Advertisement
১১ জুন ২০২৪

ক্যারামে মজলেন তাপস পাল

রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় ক্যারাম খেলছিলেন তেহট্টের জনাকয়েক যুবক। আচমকা ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেল ঝাঁ চকচকে গাড়িটা। দরজা খুলে বোর্ডের দিকে এগিয়ে এলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী তাপস পাল। এক যুবকের হাত থেকে স্ট্রাইকারটা নিয়ে কভার সহ রেড ফেলে দিলেন পকেটে। দাদার কীর্তি দেখে থ ওই যুবকেরা।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৩
Share: Save:

রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় ক্যারাম খেলছিলেন তেহট্টের জনাকয়েক যুবক। আচমকা ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেল ঝাঁ চকচকে গাড়িটা। দরজা খুলে বোর্ডের দিকে এগিয়ে এলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী তাপস পাল। এক যুবকের হাত থেকে স্ট্রাইকারটা নিয়ে কভার সহ রেড ফেলে দিলেন পকেটে। দাদার কীর্তি দেখে থ ওই যুবকেরা।

প্রচারে বেরিয়েছিলেন ওই কেন্দ্রেরই সিপিএম প্রার্থী, কৃষিবিজ্ঞানী শান্তনু ঝা। গ্রামের মধ্যে প্রচারে গিয়ে হঠাৎ তিনি আলপথ ধরে মাঠের দিকে এগোতে লাগলেন। পিছনে দলীয় পতাকা নিয়ে কর্মীরা। মাঠে গিয়ে চাষিদের বোঝালেন কী ভাবে আরও বেশি ফসল ফলানো সম্ভব। কী ভাবে নিতে হয় জমির যত্ন।

আসাননগর বাজারে তখন ভালই ভিড়। টানা প্রচারে ক্লান্ত বিজেপি প্রার্থী জলুবাবু (সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়) গাড়ি থেকে নেমে সটান বাজারের চায়ের দোকানে। প্রার্থীকে চা খেতে দেখে এগিয়ে এলেন অনেকেই। তাঁদের সঙ্গে জলুবাবু বেশ কিছুক্ষণ জমিয়ে গল্পও করলেন।

প্রার্থীদের এহেন ব্যাপার-স্যাপার দেখে আসাননগরের এক বৃদ্ধ বলছেন, “লোকসভার মতো ভোটে প্রার্থীদের যে এত কাছ থেকে দেখতে পাব ভাবিনি।” কাঁটাতারের বেড়ার ওপারের ভারতীয় গ্রামের এক বধূ আবার বলছেন, “ভাগ্যিস তাপস পাল ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন! নাহলে এত কাছ থেকে কী আর কখনও দেখতে পেতাম?” গাঁ-গঞ্জের ভোটারদের কথায়, “লোকসভা ভোটে প্রার্থীরা এর আগেও প্রচারে এসেছেন। কখনও গাড়িতে করে হাত নাড়তে নাড়তে চলে গিয়েছেন। কখনও আবার জনসভায় গিয়ে অনেক দূর থেকে তাঁদের দেখেছি, কথা শুনেছি। কিন্তু এবার যেন প্রার্থীরা আমাদের হেঁশেল পর্যন্ত চলে আসছেন। এমনটা কিন্তু এর আগে দেখিনি।”

এবারের ভোটে প্রচার কৌশল যে বদলেছে সে কথা মেনে নিচ্ছেন ডান-বাম সব দলের নেতা কর্মীরাও। মাসখানেক আগে থেকে প্রচার শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই চেনা ছকে রোড শো কিংবা র্যালি এখনও সেভাবে চোখে পড়ছে না। এসবের থেকে সব দলই জোর দিচ্ছে সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে। বিজেপির নদিয়া জেলা কমিটির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার মনে করেন, “ভোটাররা এখন আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন। সংবাদমাধ্যমের দৌলতে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে নানা রকম তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে। ভোটাররাও এখন প্রার্থী সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে বুঝে নিতে চাইছেন। সেই কারণেই প্রার্থীরা ভোটারদের কাছাকাছি গেলে তার একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “মানুষ এখন কোনও নির্দিষ্ট দল বা প্রতীকের পিছনে না ছুটে প্রার্থীকে নিজেদের মতো করে যাচাই করে নিতে চাইছেন। প্রতিমা ভাসানের শোভাযাত্রার মতো দূর থেকে প্রার্থীকে দেখে এখন আর কেউ ভোট দিতে রাজি নন।”

“এখন মানুষ চাইছেন পাঁচ বছরের জন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে তাঁকে ভাল করে বেুঝে নিতে। সেই কারণেই প্রার্থীদের এখন সরাসরি মানুষের কাছে যেতে হচ্ছে। নিজেদের যাচাই করার সুযোগ করে দিতে হচ্ছে।” বলছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত।

অনেক দেরিতে প্রচার শুরু করলেও রোড শো কিংবা র‍্যালির পথ মাড়াচ্ছেন না কংগ্রেস প্রার্থী রাজিয়া আহমেদও। তিনিও গ্রামে-গঞ্জে পায়ে হেঁটে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে কথা বলছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। কংগ্রেসের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান সোমনাথ দত্ত বলেন, “পরিস্থিতি এখন পাল্টেছে। মানুষের সচেতনতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। কিছুই না বুঝে কেউ আর ভোট দেন না। সেই কারণে আমরাও চেষ্টা করছি প্রার্থীকে নিয়ে আরও বেশি সংখ্যক ভোটারদে কাছে যাওয়া।” ভোট বড় বালাই। সব প্রার্থীই এখন চাইছেন ভোটারদের কাছের মানুষ হতে ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tapas pal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE