ক্রমান্বয়ে প্রশ্ন।--আইপিসি এবং সিআরপিসির মধ্যে পার্থক্য। কারও জিজ্ঞাসা, পঞ্চায়েত আইনের খুঁটিনাটি নিয়ে। কারও প্রশ্ন, পুলিশ যদি কাউকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করতে চায় তাহলে তাঁর কী করণীয়।
উত্তর দিয়ে চলেছেন একদল অভিজ্ঞ আইনজীবী। আইনের বই ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাঁর আইনি দিক ব্যাখ্যাও করছেন। বাধ্য ছাত্রের মতো সে সব ব্যাখ্যা নোট নিচ্ছেন জিজ্ঞাসুরা। এখানেই শেষ নয়। ঘণ্টা তিনেক ব্যাখ্যা সহকারে উত্তর দেওয়ার পর ‘ছাত্ররা’ কেমন বুঝেছেন তা জানতে পাল্টা প্রশ্ন করছেন আইনজীবীরা।
দেখতে দেখতে সাড়ে পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রশ্নের শেষ নেই। রবিবার নদিয়ার শিমুরালিতে এ ভাবেই সারা দিন ধরে বিজেপি কর্মীদের প্রায় হাতে ধরে আইনি সচেতনতার পাঠ দেওয়া হল। আয়োজক বিজেপি-র লিগ্যাল অ্যন্ড লেজিসলেটিভ সেল।
শুধু নদিয়া নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় চলছে বিজেপির এই বিশেষ আইনি শিক্ষণ শিবির। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন, ৬ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এই সচেতনতা শিবির। চলবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মৃত্যু দিন পর্যন্ত।
বিজেপির আইনজীবী সেলের রাজ্য আহ্বায়ক সমীর পাল বলেন, “রাজ্যে এখন চরম আইনি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আইনি সাহায্য পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। খুব সহজ করে বললে এ রাজ্যে সরকার স্বৈরাচারী মানসিকতা সম্পন্ন হয়ে পড়েছে। স্বৈর শাসকের মতো পুলিশ প্রশাসনকে খোলাখুলি ব্যবহার করে মানুষকে প্রাপ্য আইনি সাহায্য পেতে বাধা দিচ্ছে।” সে ব্যাপারে কর্মীদের সতর্ক করতেই তাই ওই শিবির। যাতে দলীয় কর্মীরা অযথা পুলিশি হেনস্থার সঠিক ভাবে মোকাবিলা করতে পারেন।
লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে বিজেপি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিজেপি ময়দানে নামছে। লোকসভা ভোটের পর থেকে বিজেপির বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচি থেকে স্পষ্ট প্রতিটি পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা এলাকা সর্বত্র একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী সংগঠন গড়া আপাতত বিজেপির প্রধান লক্ষ্য। আর সেই উদ্দেশে আইনের প্রাথমিক পাঠটুকু প্রতিটি সদস্যকে দিতে চায় দল। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, বর্ধমান, নদিয়ার মতো সাতটি জেলায় আপাতত এই শিবির হয়েছে। বাকি জেলাগুলিতে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে শিবিরের কাজ।
যাঁদের জন্য এই শিবির তাঁরা কী বলছেন? রবিবার শিমুরালির ওই শিবিরে এসেছিলেন চাকদহের অক্ষয় দাস, তাতলার মহানালার রাজু গুপ্ত কিংবা রাউতাড়ি চৌমাথার বাসিন্দা প্রণব দত্তেরা। শিবিরে আইনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা শেষে কেউ মুগ্ধ, কেউ আত্মবিশ্বাসী। আবার কেউ বলছেন, “ভয়টা অনেক কমে গেল।” কিসের ভয়? উত্তরে চাকদহ ব্লকের বিজেপির যুব সভাপতি টুটুল দাস বলেন, “এ রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের সর্বত্র অকারণে ফাঁসিয়ে দেওয়া তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওরা আমাদের ভয় পাচ্ছে। তাই পুলিশ দিয়ে হেনস্থা করা বা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।” দলীয় কর্মীদের কথায় বাবুল সুপ্রিয়র মতো হেভিওয়েটকেও যদি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারে তাহলে অন্যদের গ্যারান্টি কোথায়? ফলে এই ধরনের শিবির হওয়া খুব জরুরি।
এই বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী তথা বিজেপি নেতা সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় সাফ বলেন, “এই রাজ্যে আইনের অনুশাসন বলে কিছু নেই। আইন না মানাটাই আইন রাজ্যের শাসকদলের কাছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় আইনি সহায়তা শিবির মানুষের কাছে সবার আগে পৌঁছে দেওয়া দরকার। আর বিজেপি এখন তৃণমূলের প্রধান মাথা ব্যথা।”
সহ প্রতিবেদন: সৌমিত্র সিকদার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy