ওঁদের কেউ মনে করেন, বিরোধীদের সঙ্গে সহবস্থান মানে ‘পরাজয়’ নয়। কারও মত— অশান্তির চেয়ে শান্তিতেই জয় নিশ্চিত হয় সহজে। কেউ বলছেন, ‘‘বিরোধীদের পাশে নিয়ে মানুষের মন জয় করা সহজ।’’
পশ্চিমবঙ্গের বদলে যাওয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতির আবহে এখনও যে পুরনো রীতিনীতির ছোঁয়া নিয়ে দ্বীপের মতো জেগে রয়েছে কিছু এলাকা, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে সমাজবিদেরা মনে করছেন— এর নেপথ্যে, রাজনীতির কারিগরদের এলাকা সামাল দেওয়ার মুন্সিয়ানা।
দু’পা হাঁটলে, বারুদের গন্ধ, রড-উইকেটের শাসন, বিরোধীদের জড়োসড়ো হাঁটাচলা। অথচ, রানাঘাটে বিস্তৃত এলাকা কিংবা নবদ্বীপের নিশ্চিন্ত গঙ্গাপাড় দেখে তার আঁচ পাওয়া ভারী দুষ্কর। সেখানে মনোনয়ন জমা দিতে বিডিও অফিসের দখলদারি যেমন নেই, তেমনই নেই বাঁশ-উইকেটের দুর্মর অনুশাসন।
নবদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক পুন্ডরীকাক্ষ সাহা জানান, মারদাঙ্গার সংস্কৃতিতে তাঁর তেমন আস্থা নেই। নাকাশিপাড়ার কল্লোল খাঁ প্রায় একই সুরে জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘বিরোধীদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করে সহবস্থান করা মানেই হেরে যাওয়া নয়। দলনেত্রীর কাজ, নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারলে পাশে যেই থাকুক জিতবে তুমিই!’’
রানাঘাটের বিধায়ক, কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে নাম লেখানো শঙ্কর সিংহের এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ ছিল না বলে জানিয়েছেন বিরোধীরাও। প্রকাশ্যে লাঠি, রড, হাঁসুয়া, পিস্তলের তাণ্ডব চোখে পড়েনি। কেন? শঙ্কর বলছেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। তা ছাড়া আমার এলাকায় মানুষ সেই বাম আমল থেকেই ডানপন্থীদের সঙ্গে এক সঙ্গে রয়েছেন। বিরোধ তো বিশ্বাসে, তার জন্য হাতাহাতির প্রয়োজন কোথায়!’’
তেহট্টের বিধায়ক, নদিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের এলাকাতেও বড় কোনও গন্ডগোলের খবর মেলেনি। গৌরী বলছেন, ‘‘বিবাদ হবে ভোটের বাক্সে, হাতে-মুখে কেন? তেহট্টে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেছি, সামান্যতম উত্তেজনাও তৈরি হতে পারেনি।”
এ যদি শাসক দলের তাবড় নেতাদের নিয়ন্ত্রণ হয়, তা হলে আসুন, পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় যাই— সেখানে বিশ বছরের কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক বলছেন, ‘‘আজ না হয় বিরোধী, কিন্তু এক সময়ে এ জেলা তো আমাদের দখলেই ছিল, বিরোধীরা বলুক কখনও উত্তেজনার আঁচ পেয়েছে?’’ পরিচিত সমাজবিদ অরুনাভ চক্রবর্তী এর একটা ব্যাখ্যা খুঁজেছেন, ‘‘বিগত আমলে এমন খোলাখুলি না হোক, হাঁসখালি, চাপড়া, কল্যাণী, হরিণঘাটা কিংবা শান্তিপুরের মতো এলাকায় চাপা সন্ত্রাস কম দেখেননি বিরোধীরা। এ বার সেই অবদমিত অসন্তোষই আরও নিয়ন্ত্রহীন ভাবে ফুটে বেরচ্ছে।’’ তিনি আবার মনে করেন, এখানেই নেতাদের দক্ষতার প্রশ্ন। দলের নিচু তলার কর্মীদের বুঝিয়ে কে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন, তা স্পষ্ট হয়েছে এখানেই। আর হয়তো তাই, রানাঘাট, তেহট্ট কিংবা ফরাক্কা যা পেরেছে অন্যরা তা পারেনি।
(তথ্য: সুস্মিত হালদার ও বিমান হাজরা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy