Advertisement
১৯ মে ২০২৪
সিট পড়েছে কোথায়

ঘণ্টা আধেক ছুটে বেড়াল মেয়েগুলো

বাবার লজঝড়ে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে সাত সকালেই পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছিল সাবিনা। কিন্তু গেটে ঢোকার মুখেই আটকে গিয়েছিল মেয়েটি— ‘এটা তো তোমাদের কেন্দ্র নয়!’ সটান জানিয়ে দিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাহলে সিট পড়েছে কোথায়?

• তৈরি। সব গুছিয়ে নিয়েছিস তো? পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে মায়ের তদারকি। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

• তৈরি। সব গুছিয়ে নিয়েছিস তো? পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে মায়ের তদারকি। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০১:২১
Share: Save:

বাবার লজঝড়ে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে সাত সকালেই পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছিল সাবিনা। কিন্তু গেটে ঢোকার মুখেই আটকে গিয়েছিল মেয়েটি— ‘এটা তো তোমাদের কেন্দ্র নয়!’ সটান জানিয়ে দিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাহলে সিট পড়েছে কোথায়?

শুরু হয়েছিল দৌড়ঝাঁপ, এ স্কুল থেকে আর এক স্কুলে— ছুটতে ছুটতে তারা যখন পরীক্ষায় বসল ততক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে নির্দারিত সময়ের আধ ঘণ্টা।

ভরতপুরের জজান কেনারাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭৮ জন ছাত্রীকে বুধবার, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম সকালেই কাঁদিয়ে ছাড়ল এই কেন্দ্র-বিভ্রাট। যার দায় কি এড়াতে পারেন স্কুল কর্তৃপক্ষ? অভিভাবকেরা বলছেন, ‘‘এতটা দায়সারা মনোভাব না দেখালেই পারত স্কুল।’’

ভরতপুর ১ ব্লকের ওই স্কুলের ছাত্রীদের জানানো হয়েছিল এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েছে কান্দি রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। সেই মতো ছাত্রীরা সকলেই দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে পৌঁছে গিয়েছিল কান্দির ওই স্কুলের সামনে। কিন্তু সেখানে তাদের রোল নম্বর নেই দেখে শুরু হয় মেয়েদের উদ্বিগ্ন গলায় ফোন।

এক ছাত্রী বলে, ‘‘অনেক বার চেষ্টার পরে এক শিক্ষককে পেলাম। তিনি ঘুম জড়ানো গলায় জানালেন, ‘দেখি প্রধান শিক্ষককের কাছে খোঁজ নিচ্ছি।’’ কখনও স্কুলের শিক্ষক, কখনও বা পরিচালন সমিতির কর্তা— শেষতক স্কুলের এক শিক্ষক নির্বিকার গলায় বলেন, ‘‘সম্ভবত জেমো উচ্চ বিদ্যালয়ে তোদের সেন্টার পড়েছে।’’

ছাত্রীরা ছোটে জেমোর স্কুলে। জেমোর শ্রীবিষ্ণু উচ্চ বিদ্যালয়ে জজান স্কুলের ছাত্রদের সিট পড়েছিল। তা হলে মেয়েদের সিট কোথায় পড়ল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে জানা যায়, জেমোর নরেন্দ্রনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে সিট পড়েছে তাদের।

সাবিনা বলেন, ‘ভাবতে পারছেন মনের অবস্থা। যখন পীক্ষা দিতে বসলাম, তখন প্রায় পঁচিশ মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে।’’ কেয়া মন্ডল বলে, “অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল কান্দি রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র স্কুলে সিট পড়েছে। আমরা তাই সেখানেই গিয়েছিলাম।” কিন্তু কেন এমন ঘটল?

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় ভুল স্বীকার করে নিচ্ছেন, ‘‘আসলে কি জানেন তো, ভুলটা আমারই। আমি পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম ভুল শোনার জন্যই এই বিভ্রাট।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পূরবী দে বিশ্বাস ধরিয়ে দিচ্ছেন, “এটা স্কুলের ব্যর্থতা।’’

এক অভিভাবক আবার বলছেন, ‘‘আসলে ওঁরা পরস্পর দায় এড়িয়ে চলেছেন। মেয়েদের মনের অবস্থাটা বোঝার দায় কে নেবেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

HS Examination Examination Centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE