Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জেলে বসেও হাত দেখছে নিত্যানন্দ

ঢেকি নাকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। আর জ্যোতিষ জেলে গেলে কী করে তা এতদিনে মালুম হচ্ছে পোড় খাওয়া জেলরক্ষীদের। বহরমপুরের একটি আবাসনে তিন জনকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নিত্যানন্দ দাস ধরা পড়ার পরে ভাগ্যবিচার করেছিলেন খোদ পুলিশ সুপারের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৬:২৩
Share: Save:

ঢেকি নাকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। আর জ্যোতিষ জেলে গেলে কী করে তা এতদিনে মালুম হচ্ছে পোড় খাওয়া জেলরক্ষীদের। বহরমপুরের একটি আবাসনে তিন জনকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নিত্যানন্দ দাস ধরা পড়ার পরে ভাগ্যবিচার করেছিলেন খোদ পুলিশ সুপারের। এখন সে হাত দেখছে জেলবন্দিদের। সহ-আবাসিকদের ভূত-ভবিষ্যৎ থেকে শুরু করে রাহু-কেতুর ‘আপ-ডাউন’ মায় প্রতিকারের পথ পর্যন্ত বাতলে দিচ্ছে নিত্যানন্দ। কোনও দক্ষিণা ছাড়া ভাগ্য বিচারের এমন সুযোগ মেলায় বন্দিদের একাংশ আহ্লাদে আটখানা।

গত ৬ জানুয়ারি বহরমপুরের একটি ফ্ল্যাটের ঘরের তালা ভেঙে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর ভাইঝি মধ্য চল্লিশের বিজয়া বসু ও তাঁর কন্যা আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ নিত্যানন্দের খোঁজ পায় এবং শিলিগুড়ির একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। পুলিশের দাবি, তাদের কাছে নিত্যানন্দ কবুল করেছে, ‘কালসর্পদোষ’ খণ্ডন করার নামে চুরির উদ্দেশ্যে গত ৪ জানুয়ারি ওই ফ্ল্যাটে ঢুকে ছিল সে। বিজয়াদেবী জানতে পেরে যাওয়ায় তিন জনকেই শ্বাসরোধ করে খুন করে। তবে নিত্যানন্দ নিজে যখনই সুযোগ পেয়েছে, সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে।

আর একটা জিনিস সে ছাড়েনি, সেটা হল জ্যোতিষ চর্চা। পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় খোদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরকে সে পরামর্শ দিয়েছিল‘আপনার শত্রু সংখ্যা অনেক। মঙ্গল ও রবি তুঙ্গে থাকলেও শত্রু থেকে সাবধানে থাকবেন। অবিলম্বে আপনি ক্যাটস আই ধারণ করুন।’ আর এখন বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ২৫ নম্বর ‘সেল ব্লক’-এর ১ নম্বর সেলে বসে হাত দেখছে বন্দিদের। ভাগ্য যাচাই কিংবা কোষ্ঠী বিচারের জন্য ওই সেলের সামনে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন অন্য বন্দিরা।

মুখে-মুখে সহ-আবাসিকদের নিদান দিচ্ছে নিত্যানন্দ। খুনের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত এক কয়েদির কোষ্ঠী বিচার করে ‘কেতুর দশায় ষড়যন্ত্র ও মিথ্যে মামলায় জেল হেফাজত হয়েছে’ বলে জানিয়েছে সে। অবিলম্বে ৪ থেকে ৫ রতির ‘ক্যাটস্ আই’ ধারণ না করলে ভবিষ্যতে ওই কয়েদিকে ‘গৃহত্যাগী হতে হবে’ বলে সাবধানও করেছে। বিচারাধীন অন্য এক বন্দিকে নিত্যানন্দ জানিয়েছে, ‘শনির দশায় মানসিক অস্থিরতা হচ্ছে’ তার। এ ক্ষেত্রে ‘নীলা’ ধারণের পরামর্শ দিয়েছে নিত্যানন্দ। ‘বুধের দশার কারণে বুদ্ধির বিকাশে বাধা ও বুদ্ধি বিভ্রম হওয়ায়’ ধর্ষণের মামলায় বিচারাধীন এক বন্দিকে জেল হেফাজতে কাটাতে হচ্ছে বলে নিত্যানন্দ জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে তার পরামর্শ৩ থেকে ৫ রতির পান্না ধারণ করতে হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিচারাধীন বন্দি ও সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের মাঙ্গলিক দশা থেকে গুরুচণ্ডাল দোষ খণ্ডনের বিধান জানাচ্ছে নিত্যানন্দ।তন্ত্রসাধনার জন্য বাড়ি থেকে বইপত্র এলে, তা তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবদারও করে রেখেছে।

নিত্যানন্দের এসব কথাবার্তায় কেউ কেউ ‘প্রভাবিত’ হয়ে পড়লেও বেশ কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দির গলায় শোনা গিয়েছে অন্য সুর। তাঁদের প্রশ্ন, “ও ব্যাটা যদি সবই জানে, তাহলে নিজের দোষটা খণ্ডন করতে পারল না কেন?”

জেল সুপার অরিন্দম সরকার বলেন, “সহানুভূতি আদায়ের জন্য জেলের মধ্যে বসেও নিত্যানন্দ নাটক করছে। তার প্রতি বাড়তি নজর রয়েছে আমাদের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nityananda baharampur baharampur muder case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE