এই ফলক সরানো নিয়েই বিতর্ক। — নিজস্ব চিত্র।
এ যেন কাঁঠালের আমসত্ত্ব!
প্রশাসনিক সফরে মুখ্যমন্ত্রীর আসতে এখনও দিন তিনেক বাকি। ১৫ ডিসেম্বরের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই জেলা সফরে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস হওয়ার কথা। তার কিছু প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে আগেই। তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ফরাক্কা কলেজ হস্টেলের উদ্বোধনের সিদ্ধান্তে।
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর সাগরদিঘির ধুমারপাহারের সরকারি সভামঞ্চ থেকে এই হস্টেলের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিতর্ক সেখানেই। সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলির দাবি, তিন বছর আগে ফরাক্কার কলেজ হস্টেল চালু হয়ে গিয়েছে। তা হলে এমন কাঠালের আমসত্ত্বের মতো উদ্বোধন কেন? সে উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বহু অসম্পূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন হবে, সে অভিযোগ আগেই উঠেছে বিরোধীদের তরফে। তাদের দাবি, ভোটের আগে উন্নয়নের মুকুটে পালক জুড়তে সাগরদিঘি থেকে একাধিক অসম্পূর্ণ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে চলেছেন। সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫০০ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট। এ ছাড়াও রয়েছে সাগরদিঘি ও জঙ্গিপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবন, পলিটেকনিক কলেজ। সেই তালিকায় যোগ হয়েছে ফরাক্কা কলেজ হস্টেলের উদ্বোধনও।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবুল হাসনাত খান ফরাক্কা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি জানান, বাম আমলেই রাজ্য অনগ্রসর জাতি উন্নয়ন দফতর ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ছাত্রদের হস্টেল তৈরির জন্য ২৬.৯৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। জেলা পরিষদের মাধ্যমে কাজও শুরু হয়। আবুল হাসনাত খান বলেন, ‘‘২০১২ সালে হস্টেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। জেলা পরিষদের তৎকালীন সভাধিপতি পূর্ণিমা দাসের উদ্বোধনের দিনক্ষণও চূড়ান্ত হয়। সেই মতো হস্টেলের গায়ে ফলক বসানো হয়। কিন্তু শেষমেষ অনুষ্ঠান হয়নি। তবে পরদিনই চালু হয়ে যায় হস্টেলটি।’’ আরও অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের জন্যে পুরনো উদ্বোধনের ফলকটিও খুলে ফেলা হয়েছে।
সিপিএমের বর্ষীয়ান এই নেতার বক্তব্যের সারবত্তা মিলেছে। বৃহস্পতিবার এই হস্টেলে গিয়ে দেখা গেল, দিব্য সেখানে রয়েছে আবাসিকেরা। ক্যান্টিনের পাশে দাঁড়িয়ে এক আবসিক জানাল, তিন বছর আগেই হস্টেল চালু হয়েছে। ৫০ শয্যার এই হস্টেলে প্রথম বছর সে ভাবে আবাসিক ছিল না। দশ-বারো জন ছিল। তাই মেসও সে ভাবে চালানো যেত না। দ্বিতীয় বছরে ২২ জন ছাত্র আসে। তখন কিছুটা হলেও উন্নতি হয়। রান্নার দু’জন লোকও আসেন। চলতি বছরে ৩৪ জন আবাসিক রয়েছে। ফলে ভালভাবেই চলছে মেস। অন্য আর এক ছাত্র জানাল, এখন প্রধান সমস্যা একটাই একটি শয্যায় দু’জন থাকতে হয়!
নিজেদের হস্টেলের উদ্বোধন হতে চলেছে! সে খবর জেনে রীতিমতো অবাক হয়েছে আবাসিকেরাও। নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে জোর হাসহাসি চলছে বলেও জানিয়েছে এক ছাত্র।
বিরোধী দলের নেতারা অবশ্য এমনটা হতে চলেছে দেখে রীতিমতো ক্ষোভই জানিয়েছেন। প্রশ্ন তুলেছেন নৈতিকতা নিয়েও। ফরাক্কার বিধায়ক কংগ্রেসের মইনুল হক মনে করেন, ‘‘এটা অশোভন। এ ভাবে সরকারের সাফল্য প্রমাণ করা যায় না।’’ তাঁর পরামর্শ, উন্নয়ন যদি মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য হয় তবে ফরাক্কা কলেজে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করুন তিনি। ইতিমধ্যেই ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা খরচ হলেও ওই স্টেডিয়াম এখনও অসমাপ্ত পড়ে। মইনুলের কথায়, ‘‘জেলা প্রশাসনের উচিত প্রকৃত সত্যিটা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো। না হলে গোটা ব্যাপারটি হাস্যকর হবে।’’
মুর্শিদাবাদ জেলার অনগ্রসর বিভাগের আধিকারিক মানবেন্দ্রনাথ দাস অবশ্য জানান, ফরাক্কা কলেজ হস্টেলটিকে দ্বিতল করা হবে। তিনি তার নকশা ও খরচের প্রাথমিক হিসেব তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যত দূর জানি গত তিন বছর হস্টেলটি ব্যবহৃত হলেও এটার কখনও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়নি। তাই দ্বিতলের অনুমোদন করে এটার নতুন করে উদ্বোধন করা হচ্ছে।’’ তা হলে দ্বিতলের শিলান্যাসের কথা স্পষ্ট করে না জানিয়ে উল্টে উদ্বোধনের ফলক তুলে ফেলা হল কেন? সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy