বেলডাঙায় কার্তিক লড়াইয়ের শোভাযাত্রা। ছবি: গৌতম প্রমাণিক।
কার্তিক পুজো তো আছেই। তার চেয়েও বড় হল পুজোর শোভাযাত্রা কার্তিক লড়াই নামে যা বেশি পরিচিত। শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহাসিক এই উৎসবে মেতে উঠেছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা। গ্রামীণ মেলা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানআলোর সাজে সেজে উঠেছে শহর।
সোমবার কার্তিক পুজোর পর মঙ্গলবার দিন-রাত শ’তিনেক ছোট-বড় মূর্তির নিরঞ্জনকে ঘিরে যাবতীয় উন্মাদনা। বড় মূর্তিগুলির গড় উচ্চতা ১২-১৪ ফুট। সেগুলিকে কাঠামো-সহ বাঁশের মাচায় চাপিয়ে শহরের রাস্তা দিয়ে বাদ্যযন্ত্র-সহ শোভাযাত্রা বেরয় যখন বাস্তবিকই দেখার মতো দৃশ্য। কে-কত ভাল শোভাযাত্রা করল, তা নিয়ে মূলত লড়াই।
কয়েকশো বছরের পুরনো ছুতারপাড়ার বাথানগড়ের বুড়ো শিব দেখতে ভিড় সবচেয়ে বেশি। শহরের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা হয় বুড়ো শিবের। এই পুজোর উদ্যোক্তাদের অন্যতম সনাতন মিস্ত্রি বলেন, ‘‘ভিড় সামলাতে এবার প্রথম প্রোজেক্টর লাগিয়ে সোমবারের পুজোর সম্প্রচার করা হয়েছে। সকলে পুজো দেখতে পেয়ে খুশি। মূর্তি খুব ভারী হওয়ায় আগে সব রাস্তা ঘোরানো যেত না। এবার মূর্তি কিছুটা হালকা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে সব রাস্তাতেই প্রদক্ষিণ করা যাবে।”
সবচেয়ে পুরনো হিসাবে ধরলে আবার বেনেপাড়ার বাবু কার্তিক এগিয়ে। এছাড়া হাতিঢিপির হাতি কার্তিক, ঘোষ পাড়ার হাতি কার্তিক, চ্যাটার্জি পাড়ার রাজ কার্তিক, ছুতার পাড়া অমর সঙ্ঘের রাজ কার্তিক, বাজার পাড়ার রাজলক্ষ্মী, বারোয়ারিতলা ও ছাপাখানা মোড়ের শিবদুর্গা, নেতাজী পার্কের সামনের কমলাকামিনী, তাঁতি পাড়ার বিরাট সরস্বতী, আশ্রম পাড়ার বিশ্বকর্মা, বড়ুয়া কলোনির বুড়ো শিব, নেতাজী পার্ক রোডের মহাপ্রভু সঙ্ঘের শ্রী চৈতন্য, বাউরি পাড়া বালক সঙ্ঘের সুবিশাল রাম-লক্ষ্মণ কাঁধে হনুমান, মিলন সঙ্ঘের চার হাতের ভৈরব, লোকনাথ সঙ্ঘের শঙ্খ হাতে নীল শিব, কাছারি পাড়ার নীল শিব, বাগদিপাড়া তমালতলার বিশ্বরূপ, বেতাল সমিতির বাল গণেশ, দরগা তলার পাশের গলির রামকৃষ্ণ নজর কেড়েছে শোভাযাত্রায়। ছাপাখানা নবারুণ সঙ্ঘের দক্ষযজ্ঞ পুজোর আলোকসজ্জায় মোহিত বেলডাঙাবাসী। আলোর সাজে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে শিশির সঙ্ঘ। এছাড়া রক্ষা মা তলা, বোলতলার ১৫ ফুট উচ্চতার বেশি ষাঁড়ের উপর শিব দেখতে ভিড় হয়েছে ভালই।
শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে বেলডাঙা পুরসভা। যেমন অন্ধকার রাস্তাগুলিকে আলোকিত করতে জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সঙ্কীর্ণ রাস্তার দু’দিকের নিকাশি নালাকে কাঠের তক্তা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, যাতে পড়ে গিয়ে কেউ জখম না হন। প্রধান মোড়গুলিতে পুরসভা অস্থায়ী তাবু বানিয়ে সেখান থেকে মাইকে বিসর্জন অনুষ্ঠানের ধারাবিবরণী প্রচার করেছে। ওই তাবুতে প্রাথমিক চিকিৎসারও বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বেলডাঙার পুরপ্রধান কংগ্রেসের অনুপমা সরকার বলেন, ‘‘পুরসভা থেকে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলাররাও থাকছেন। ভিড়ে কেউ হারিয়ে গেলে বা কোনও মোড়ে যানজট হলে মাইকে তা ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে।” বেলডাঙা থানার ওসি অরূপ রায় বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবে উৎসব শেষ করতে অনেক আগেই পুজো কমিটি ও প্রশাসন বৈঠকে বসে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। আশা করছি সুষ্ঠুভাবেই শেষ হবে ঐতিহ্যের কার্তিক লড়াই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy