Advertisement
১৭ মে ২০২৪

এক অটোয় সাত যাত্রী, অভিযানে পুলিশ

উৎসব পর্ব মিটতেই কল্যাণী শহরের অটো দৌরাত্ম্যে লাগাম দিতে ফের অভিযানে নামছে পুলিশ। গত জুন মাসে অটোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। অগস্টের পর তাতে ভাটা পড়ে। তারপর থেকে পুলিশের কাছে অটোর দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০২:১৮
Share: Save:

উৎসব পর্ব মিটতেই কল্যাণী শহরের অটো দৌরাত্ম্যে লাগাম দিতে ফের অভিযানে নামছে পুলিশ।

গত জুন মাসে অটোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। অগস্টের পর তাতে ভাটা পড়ে। তারপর থেকে পুলিশের কাছে অটোর দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ে। অন্যদিকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে অটো চালকেরা পুজোর আগে মহকুমা শাসকের অফিস ঘেরাও করেছিলেন। প্রশাসন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে।

কলাকাতায় বেপরোয়া অটোয় কলেজ ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার আগে থেকেই কল্যাণীতে অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে ভুরিভুরি অভিযোগ আসছিল। ফলে একরকম বাধ্য হয়েই পুলিশ-প্রশাসনকে অভিযানে নামতে হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, এক-একটি অটোতে সাত জন করে যাত্রী তোলা হচ্ছিল। পিছনের আসনে গাদাগাদি করে চার জনকে বসতে বাধ্য করছিলেন চালকেরা। সামনে চালকের বাঁ দিকে দু’জন, আর ডান দিকে এক জন যাত্রী বসানো প্রায় সব রুটেই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

যাত্রী স্বাচ্ছন্দ বলে কিছু ছিল না। শহরের কয়েকটি রুটে বাস চলে। কিন্তু, সব রুটে বাস না চলার ফলে অনেকে অটোতেই যাতায়াত করেন। তাছাড়া একটু আরামে এবং দ্রুত যাতায়াতের জন্যও যাত্রীদের প্রথম পছন্দ অটো। কল্যাণী সেন্ট্রাল পার্কের বাসিন্দা মধুবন রায়ের বক্তব্য, ‘‘গাদাগাদি করে যাত্রী তোলার ফলে যাত্রীদের আরামের বারোটা বাজছিল। অটোর চাপা মানেই এক আতঙ্কের যাত্রা। মাঝে কিছুদিন ঠিক থাকলেও আবার সেই ‘নিয়ম’ চালু হয়েছে।’’

ব্যারাকপুরের বাসিন্দা সৌমিত্র চক্রবর্তী গয়েশপুরে চাকরি করেন। রোজ অটোতেই যাতায়াত করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অটোগুলি বেপরোয়াভাবে চলে। ফলে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না। চালকরা ঝাঁঝিয়ে বলে, ‘না পোষালে নেমে যান।’ বাধ্য হয়েই সেই অটোতেই যেতে হয়।’’

এমন হাজারও অভিযোগ জমা পড়ায় গত জুন মাসের মাঝামাঝি অভিযানে নেমেছিল পুলিশ। সেই সময় অটোর পিছনে তিন জন এবং সামনে চালকের বাঁ দিকে দু’জন যাত্রী তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, চালকেরা তা না মানায় রাস্তায় নেমে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে। নির্দেশ না মানায় বেশ কিছু অটোকে কেসও দেওয়া হয়। করা হয় জরিমানাও। বেপরোয়া অটোর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে নজরদারি শুরু করে পুলিশ। তার পরে কিছুদিন অটো দৌরাত্মে লাগাম পড়ে। শহরে এখন প্রচুর টোটো চলে। কিন্তু, অটোর ভাড়া যেহেতু কম, তাই যাত্রীদের প্রথম পছন্দ অটো।

আগস্টে মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণীতে প্রশাসনিক বৈঠক করার দু’দিন আগে অটো চালকরা মহকুমা শাসকের অফিস ঘেরাও করে বসে পড়েন। তাঁদের দাবি ছিল, লাইসেন্সবিহীন বহু অটো বিভিন্ন রুটে চলছে। এ ছাড়াও ম্যাজিক গাড়ি স্টেশনের সামনে অটো স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত যাত্রী তোলে। সেখানে তাঁদের দাঁড়ানোর কোনও অনুমতি নেই।

এই ঘটনার পর সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন মহকুমাশাসক স্বপন কুন্ডু। সেখানে ঠিক হয়, অনুমোদনহীন ম্যাজিক-সহ অন্যান্য গাড়ি স্টেশনের সামনের অটো স্ট্যান্ডে দাঁড়াবে না। শনি মন্দিরের সামনে থেকে তারা যাত্রী তুলবে। সেই ব্যবস্থাই চলছিল। কিন্তু, পুজোর আগে থেকে আবার সবকিছু আগের মতোই শুরু হয়ে যায়। অটোতে সাতজন যাত্রী তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফের লাগামহীন গতিতে ছুটছে অটো।

কল্যাণীর এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য জানান, অটোর দৌরাত্ম্য এবং নিয়ম ভাঙার খবর তাঁদের কাছে এসেছে। উৎসবের সময় কিছু করা হয়নি। কিন্তু, অবিলম্বে ফের অভিযানে নামা হবে। অটো চালকদের নিয়ম মেনে চলার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হবে। তারপরেও কেউ নিয়ম ভাঙলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

অটো চালকদের অভিযোগ, অনুমতিবিহীন অটোগুলি যেখান সেখান থেকে যাত্রী তুলছে। অন্য রুটের অটোগুলি কম টাকায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। মহকুমা শাসক স্বপন কুন্ডু বলেন, ‘‘ভাড়া তো আমরা ঠিক করতে পারি না। তবুও অভিযোগ যখন উঠছে, তখন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Auto Police Raid number of passengers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE