Advertisement
০৩ মে ২০২৪
‘নার্সিংহোমে নিয়ে যান’

মৃত্যু রোগীর, উধাও ডাক্তার

জেলা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। রোগীকে ভর্তি করতে হবে নার্সিংহোমে। তিনি নিজে হাতেই অস্ত্রোপচার করবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

জেলা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। রোগীকে ভর্তি করতে হবে নার্সিংহোমে। তিনি নিজে হাতেই অস্ত্রোপচার করবেন।

এমনটাই নাকি রোগীর বাড়ির লোকেদের জানিয়েছেন শক্তিনগর হাসপাতালের অস্থি শল্যচিকিৎসক শঙ্কর রায়। বলে দিয়েছিলেন নির্দিষ্ট নার্সিংহোমের নামও। সেখানে দু’বার অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর অবস্থার আরও অবনতি হলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কৃষ্ণনগরেরই এক বেসরকারি হাসপাতালে। পরে মৃত্যু হয় জিয়ারুল মণ্ডল (৩৮) নামে ওই রোগীর। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে বুধবার লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে তাঁর পরিবার।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, জিয়ারুলের বাড়ি থানারপাড়ার গমাখালি এলাকায়। গত ২৪ মার্চ বর্ধমান থেকে লরিতে করে চাল নিয়ে আসার সময়ে দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। নবদ্বীপে গৌরাঙ্গ সেতুর কাছে উল্টো দিক থেকে আসা পাট বোঝাই লরির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে তাঁদের লরির। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শঙ্কর রায়ের তত্ত্বাবধানে।

মৃতের ভাই ফিরদৌস মণ্ডলের অভ‌িযোগ, “যে দিন দাদাকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল, সেই রাতেই শঙ্কর রায় জানিয়ে দেন, ওখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়। আমরা যেন তাঁকে নির্দিষ্ট একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করি। বাধ্য হয়ে পরের দিন দাদাকে সেখানে নিয়ে যাই। রাতে উনি অস্ত্রোপচার করেন।” ফিরদৌসের দাবি, এর পরের দিন সকালে ডাক্তার এসে বলেন, আগের অস্ত্রোপচার ঠিক হয়নি, আবার করতে হবে। ওই রাতে ফের অস্ত্রোপচার করেন তিনি।

পরের দিন, ২৭ মার্চ জিয়ারুলের অবস্থা খারাপ হয়। ফিরদৌস জানান, শঙ্কর নিজেই তাঁর দাদাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসার যাবতীয় খরচ তাঁর বলেও জানান তিনি। হাসপাতালের বি়জনেস হেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “শঙ্কর রায় একেবারে শেষ মুহূর্তে রোগীকে নিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন, তাঁর পরিবারের থেকে যেন আমরা টাকা না নিই। আমরা নিইওনি।” মঙ্গলবার রাতে সেখানেই জিয়ারুলের মৃত্যু হয়।

এর আগেও হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোমে রোগী সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শঙ্করের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এক বৈঠকে তাঁকে সতর্কও করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়। এ দিন তিনি বলেন, “ওঁকে একাধিক বার সতর্ক করেছি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেওয়া হবে।”

যে সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা মেলে, সেখান থেকে কোন যুক্তিতে রোগী সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শঙ্কর? জবাব মেলেনি। সকাল থেকেই মোবাইল বন্ধ। বাড়ি আর চেম্বারে গিয়েও দেখা মেলেনি। পরিবারের লোকজন জানান, সকালে তিনি কলকাতায় চলে গিয়েছেন।

ফিরদৌসের অভিযোগ, ‘‘ডাক্তার বলেছিলেন, এখানে যন্ত্রপাতি নেই।’’ তা কি সত্যি? অস্থি বিভাগের প্রধান অঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচার করার বহু যন্ত্রপাতি নেই। প্লেট থেকে স্ক্রু, নিয়মিত সরবরাহ নেই। সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী পর্যন্ত পাই না।’’ তবে তিনিও রোগীদের অন্যত্র পাঠান? প্রধানের দাবি, ‘‘আমি অনেক সময়েই ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করি। বাকিদের কথা বলতে পারব না।’’

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার অবশ্য সে কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ওঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কী কী দরকার। ওঁরা কোনও তালিকাই দেননি।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ওই সব যন্ত্রপাতিতেই তো বড়-বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। আসলে এ সব বাহানা মাত্র!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Patient Dead Doctor Vanished
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE