হাজারদুয়ারি মূল ফটকের সামনে জঞ্জাল জমে।
২০১২ সালে সংখ্যাটা ছিল প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ। ২০১৩ সালে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ। প্রতি বছর হাজারদুয়ারি মিউজিয়াম দেখতে ভিড় বাড়ছে মুর্শিদাবাদের লালবাগে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যটনের উপরে যতই জোর দিন না কেন, প্রাচীন নবাবি এই শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নে হুঁশ নেই স্থানীয় পুরসভা বা প্রশাসনের। টাঙাগাড়ির ঘোড়ার মল-মূত্রে নোংরা রাস্তা। রাত হলেই অন্ধকার ছেয়ে যায় চারদিক। দু’একটা ভাল রেস্তোরাঁ বা হোটেল ছাড়া পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যে কিছুই নেই প্রাচীন এই শহরে।
হাজারদুয়ারি মিউজিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুরাতত্ত্ববিদ নয়ন চক্রবর্তী বলেন, “লালবাগের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন নিয়ে সরকার বা প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। সরকারের পরিকল্পনার অভাবে ধুঁকছে লালবাগের পর্যটন শিল্প।”
পুজোর পর থেকেই লালবাগে শুরু হয়ে যায় পর্যটন মরসুম। পর্যটকদের আনাগোনা চলে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত। মূলত হাজারদুয়ারি, কাটরা মসজিদ বা সিরাজ-উদ-দৌলার সমাধি দেখার জন্যই ভিড়টা হয়। এ ছাড়াও ছোটখাটো নানা স্থাপত্যকীর্তি রয়েছে। কিন্তু হাজারদুয়ারি ছাড়া অন্য জায়গাগুলিতে পানীয় জলের বন্দোবস্ত নেই। সুলভ শৌচাগার নেই। স্নান করার জায়গা বা পোশাক বদলানোর বন্দোবস্তও নেই কোথাও। গত ১০ বছরে নতুন কোনও রাস্তা তৈরি হয়নি। নোংরা রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ঘোড়ার মলমূত্র পড়ে রয়েছে। শহরের মূল কয়েকটি রাস্তা ছাড়া অন্যত্র পথবাতি না থাকায় সন্ধ্যা নামলেই অসুবিধায় পড়েন পর্যটকরা।
লালবাগের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে হোটেল, অটো-টাঙা-রিকশা চালক, মুর্শিদাবাদ সিল্ক, খাগড়ার কাঁসা-শোলা-দারুশিল্প। পর্যটকদের উপরেই নির্ভর করছে ওই সব শ্রেণির মানুষের রুজি-রোজগার। তাই লালবাগের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তায় ব্যবসায়ীরাও। জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি অজয় সিংহ আবার যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার দিকটাই সবচেয়ে বেশি জোর দেন। তাঁর কথায়, “চড়া দরে গাড়ি ভাড়া আদায় করা হয় পর্যটকদের কাছ থেকে। অটো ও রিকশা চালকদের অত্যাচারও সইতে হয় বহিরাগতদের। এই সব দেখার কেউ নেই।”
পাঁচিলে শোকানো হচ্ছে কাপড়।
মুর্শিদাবাদ পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পর্যটনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারেই দেখা হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, লালবাগের বিভিন্ন পর্যটনস্থল আলো দিয়ে সাজানোর কাজ চলছে। সেই সঙ্গে অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা-সহ অনেক কিছুই ভাবনায় রয়েছে। কাউন্সিলর বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, “লালবাগ বাস টার্মিনাসে পর্যটকদের বাস রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই বাসগুলি শহরের ভেতরে ঢুকে যানজট তৈরি করে। ওই যানজট রুখতেই শহরের বাইরে বাস টার্মিনাসে ওই বাস দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়টি সকলেই মেনে নিয়েছে।” সেই সঙ্গে পর্যটন মরসুমে যানজট এড়াতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩০ জন যুবককে নিয়োগ করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিপ্লববাবু বলেন, “ফেরিঘাটে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী না তোলার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারিও করা হয়েছে। তেমনি নৌকার যাত্রী সুরক্ষায় ডুবুরির ব্যবস্থাও থাকছে।”
লালবাগের মহকুমাশাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ইতিহাসের টানে লালবাগে পর্যটকরা ভিড় করেন। বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও তারা এখানে বেড়াতে আসবেনই।” তিনি জানান, হাজারদুয়ারিকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাই লালবাগের বিভিন্ন জায়গায় তা ছড়িয়ে দিতেই মতিঝিল পার্ক তৈরি করা হচ্ছে, তেমনই জিয়াগঞ্জে মুর্শিদাবাদ সংগ্রহশালা নতুন করে সেজে উঠছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক স্থল অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণের জন্য ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।”
পর্যটকরা চাইছেন
• শৌচাগার স্নান ও পোশাক বদলের ব্যবস্থা।
• সর্বত্র পানীয় জলের বন্দোবস্ত।
• হাজারদুয়ারি থেকে ইমামবাড়ার পিছন, পাহাড় বাগান-সহ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থলগুলিতে আলো।
• টাঙা চালকদের ভাড়ার তালিকা প্রকাশ, স্ট্যান্ড তৈরি।
• ভাগীরথীর বুকে নৌকায় যাত্রী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত।
• রাস্তাঘাট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
• আস্তাবল মোড়, হাসপাতাল রোড, চক ও রেজিস্ট্রি অফিস মোড়ে প্রয়োজনীয় ট্রাফিক পুলিশ।
• ওয়াসিফ মঞ্জিল খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা।
ছবি: গৌতম প্রামাণিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy