Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Nadia

Municipal Election 2022: শেষ বামদুর্গ কার দখলে, চলছে হিসাব

দক্ষিণবঙ্গে এক মাত্র বাম পুরবোর্ড হিসাবে রয়ে গিয়েছে তাহেরপুর। আবার লোকসভা-বিধানসভা ভোটে টক্কর নিয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল।

দক্ষিণবঙ্গের এক মাত্র বাম পুরবোর্ড হিসাবে রয়ে গিয়েছে তাহেরপুর।

দক্ষিণবঙ্গের এক মাত্র বাম পুরবোর্ড হিসাবে রয়ে গিয়েছে তাহেরপুর। প্রতীকী ছবি

সম্রাট চন্দ
তাহেরপুর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:১৩
Share: Save:

পুর এলাকার স্বীকৃতি খুব বেশি দিনের নয়। তবে সেই শহরেই সাম্প্রতিক কালে ভোটের সমীকরণে বদল এসেছে একাধিক বার। কখনও দক্ষিণবঙ্গে এক মাত্র বাম পুরবোর্ড হিসাবে রয়ে গিয়েছে তাহেরপুর। আবার লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বামেদের পিছনে ফেলে টক্কর নিয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল। এ বার পুরভোটের আগে সেই তাহেরপুরে ভোটের হিসাব কষছে সব পক্ষ।

তাহেরপুরের পুর এলাকা হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু গত শতকের শেষের দিকে। ১৯৯৩ সালে গঠিত হয় প্রথম নমিনেটেড বোর্ড। ১৯৯৫ সালে তাহেরপুর নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটির প্রথম নির্বাচন। প্রথম বারে জয় পায় বামেরা। তবে বছর দুয়েক বাদেই দুই বাম কাউন্সিলর কংগ্রেসে চলে যাওয়ায় বোর্ড চলে যায় কংগ্রেসের হাতে। আবার ২০০০ এবং ২০০৫-এর পুরভোটে ক্ষমতায় আসে বামেরা। প্রথম তিন পুরভোটে দাপট দেখালেও ২০১০ সালের ভোটে ধাক্কা খেতে হয় বামেদের। রাজ্যে যখন পালাবদলের হাওয়া বইছে, পুরবোর্ড ত্রিশঙ্কু হয়। নির্দলের সমর্থনে বোর্ড গড়ে তৃণমূল। ২০১৫ সালের পুরভোটে ক্ষমতায় ফেরে বাম। দক্ষিণবঙ্গে সেই সময়ে একমাত্র বাম পুরবোর্ড ছিল এটিই।

শেষ পুরভোটে তাহেরপুরের ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টিতে বামেরা এবং ৫টিতে তৃণমূল জয়ী হয়। পাঁচটি পুরভোট হয়েছে এই শহরে। যার মধ্যে চার বার বামেরা জিতলেও তাদের ভোটব্যাঙ্কে সাম্প্রতিক কালে বড়সড় ধসের চিত্র সামনে এসেছে। লোকসভা ভোটে এখানকার ১২টি ওয়ার্ডেই লিড নেয় বিজেপি। একটি ওয়ার্ডে অল্প ব্যবধানে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। বামেরা ছিল তৃতীয় স্থানে। এর আগে কখনও সে ভাবে ছাপ ফেলতে না পারলেও লোকসভা ভোটে গেরুয়া উত্থানের পিছনে বামভোটের চলে যাওয়াকেই কারণ বলে মনে করেন অনেকেই। বামেদের ভোট যতটাই কমেছে, ততটাই বেড়েছে বিজেপির ভোট।

আবার বিধানসভা নির্বাচনে তাহেরপুরে লিড নেয় তৃণমূল। শহরের মধ্যে ৯টি ওয়ার্ডে তৃণমূল এবং ৪টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে ছিল। মোর্চা ছিল তৃতীয় স্থানে। এ বার বিজেপির ভোট কমেছে অনেকটাই। আর মোর্চার ভোট বেড়েছে বেশ কিছুটা। বিজেপির ঘর চলে যাওয়া বামেদের ভোটের একাংশ তারা নিজেদের দিকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল, তা স্পষ্ট। এবার তা আরও বেশি করে ফিরিয়ে আনাও চ্যালেঞ্জ বামেদের কাছে। কিন্তু ফিরবে কি? সিপিএমের ৩ নম্বর শাখা কমিটির সম্পাদক তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর দীপঙ্কর চক্রবর্তীর দাবি, “মানুষের ভোট ফিরবেই। বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই তা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরাই ক্ষমতায় আসব এখানে।”

গত বিধানসভা ভোটে এই শহরে লিড অক্সিজেন দিয়েছে তৃণমূলকে। বাম নিজেদের কিছুটা ভোট ফেরাতে পারায় কিছুটা হলেও বিরোধী ভোট ভাগাভাগির জেরে লাভবান হয়েছে শাসক দল। নয়টি ওয়ার্ডে লিড রয়েছে তাদের। কিন্তু এই শহরেও দলের কোন্দল সামনে এসেছিল আগে। এক নির্দল প্রার্থী তথা ওয়ার্ড সভাপতিকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। দলের প্রাক্তন শহর সভাপতি সাধন সরকারও নির্দল প্রার্থীর সঙ্গেই আছেন। তিনি বলছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু পুরনো তৃণমূল কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে বিজেপি বা অন্য দল থেকে আসা লোকেদের গুরুত্ব দেওয়াতেই আমাদের প্রতিবাদ।”

দলের মধ্যে কোন্দলের চোরাস্রোত সব হিসাব গুলিয়ে দিতে পারে কি? তাহেরপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি সত্যেন্দ্রনারায়ণ ঘোষ বলেন, “মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে আছেন। তৃণমূলের প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন। এখানে আমরাই জিতব।”

তাহেরপুর শহরের নানা প্রান্তে ইতিউতি বিজেপির প্রচারও চোখে পড়ছে। নিচুতলায় কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে তাদের। এই শহরেরই বাসিন্দা প্রাক্তন জেলা সভাপতি অশোক চক্রবর্তী, যাঁকে এ বার দল প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করলেও তিনি প্রার্থী হতে চাননি। পরে তাঁর বদলে অন্য প্রার্থী দেওয়া হয়। সেই অশোককে বার কয়েক নিজের ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীর প্রচারেও দেখা গিয়েছে। তবে তা কি যথেষ্ট? গত লোকসভা নির্বাচনের ভোট ফিরিয়ে আনা কি সম্ভব? বিজেপির তাহেরপুর শহর মণ্ডলের সভাপতি তথা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী কৃষ্ণগোপাল সরকার দাবি করছেন, “নিচুতলার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমরাই পাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE