Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Sutapa Chowdhury Murder Case

সুশান্তের ফাঁসি! শুনেই লুটিয়ে পড়লেন মামা, ‘পয়সার কাছে হেরে গেলাম’, কেঁদেই চলেছেন কাকিমা

ছোট থেকে নিজের কাছে রেখে কোলেপিঠে সুশান্তকে বড় করেছেন পিসি শান্তিরানি চৌধুরী। সাজা ঘোষণার পর বার বার সংজ্ঞা হারাতে দেখা গিয়েছে তাঁকেও।

আদালত চত্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন সুশান্ত চৌধুরীর মামা।

আদালত চত্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন সুশান্ত চৌধুরীর মামা। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ২১:৩১
Share: Save:

আদালতকক্ষের সেই নিস্তব্ধতা তত ক্ষণে কেটে গিয়েছে। চারদিকে শোরগোল। বাইরেও রায় নিয়ে বিস্তর গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছু ক্ষণ পরেই ভিড় ঠেলে আসামিপক্ষের আইনজীবী বাইরে বেরিয়ে এসে বললেন, ‘‘ফাঁসি হয়েছে। আমরা হাই কোর্টে যাব।’’ আইনজীবীর এই কথা শেষ হতে না হতেই বাইরে কান্নার রোল। আচমকাই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন সদ্য ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সুশান্ত চৌধুরীর মামা রমেশ চৌধুরী! ছোট থেকে নিজের কাছে রেখে কোলেপিঠে সুশান্তকে বড় করেছেন পিসি শান্তিরানি চৌধুরী। সাজা ঘোষণার পর বার বার সংজ্ঞা হারাতে দেখা গিয়েছে তাঁকেও। বিচারব্যবস্থা এবং সুতপার পরিবারের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সুশান্তের কাকিমা পুতুল চৌধুরীও।

আদি বাড়ি মহিষবাথানির খনিবাথানি এলাকায় হলেও ছোট থেকেই পিসির মালদহের ইংরেজবাজারের বাড়িতেই থাকতেন সুশান্ত। সেখানে থেকেই পড়াশোনা। ইংরেজবাজার থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে তাঁর গ্রামের বাড়ির সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ ছিল না তাঁর। বরং, পিসি ও মামাদের অত্যন্ত ‘আদুরে’ ছিলেন ‘একরোখা’ সুশান্ত। তাঁর ফাঁসির সাজা হয়েছে শুনেই আদালত চত্বরে মূর্ছা গেলেন মামা রমেশ। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ায় ও উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। বেডে শুয়ে বারবার ‘সুশান্ত... সুশান্ত....’ বলে কেঁদেও উঠছেন বলে জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে।

পারিবারিক সূত্রে খবর, ছোটবেলায় সুশান্তকে হাতে করে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিতেন পিসি শান্তিরানি। ভাইপোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে শুনে জ্ঞান হারিয়েছেন সেই পিসি। জ্ঞান ফেরার পর থেকে বিড়বিড় করছেন, ‘‘কেন করলি বাবা? মেয়ে কি আর ছিল না!’’ সুতপার পরিবারের প্রতি একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সুশান্তের কাকিমা পুতুল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের মতো বাবাও নাটক করেই গেল। ওদের টাকাপয়সা আর নাটকের কাছে আমাদের হার হল। সুশান্তকে মেরে যদি ওদের শান্তি হয়, তাই হোক।’’

২০২২ সালের ২ মে ভরসন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজারে একটি মেসের সামনে খুন হন বহরমপুরের গার্লস কলেজের প্রাণিবিজ্ঞানের ছাত্রী সুতপা। বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে ফেরার পথে মেসে ঢোকার সময় তাঁর উপরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সুশান্ত। ধারালো অস্ত্রের এলোপাথাড়ি কোপে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল সুতপাকে। তাঁর শরীরে মোট ৪২টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছিল। সেই খুনের ঘটনায় মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সুশান্তকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন বহরমপুরের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের অতিরিক্ত ও জেলা দায়রা বিচারক সন্তোষকুমার পাঠক। সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় এই রায় প্রসঙ্গে বলেন, “আধুনিক সমাজে এক জন মহিলা যদি মনে করেন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসবেন, তবে সেটি করার অধিকার তাঁর আছে। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গেলে প্রেমিকাকে খুন করার অধিকার জন্মায় না। প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক থাকল না বলে অন্য কারও সঙ্গে তাঁকে থাকতে দেব না, এটা সত্যিই বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা।” তিনি জানান, আদালতের কাছে মৃত্যুদণ্ডই প্রার্থনা করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “এলোপাথাড়ি কোপাতে গিয়ে সুশান্তের নিজের হাত কেটে যায়, তারপরেও থামেননি। একটি অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে গান টয় কেনেন এবং যারা মেয়েটিকে বাঁচাতে গিয়েছিল, তাঁদেরকেও ভয় দেখানো হয়। সুতপার মৃত্যুকে নিশ্চিত করার জন্য ওই খেলনা বন্দুক নিয়ে ঘটনাস্থলে যান সুশান্ত। সমস্ত কিছু বিবেচনা করে আমাদের মনে হয়েছে এটা বিরলতম ঘটনা।”

অন্য দিকে, সুশান্তের আইনজীবী পীযূষ ঘোষ বলেন, ‘‘আমার মক্কেল এক জন মেধাবী ছাত্র। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রার্থনা করেছিলাম। মহামান্য আদালত তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে। রায়ের কপি পাওয়ার পর মক্কেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sutapa Chowdhury Murder Case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE