Advertisement
১৬ মে ২০২৪

জল টলটলে ক্লাস, ভিজে ব্ল্যাকবোর্ড

সামান্যই বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তা দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই। বানভাসি স্কুল। মূল গেট পেরিয়ে চাতাল, বারান্দা এমনকী ক্লাসরুমেও নোংরা জল থইথই— লালবাগ বয়েজ প্রাইমারি স্কুল।

জল থই থই স্কুলের বারান্দা।

জল থই থই স্কুলের বারান্দা।

শুভাশিস সৈয়দ
লালবাগ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৮
Share: Save:

সামান্যই বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তা দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই। বানভাসি স্কুল। মূল গেট পেরিয়ে চাতাল, বারান্দা এমনকী ক্লাসরুমেও নোংরা জল থইথই— লালবাগ বয়েজ প্রাইমারি স্কুল।

কখনও হাঁটু, কখনও বা গোড়ালি ডোবা জলে হাবুডুবু, ব্ল্যাকবোর্ড-চেয়ার-স্কুলের ঘণ্টা। আর, জল মাড়িয়ে কচি-কাঁচাদের হাঁচি-কাশি। লালবাগের ওই প্রাইমারি স্কুলে এটাই চেনা ছবি।

বৃষ্টি নামলেই যে স্কুলে শিকেয় ওঠে পঠনপাঠন। জলের মধ্যেই কোনও মতে চলে ক্লাস। হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে জল ঠেলে ক্লাসে ঢোকেন শিক্ষকেরা। খুদে পড়ুয়ারাও নাজেহাল। নাজেহাল তাদের বাবা-মায়েরা। স্কুল ছুটির ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই হাঁটু জলে গেটের কাছে ভিড়। তার পর ছুটির ঘণ্টাটা বাজতে দেরি, স্কুলে ঢুকে পড়েন তাঁরা। বাচ্চারা তো জল-বন্দি! খুদে পায়ে জল ঠেলে ক্লাস থেকে বেরনো এক রকম দুঃসাধ্য। অগত্যা, অভিভাবকেরাই পৌঁছে যান ক্লাসে। তার পর বাচ্চাদের কোলে করে বাড়ি।

গত মঙ্গলবারই যেমন, এক টানা বৃষ্টিতে কার্যত ডুবে যায় স্কুল চত্বর। এ দিকে, ওই জল-ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হতে না হতেই ‘লাইক’ ও ‘কমেন্ট’-এর ছড়াছড়ি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটি পোস্ট করেছিলেন খোদ ওই প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস পাল। উপরে লিখেছিলেন— ‘‘এক পশলা বৃষ্টিতে/ ডুবে গেলাম ভাই, এটা স্কুল না দিঘি/ বোঝার উপায় নাই।’’ পাল্টা মন্তব্য পড়তে থাকে দ্রুত। কেউ লিখেছেন, ‘‘আজকের পরে স্কুলের নাম হল— লালবাগ দিঘি প্রাইমারি স্কুল।’’ কেউ আবার লিখেছেন, সামনের রাস্তা উঁচু করার জন্যই এই অবস্থা।

পরে প্রধান শিক্ষক শুভাশিস পালও জানিয়েছেন, লালবাগ থেকে বহরমপুর যাতায়াতের প্রধান রাস্তা চলে গিয়েছে আমাদের স্কুলের সামনে দিয়ে। ওই রাস্তা উঁচু হয়ে হওয়ার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জল ওই রাস্তা ছাপিয়ে নর্দমায় এসে পড়ে। এ দিকে স্কুল নিচু হওয়ায় রাস্তার জমা জলের সঙ্গে ওই নর্দমার নোংরা জল হু হু করে ঢুকে পড়ে স্কুলের মধ্যে। স্কুলের উঠোন ছাড়িয়ে বারান্দা ছাপিয়ে শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ঢুকে পড়ে বৃষ্টির জল।

ওই প্রাথমিক স্কুলের গা-লাগোয়া সিংঘী হাইস্কুল। ওই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হারাধন বিশ্বাসের আক্ষেপ, ‘‘আমি ১৯৮১ সালে সিংঘী হাইস্কুলে শিক্ষক পদে যোগ দিই। সেই থেকেই দেখে আসছি এক দৃশ্য। কিন্তু এখনও কোনও পরিবর্তন হল না।

জল রুখতে প্রাথমিক ভাবে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল স্কুলের তরফে। ক্লাসের মধ্যে জল যাতে ঢুকতে না পারে, তার জন্য দরজার মুখে প্রায় এক হাত উঁচু করে কাঠের পাটাতন লাগানো হয়েছে। এতে জল ঢোকা থেকে মাঝেমধ্যে রেহাই পাওয়া গেলেও অন্য বিপত্তি হয়েছে। অন্যমনস্ক ভাবে ক্লাসে ঢুকতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে চোট-আঘাত লাগছে খুদে পডুয়াদের। শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘স্কুলের মধ্যে জল ঢুকে যাওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি বেশ কয়েক বার। কিন্তু তার পরে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’

ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের। ওই প্রাথমিক স্কুলে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে বর্তমান ছাত্র সংখ্যা প্রায় তিনশো। বর্ষার সময়ে স্কুল শুরুর আগে বৃষ্টি শুরু হলেই ছেলেদের স্কুলে পাঠাতে দিতে চান না অভিভাবকরা। এমনই এক অভিভাবক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীই যেমন বলেন, ‘‘স্কুলে যাওয়ার আগে বৃষ্টি শুরু হলে... ঘুণাক্ষরেও স্কুলে পাঠাই না। ওই ভুল করে নাকি!’’ তিনি বলেন, ‘‘স্কুল জলে ভেসে যায়। স্কুলের মধ্যে হাঁটু পর্যন্ত জল জমে থাকে। তখন নোংরা জল মাড়িয়ে গিয়ে ক্লাসের মধ্যে থেকে ছেলেকে কোলে করে বাইরে বের করে নিয়ে আসতে হয়।’’

এ দিকে রাস্তাতেও জল জমে থাকে। ওই পথ দিয়ে বাস-অটো-লরি বা অন্য কোনও গাড়ি গেলে, জল ছিটিয়ে জামাকাপড় ভিজিয়ে দেয়। আর এক অভিভাবক বিশ্বনাথ কর্মকার বলেন, ‘‘৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাহানগর এলাকা দিয়ে ওই জল এসে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হৈপতগঞ্জ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্কুলের সামনে যে নর্দমা রয়েছে, তার মুখগুলো ছোট হয়ে গিয়েছে। ফলে জল সহজে বয়ে যেতে পারে না। দীর্ঘক্ষণ জল দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তায়। কখনও রাস্তার জল নর্দমা ছাপিয়ে স্কুলের মধ্যে ঢুকে পড়ে।’’ জল নামলেও অবশ্য বিপত্তি কমে না। জমা জলে পিছল ওঠা বারান্দা-উঠোনে হামেশাই আছাড় খায় খুদেরা। খেলতে গেলে চোট-আঘাত অবধারিত।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি দেবাশিস বৈশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র প্রণবকুমার বিশ্বাসের কথায়, ‘‘ওখানে একটা কালভার্ট রয়েছে। সেটা সংস্কারের জন্য পৌরসভা থেকে আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু রাস্তা উঁচু করার জন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে, এমন অভিযোগ কখনও মেলেনি।’’ তবে দফতরের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

classroom blackboard
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE