Advertisement
০১ জুন ২০২৪

আইএসএল-এর ধাঁচে টুর্নামেন্ট ঘিরে উন্মাদনা

দুপুর হতে না হতেই দর্শকের ভিড় মাঠ উপচে রাস্তায়। নামছেন ড্যানিয়েল বিদেমি, অ্যানিলো, লেথানিলের মতো খেলোয়াড়রা। ক্লাব জিতলে বিশাল পতাকা নিয়ে গোটা মাঠ জুড়ে ‘ভিকট্রি ল্যাপ’ চলছে দলের সমর্থকদের।

তখন এমএসসি-র খেলা চলছে। নবদ্বীপে তোলা নিজস্ব চিত্র।

তখন এমএসসি-র খেলা চলছে। নবদ্বীপে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪৬
Share: Save:

দুপুর হতে না হতেই দর্শকের ভিড় মাঠ উপচে রাস্তায়। নামছেন ড্যানিয়েল বিদেমি, অ্যানিলো, লেথানিলের মতো খেলোয়াড়রা। ক্লাব জিতলে বিশাল পতাকা নিয়ে গোটা মাঠ জুড়ে ‘ভিকট্রি ল্যাপ’ চলছে দলের সমর্থকদের।

‘মিউনিসিপ্যাল সকার কাপ’ যেন বদলে দিয়েছে মন্দিরশহর নবদ্বীপকে। ষোলটি ক্লাব নিয়ে এই টুর্নামেন্ট ঘিরে যে উন্মাদনা চলছে তিন সপ্তাহ জুড়ে, তেমনটা আগে দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না শহরের প্রবীণেরা। পুলিশের হিসেবে, গড়ে পাঁচ হাজার দর্শক হচ্ছে প্রতি ম্যাচে। তাঁদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো।

যত সময় যাচ্ছে, পারদ তত চড়ছে। আগামী রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ফাইনাল দেখতে বর্ধমানের পূর্বস্থলী, এমনকী কালনা থেকেও দর্শক আসার কথা। দুই ফাইনালিস্ট ভ্রাতৃসঙ্ঘ এবং মিলন সমিতি গোপনে প্রস্তুতি সারছে।

ব্যাপার-স্যাপার দেখে শীতেও ঘাম ছুটছে পুলিশের। তাদের আন্দাজ, রবিবার অন্তত সাত-আট হাজার দর্শ কের ভিড় হবে। প্যাক কোম্পানির মাঠে অত লোক দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তার পর আবার হাজির থাকবেন মন্ত্রী পুন্ডরীকাক্ষ সাহা-সহ জেলার তাবড় কর্তারা। আইসি তপনকুমার মিত্র বললেন, “প্রায় পুরো বাহিনীই থাকবে মাঠে। আমিও থাকব।”

তুমুল ব্যস্ত ক্লাবকর্তারাও। দর্জির কাছে আরও বড় পতাকার তাগাদা, কলকাতা থেকে জার্সি আনতে ছোটা, শহর জুড়ে ফ্লেক্স টাঙানো, কাজ কি কম? খেলোয়াড়দের গায়ে হুবহু বার্সিলোনা বা অ্যাথলেটিকো ডি কলকাতার মতো জার্সি। কোনও ক্লাবের ম্যাচ-পিছু বাজেট ৩০ হাজার, তো কারও বাজেট ১৮-২০ হাজার টাকা। নিদেন ১২ হাজারের নীচে কেউ নেই। কোথা থেকে আসছে এত টাকা? নিজের পাড়ার ক্লাবে স্থানীয় ব্যবসায়ী, বাসিন্দারাই টাকা ঢালছেন, জানালেন ক্লাবকর্তারা। “যত টাকা লাগে লাগুক, প্রথম সকার কাপেই জিতে দেখিয়ে দিতে হবে,” এমন একটা মনোভাব বহু দিন পরে দেখা যাচ্ছে নবদ্বীপে।

সকার কাপের মূল ভাবনা যাঁর, নবদ্বীপের সেই পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “আইএসএলের খেলা দেখতে-দেখতে মনে হচ্ছিল, নবদ্বীপে ফুটবলকে বাঁচাতে একটা চেষ্টা করতে হবে। ক্লাবকর্তারা এবং সাধারণ মানুষ সেটা দারণ সমর্থন করছেন।” শহরের প্রবীণ ফুটবলার রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, অর্জুন কর্মকার কিংবা শিবপ্রসাদ ঘোষালেরাও বলছেন, আইএসএল জনমানসে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তারই ফলাফল এই সকার কাপ। শিবপ্রসাদবাবু বলেন, “ষাট-সত্তরের দশকে আমরা যখন খেলেছি, তখন ফুটবলে টাকার ছড়াছড়ি ছিল না। তবে ভাল টিম করার জন্য ক্লাবকর্তাদের ছোটাছুটি, সমর্থকদের উন্মাদনা ঠিক এমনই ছিল। সে সব ফিরে এসেছে।”

অথচ নবদ্বীপের স্থানীয় ফুটবল লিগে এ মরসুমে সিনিয়র ডিভিশনে ন’টি দল, দ্বিতীয় ডিভিশনে মাত্র ছ’টি দল খেলেছে। গত বছরে দলের অভাবে সাব ডিভিশন ফুটবল লিগ বন্ধ হয়ে যায়। এ বারে খেলেছে সাকুল্যে চারটি দল। ক্লাবকর্তারা টাকার অভাবে নবদ্বীপের স্থানীয় ফুটবল লিগে দল গড়তেই পারেন না। কিন্তু সকার কাপে কয়েক লক্ষ টাকা ঢেলে এক-একটি ক্লাব কলকাতার নামী-দামি খেলোয়াড়, এমনকী বিদেশিদেরও নিয়ে আসছে। অনেক টাকা খরচ করে টিম করার ফলে মাঠে খেলার মানও যথেষ্ট ভাল হচ্ছে। দর্শকদের মুখে সে কথা ছড়াতেই পরের দিন ভিড় আরও বাড়ছে। নবদ্বীপ জোনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নবদ্বীপে লিগের খেলায় মেরে-কেটে মাঠে থাকে জনা পঞ্চাশ। তার মধ্যে ২২ জন খেলোয়াড়, বাকিরা ক্লাবকর্তা। সেখানে নবদ্বীপে তিন প্রান্তের তিনটি মাঠে দুপুর আড়াইটেয় প্রতি দিন চার-পাঁচ হাজার দর্শক!” নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থা ফুটবল সম্পাদক লাল্টু ভুঁইঞা জানান, কাপে অংশ নেওয়া ১৬টি ক্লাবের অধিকাংশের স্থানীয় ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। তাঁর কথায়, “এ বারের খেলা শেষ হওয়ার আগেই বহু ক্লাব যে ভাবে নাম লেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাতে পরের বার ৩২ দলের টুর্নামেন্ট করতে হবে!” পুরপ্রধান বলেন, “সকার কাপ শেষ হলে প্রতিটি স্কুল ও ক্লাবের মধ্যে ফুটবল চালু করব।” চৈতন্যধামও যেন নবদ্বীপ-কীর্তন ভুলে এখন গাইছে, “সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debashis bandypadhyay nabadwip football tournament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE