Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

সর্ষে-ভূত ধরবে কে

তাঁদের অভিযোগ যে অমূলক নয় তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বেলডাঙাতে। ফড়েদের দাপটে ধান বিক্রি করতে পারছেন না বলে শুক্রবার বেলডাঙা-১ ব্লক অফিসের সামনে চাষিরা ধান পুড়িয়ে প্রতিবাদ করলেন।

অপেক্ষা: বহরমপুর কিসান মান্ডিতে। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: বহরমপুর কিসান মান্ডিতে। নিজস্ব চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

সর্ষের মধ্যেই ভূত! সকাল থেকে কিসান মান্ডিতে লোকজন অপেক্ষা করছেন। কেউ এসেছেন কবে ধান নেবে তা জানতে, কেউ বা বিক্রি করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে নিয়ে এসেছেন ধান। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন এক গুচ্ছ অভিযোগ, সমস্বরে বলছেন, ‘‘মনে রাখবেন স্যার, এখানে যাদের দেখছেন সবাই চাষি নয় ফড়েরাও আছে, স্যার একটু দেখবেন!’’

তাঁদের অভিযোগ যে অমূলক নয় তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বেলডাঙাতে। ফড়েদের দাপটে ধান বিক্রি করতে পারছেন না বলে শুক্রবার বেলডাঙা-১ ব্লক অফিসের সামনে চাষিরা ধান পুড়িয়ে প্রতিবাদ করলেন। যা শুনে, ধান কেনার সঙ্গে যুক্ত বহরমপুরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘কি করে বোঝা যাবে বলুন তো, কে যে ফড়ে আর কে নয় বুঝব কি করে?’’ কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো নয়, ফড়ে’রা তো ‘ভিন গ্রহের’ জীব নন, তাঁদের চেনার এখন উপায়টা কি! কৃষি দফতরের কর্তারা বলছেন, ‘‘অনেক ফড়ের জমি আছে, তাঁরা সেই জমির কাগজ দেখিয়ে ধান বিক্রি করার জন্য নাম রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। সেই রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখিয়ে তাঁরা ধান নিয়েও আসছেন, ধন্দটা সেখানেই।’’

বহরমপুরের ভাকুড়িতে কিসান মান্ডিতে ধান নিয়ে এসেছিলেন ভুল্লা গ্রামের আবুল কাশেম শেখ, বলছেন, ‘‘ফড়েরাও জমির কাগজ, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাশ বই দেখিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিচ্ছে। পরে তারা চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘নাম রেজিস্ট্রেশনের সময় যদি কৃষিদফতর বা অন্য কোনও মাধ্যমে কৃষকদের চিহ্নিত করা হয়, তবে কৃষকেরা সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।’’

বহরমপুরের নিয়াল্লিশপাড়ার রামচেলি চৌধুরী বলেন, ‘‘নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য জমির দলিল, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাশবই ও দু’কপি ছবি লেগেছে। ফড়েদেরও এমন কাগজপত্র রয়েছে। ফলে তাঁদের রেজিস্ট্রেশন করতে সমস্যা হচ্ছে না।’’ তাঁর দাবি, চাষিরা ঘুরে ঘুরে হয়রান হচ্ছেন, আর ফড়েরা চাষি সেজে দিব্যি বিক্রি করছে ধান। জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ধান বিক্রির রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য আইএফএসসি কোড যুক্ত ব্যাঙ্কের পাশ বই, সচিত্র পরিচয়পত্র, দু’কপি ছবি ও মোবাইল নম্বর প্রয়োজন। যে দিন কাগজপত্র নিয়ে যাবেন সে দিন সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেওয়ার কথা।’’ তাহলে কে কৃষক, কে ফড়ে বুঝছেন কি করে?

আমতা আমতা করে ওই আধিকারিক বলছেন, ‘‘ব্লক স্তরে বিডিও, ব্লক কৃষি আধিকারিক, খাদ্য আধিকারিককে নিয়ে গঠিত কমিটি কৃষকদের চিহ্নিত করছে।’’ কমিটির পক্ষে কি ব্লকের কৃষককে চিহ্নিত করা সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

ধান বিক্রিতে ফড়েরাজ বন্ধ করতে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন? ধান বিক্রিতে ফড়েরাজ বন্ধ করতে নজরদারি বাড়াতে কিসান মান্ডিগুলিতে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা যাচ্ছেন। এ ছাড়া কিসান মান্ডিগুলিতে সিসিটিভি লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলেন, ‘‘ধান ক্রয় কেন্দ্রগুলিতে আমরা নজরদারি রেখেছি। এ ছাড়া নজরদারি বাড়াতে কিসান মান্ডিগুলিতে সিসিটিভি লাগানো হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ধান কেনার জন্য আমরা কৃষকদের কাছে পৌঁছতে চাইছি। শীঘ্রই জেলার ২৫০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে শিবির করে ধান কেনা হবে। ধান বিক্রিতে চাষিদের অসুবিধা হলে আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর ফড়ে রাজ বন্ধ করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দু’দিন আগেই জেলাশাসক ও মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। কাল রবিবার বিকালে বহরমপুরে রবীন্দ্রসদনে ধান বিক্রিতে ফড়েদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে এবং সুষ্ঠভাবে ধান কিনতে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের পাশাপাশি ধান কেনার সাথে যুক্ত সরকারি আধিকারিক, চালকল মালিক ও জন প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Middleman Kisan Mandi Rice Trading
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE