Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

দানের কড়ি দিয়েই জামা বদলের ঘর

নবদ্বীপে গঙ্গার ঘাটে। ইনসেটে, তৈরি হচ্ছে তারকেশ্বরবাবুদের ঘর। দেখছি, দেখবো করে প্রশাসন মুখ ফিরিয়েই আছে। আর তাই গৌর দর্শন করতে এসে গঙ্গাস্নান না করেই ফিরে যেতে হয় পূণ্যার্থীদের। বিশেষ করে মহিলাদের।

তৈরি হচ্ছে তারকেশ্বরবাবুদের ঘর। (ডানদিকে) নবদ্বীপে গঙ্গার ঘাটে।

তৈরি হচ্ছে তারকেশ্বরবাবুদের ঘর। (ডানদিকে) নবদ্বীপে গঙ্গার ঘাটে।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২৯
Share: Save:

দেখছি, দেখবো করে প্রশাসন মুখ ফিরিয়েই আছে। আর তাই গৌর দর্শন করতে এসে গঙ্গাস্নান না করেই ফিরে যেতে হয় পূণ্যার্থীদের। বিশেষ করে মহিলাদের।

অনেকে আবার পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়েও নেন। আর তাই প্রায় দু’দশক ধরে কাপড়ের আড়াল গড়ে উন্মুক্ত স্নানের ঘাটে মহিলাদের ভিজে শাড়ি বদলানোর সেই ট্র্যাডিশন চলেই আসছে। নবদ্বীপ ও মায়াপুরের প্রায় কোনও ঘাটেই যে শৌচাগার বা পোশাক বদলের কোনও ব্যবস্থা নেই।

অবশেষে এগিয়ে এল সাধারণ মানুষই। এক অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষিকার পেনশন ও তাঁর চিত্রশিল্পী ভাইয়ের সামান্য উপার্জনে নবদ্বীপে গঙ্গার মণিপুর ঘাটে গড়ে উঠছে মহিলাদের পোশাক বদলের পাকাঘর, বিশ্রামকক্ষ।

ছবির আঁকার বিষয়বস্তু খুঁজতে মাঝেমধ্যেই গঙ্গার ধারে যেতেন তারকেশ্বর ভাদুড়ি। এক দিন কানে আসে কিছু মহিলার আক্ষেপ— গঙ্গার ঘাটে স্নানের পর পোশাক বদলাতে গিয়ে লজ্জায় পড়তে হয় মহিলাদের। ভিজে পোশাকে একঘাট লোকের মধ্যে একে অপরকে কাপড় দিয়ে আড়াল করে কোনও রকমে পোশাক বদলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তাঁরা।

তারকেশ্বরবাবু বাড়ি ফিরে সে কথা গল্প করেন স্কুল শিক্ষিকা দিদি চিন্ময়ীদেবীর কাছে। ভাইয়ের মুখে এ কথা শুনে এক দিন তিনি নিজেই যান ব্যপারটা দেখতে। আলাপ হয় এক সদ্য বিবাহিত দম্পতির সঙ্গে। তাঁরা ভিনরাজ্য থেকে এসেছিলেন। গঙ্গাস্নান না করেই ফিরে যাচ্ছেন শুনে প্রশ্ন করেন। তাঁরা জানান, স্নানের পর ভিজে পোশাক বদলানোর কোনও ব্যবস্থা না থাকায় খোলাঘাটে স্নান করতে রাজি হননি তরুণী। মাথায় গঙ্গাজল ছিটিয়েই ফিরে যাচ্ছেন।

সেই দিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বর্ধমানের দাঁইহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা চিন্ময়ী ভাদুড়ি ও তাঁর ভাই তারকেশ্বরবাবু। প্রাথমিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত দিদিমনির ভরসা বলতে ছিল পেনশনের সামান্য ক’টা টাকা। আর তারকবাবুর ছবি আঁকার উপার্জন সম্বল করেই নেমে পড়লেন কাজে।

তাঁরা জানান, অনেক খুঁজে জায়গা মেলে মণিপুর ঘাটে। তারকেশ্বরবাবু বলেন, “মণিপুর ঘাটে তারা মায়ের মন্দির আছে। আমরা তখন জায়গার জন্য হন্যে। এগিয়ে এলেন মন্দিরের প্রধান গৌর চক্রবর্তী। তিনি প্রায় দু’কাঠা জায়গা দিলেন ওই ঘর তৈরির জন্য। তার পর আর দেরি করিনি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Nabadwip Poor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE