরের বৈদ্যুতিক চুল্লি দু’টি জিয়াগঞ্জ ও ধুলিয়ানের মতো ঘন ঘন বিকল হয় না। জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা তুলনায় ভাগ্যবান। তাই অন্য পুরসভার মতো আমাদের চুল্লি ঘন ঘন খারাপ হয় না।’’ বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, ‘‘গঙ্গাদূষণ মুক্ত রাখতে কেন্দ্রের ‘নমামি গঙ্গা’ প্রকল্প থেকে বহরমপুর শহরের দু’টি শ্মশানের জন্য আরও দুটি চুল্লি চাওয়া হয়েছে।’’ মুর্শিদাবাদের পুরপ্রধান কংগ্রেসের বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গঙ্গাদূষণ ও বায়ুদূষণ রুখতে এই পুরসভার গঙ্গাপাড়ের শ্মশানের জন্য বৈদ্যুতিন চুল্লি চেয়ে গণস্মারকলিপি-সহ পুরসভার পক্ষ থেকে রাজ্যের কাছে আবেদন করা হয়েছে গত বছরের জুন মাসে। বছর ঘুরতে চললেও কোনও সাড়া মেলেনি।’’ কান্দি থেকে থেকে বহরমপুর ও সাটুই-এর দূরত্ব যথাক্রমে ৩০ ও ১৭ কিলোমিটার। কান্দি বিধায়ক, তথা সদ্য প্রাক্তন পুরপ্রধান অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘এই পুরসভার মানুষ ধর্মীয় কারণে গঙ্গাপাড়ে বহরমপুরের শ্মশানে অথবা সাটুই-এ গঙ্গাতীরে শবদাহ করেন। তাই কান্দিতে কোনও শ্মশান নেই। বৈদ্যুতিন চুল্লিরও প্রয়োজন নেই।’’ বেলডাঙার পুরপ্রধান কংগ্রেসের ভরত ঝাওর বলেন, ‘‘এখানের মানুষ সৎকারের প্রয়োজনে বহরমপুর, নয়তো ৩ কিলোমিটার দূরে সুজাপুর পঞ্চায়েতের কুমোরপুরে গঙ্গাতীরের শ্মশান ব্যবহার করেন। কিন্তু সেখানে কাঠের আগুনে দাহ করা হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কুমোরপুরে গঙ্গাতীরের শ্মশানটি বেলডাঙা পুরসভা পরিচালনা করে চায়। এ কথা জানিয়েছি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতীকে। পুরসভার প্রস্তাবিত শ্মশানের জন্য একটি বৈদ্যুতিক চুল্লির আবেদনও করেছি তাঁকে। শ্মশানটি হস্তান্তরের জন্য সুজাপুর পঞ্চায়েতের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Furnace wood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE