প্রসূতির হাতে রাখি বাঁধলেন নার্স। নিজস্ব চিত্র
গাছ বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন রাজস্থানের ৩৬৩ জন বিশনই সম্প্রদায়ের মানুষ!
সোমবার রাখি পূর্ণিমার দুপুরে শিক্ষকদের কথায় উঠে এল ১৭৩০ সালের সেই ১১ সেপ্টেম্বরের কথা। পড়ুয়ারা সে কথা মন দিয়ে শুনল। পণ করল, তারাও বাঁচিয়ে রাখবে অরণ্যকে।
প্রতি বছর রাখি উৎসবের দিনটিকেই বেছে নেয় বহরমপুরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়ারা। এ দিন তারা বহরমপুর কাশীশ্বরী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে নানা ধরনের প্রায় ৫০টি গাছ লাগায়। বছর পাঁচেক আগে শুরুটা করেছিল স্কুলের প্রাক্তনীরা। তার পর থেকেই প্রতি বছর নিয়ম করে গাছের গায়ে রাখি বাঁধে ওই পড়ুয়ারা। প্রাক্তনী সংস্থার সম্পাদক কাশেম মল্লিক জানান, গাছের সঙ্গে পড়ুয়াদের বন্ধন অটুট করতেই এমন পদক্ষেপ।
একই ভাবে গাছে রাখি বাঁধল কৃষ্ণনগরের এক বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ারাও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গাছের প্রতি পড়ুয়াদের ভালোবাসা তৈরি করতেই এমন উদ্যোগ।” দ্বাদশ শ্রেণির শ্রেয়া বন্দোপাধ্যায়, তপোজা বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলছে, “আমরা আজ অনেক কিছু জানতে পারলাম। গাছ আমাদের রক্ষা করে। গাছকে রক্ষা করাও আমাদের কর্তব্য।”
ওই স্কুলের পাশাপাশি শহরের আরও একটি ইংরাজি মাধ্যম স্কুল বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাখিবন্ধন অনুষ্ঠান পালন করে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠান কার্যত মিলন উৎসবে পরিণত হয়। সেখানেও গাছের গায়ে রাখি বাঁধেন ধর্মগুরুরা। কল্যাণী স্টেশন লাগোয়া এলাকাতেও নানা ধর্মের লোকজন রাখিবন্ধন উৎসব পালন করেন। এ দিন স্কুলের কচিকাঁচাদের সঙ্গে নিয়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ’ নিয়ে চালকদের সচেতন করে ফুলিয়ার পরেশনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পাশাপাশি ডেঙ্গি নিয়েও তারা মানুষকে সচেতন করতে এলাকায় শোভাযাত্রা বের করে। যে সব মোটরবাইক আরোহীর মাথায় হেলমেট ছিল না তাঁদের হাতে রাখি বেঁধে দিয়ে সচেতন করে পড়ুয়ারা।
বিহার থেকে এ দিন ভাইদের জন্য ক্যুরিয়ারে রাখি পাঠিয়েছেন বিজয়া শর্মা। তাঁর আট ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই মারা গিয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রতি বছর আট ভাইয়ের নাম লেখা আটটি রাখি প্রতি বছর পাঠান। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিজয়ার ভাইঝি প্রিয়াঙ্কা কর্মকার বলেন, ‘‘অনেক দিন আগে আমার বাবা এবং দু’জন কাকা মারা গিয়েছেন। কিন্তু পিসি প্রতি বছর আটটা রাখি ও প্রতিটি রাখির সঙ্গে পিন দিয়ে ৫০ টাকা আটকে দেয় মিষ্টি খাওয়ার জন্য ।’’
ধর্মদা বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা পথচলতি লোকজনের হাতে রাখি বেঁধে মিষ্টি খাইয়ে দেয়। অনেকে তাদের হাতেও উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছে নগদ টাকা। সেই টাকা মিড ডে মিলে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিছু দিন আগে নওদার আমতলায় হাসপাতালে রোগীদের আত্মীয় ও চিকিৎসকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিক্ষোভ দেখিয়েছিল লোকজন। এ দিন স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে লোকজন সকলের হাতে রাখি বেঁধে দেন।
গণ অধিকার রক্ষা মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ সারিব আহমেদ মির বলেন, ‘‘বর্তমানে রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। এটা কাম্য নয়। সুসম্পর্ক অটুট রাখতেই আজ সবাইকে রাখি পরানো হয়েছে।’’ নওদা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মুকেশ সিংহ বলেন, ‘‘এই ধরনের কর্মসূচি প্রশংসনীয়।’’
রাখি উৎসবে মাতল সীমান্তের বিএসএফ। সোমবার সকালে করিমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে রাখি উৎসব পালিত হল সীমান্তের মেঘনা ও শিকারপুর ক্যাম্পে। এ দিন সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি বিএসএফ জওয়ানদের হাতে রাখি পরিয়ে দেন মহিলা জওয়ানেরা। রাজস্থানের দেবেন্দ্র কুমার বা হিমাচল প্রদেশের জগদেও সিং বলেন, ‘‘চাকরি সূত্রে আমাদের বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। বহু দিন রাখিবন্ধনে বাড়ি যেতে পারিনি। এ দিন সহকর্মী ও সীমান্তের ভাইবোনেদের রাখি পেয়ে ভাল লাগছে। রাখি বাঁধার ছবি ফোনে পাঠিয়ে দিয়েছি বাড়িতে।’’ খুশি ছত্তীসগঢ়ের দেব কুমারি, উত্তর ২৪ পরগনার অর্পিতা ঘোষ ও শ্রাবন্তি সরকারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরাও সকলে এই সময় বাড়ি যেতে পারি না। সকালে বাড়িতে দাদা ও ভাইকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তার পরে সীমান্তের ভাইদের হাতে রাখি পরিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy